রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভায় কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজের টেন্ডারের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার ২৫ ডিসেম্বর (বড়দিন) সরকারী ছুটির দিনে দরপত্র বিক্রির শেষ তারিখ হওয়ায় লাইসেন্সধারী বৈধ ঠিকাদররা দরপত্র কিনতে এবং জমা দিতে না পেরে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন। সেইসাথে তারা এই অনিয়ম তান্ত্রিক টেন্ডার ড্রপ বাতিল করে পুনঃ টেন্ডারের দাবীতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ পৌরসভা OTM প্রকল্পের ঠিকাদারী কাজের জন্য গত ১৩ডিসেম্বর-২০২৪ দুটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে দেশের সকল বৈধ ঠিকাদারের কাছ থেকে দরপত্র আহবান করে। দরপত্র কেনার শেষ তারিখ ছিল গত বুধবার (২৫ডিসেম্বর-২৪) সরকারী ছুটির দিন। তাই অফিস আদালত বন্ধ থাকায় অধিকাংশ ঠিকাদার দরপত্র কিনতে এবং জমা দিতে পারেনি। এই সুযোগে ওইদিন সন্ধ্যায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে তাদের মনোপুত কয়েকজন ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে তাদেরকে ঠিকাদারী কাজের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি তারা গোপন সমঝোতার মাধ্যমে টেন্ডার কাজ নং-1 OTM – LGCRRP/ Badargon/ 2024-25/W-06 যার আইডি নং-1047991, ও টেন্ডার কাজ নং-2 OTM – LGCRRP/ Badargon/ 2024-25/W-05, যার আইডি নং-1047993, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এই কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ দুটি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
এবিষয়ে অভিযোগকারী মেসার্স তারিন কন্সট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সরওয়ার জাহান মানিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বদরগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি টেন্ডারে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনে দায়িত্বে থাকা লিটন মিয়া স্থানীয় দাপট দেখিয়ে তার মনোপুত ঠিকাদারকে প্রতিটি কাজ দিয়ে থাকে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কখন এবং কবে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এই বিষয়ে আমাদেরকে কেউ কখনো অবগত করে না। তারা নিকোজিশনের মাধ্যমে প্রতিটি টেন্ডার তাদের মনোপুত ঠিকাদারকে যে কোন ভাবেই কাজ পাইয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন, আমি একজন লাইসেন্সধারী ঠিকাদার হওয়া সত্তে¡ও গত ১০বছরেও একটি কাজ পাইনি। তাই গোপন টেন্ডার নয়, আমরা চাই ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে প্রত্যেক ঠিকাদার যেন তার প্রাপ্য কাজটি পায়, কিন্তু লিটন মিয়া প্রতিবার সাবেক পৌর মেয়র ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক টুটুল চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে তার মনোপুত ঠিকাদারকে কৌশলে কাজ পাইয়ে দেয়। যা কিনা কোনভাবেই কাম্য নয়। এবিষয়ে বদরগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, EGP সিস্টেম পোষ্টাল সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা কাজ করছি। পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিটি ঠিকাদারের ফোনে মেসেজ চলে গেছে। ইতিমধ্যে সিংহভাগ ঠিকাদার অনলাইনের মাধ্যমে দরপত্র জমা দিয়েছে। এখানে কেউ অভিযোগ করলেও আমাদের কিছু করার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর সকারী ছুটির আগেই দরপত্র জমা পড়েছে। কারো অভিযোগ থাকলে তারা নির্ধারিত তারিখের আগেই আমাদেরকে অভিযোগ করতে পারত। তারপরেও যদি EGP কর্তৃপক্ষ চায় তাহলে রিটেন্ডার করতে পারে। বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বদরগঞ্জ পৌর প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, পৌরসভার টেন্ডারের বিষয়টি ভালভাবে জানার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে রিটেন্ডার দেওয়া যায় কিনা। এসময় তিনি আরো বলেন, গত বুধবার ২৫ডিসেম্বর (বড়দিন) সরকারী ছুটির দিনে EGP সিস্টেম হলিডে অনলাইন কারো দরপত্র নিতে পারেনা। কেউ তাদের ওয়েবের ঠিকানায় দরপত্র পাঠানোর চেষ্টা করলেও কম্পিউটারে অবশ্যই হোয়াট চিহৃ ভেসে উঠবে। তারপরও এধরনের ঘটনা কিভাবে ঘটেছে EGP সিস্টেম হলিডে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ।