ঢাকায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২৮ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের দ্বাদশ অধিবেশন ডেকেছে খেলাফত মজলিস। সেখান থেকে দেশ ও জাতির উদ্দেশে দলটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চায়।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
তিনি আরও বলেন, খেলাফত মজলিসের এ তৃণমূল কাউন্সিল সফলে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষের দিকে। ইতিমধ্যেই জাতীয় নেতারা, বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র প্রতিনিধিদের অধিবেশনের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। সবাই সানন্দচিত্তে খেলাফত মজলিসের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন।
আহমদ আবদুল কাদের বলেন, খেলাফত মজলিস একটি নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে সামর্থ্য অনুযায়ী ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে দেশ, জাতি ও ইসলামের পক্ষে ময়দানে ভূমিকা পালন করেছে। হত্যা, নির্যাতন, মামলা, হামলা, জেল, জুলুম উপেক্ষা করে ময়দানে ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলাফত মজলিস ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীগণ রাজপথে ভূমিকা রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, পতিত খুনি হাসিনা সরকারের পতনের পরে আজকের মুক্ত পরিবেশে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিস দেশ ও জনগণের স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে বদ্ধ পরিকর। রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এই জনপ্রত্যাশা পূরণে খেলাফত মজলিস ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে।
এ ছাড়া তিনি বলেন, খেলাফত মজলিস মনে করে মানুষের প্রকৃত কল্যাণ ও মুক্তির পথ হচ্ছে ‘ইসলাম’। খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের আলোকে যদি আমরা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সাজাতে পারি তাহলেই দেশ ও জনগণের কল্যাণ ও মুক্তি অর্জন সম্ভব। বিগত ১৬ বছরের দুঃশাসনের বিচার নিশ্চিত, ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকানো এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করে কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আজকে জাতীয় ঐক্য জরুরি।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বলেছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেবে আমরা সে বিষয়ে আশাবাদী। পাশাপাশি তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে। এ জন্য সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
আহমদ আবদুল কাদের বলেন, আমরা আশা করি, জাতীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর), ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের আমির মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, জাতীয় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি আলী হাসান উসামা, এবি পার্টির উপদেষ্টা জনাব সোলায়মান চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ প্রতিনিধিত্বশীল সকল দলের নেতারা উপস্থিত হবেন।
তা ছাড়া তিনি বলেন, দেশবিদেশের ডেলিগেটদের পদচারণায় মুখরিত হবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অধিবেশন উদ্বোধন করবেন, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও সাবেক আমির বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। সভাপতিত্ব করবেন আমিরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ।
তিনি আরও বলেন, অধিবেশন বাস্তবায়নে আমরা গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, প্রচার সম্পাদক আব্দুল হাফিজ খসরু প্রমুখ।