ঢাকা ১০:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিষিদ্ধ এলাকায় বাজছে গাড়ির হর্ন, নেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ

ঢাকার তিনটি এলাকায় গাড়ির হর্ন নিষিদ্ধ করা হলেও তা একদিনের জন্যও কার্যকর করা যায়নি। এই নীরব এলাকাগুলোতে উচ্চশব্দে হর্ন বাজিয়েই যাচ্ছেন চালকরা। নির্দেশনা কিংবা আইন কানুনের তোয়াক্কা করছের না কেউ। সাইনবোর্ড কিংবা ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ রাজধানীর বিভিন্ন নীরব এলাকার সড়ক। আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরও দৃশ্যমান দেখভাল নেই এই বিষয়ে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা নীরব এলাকায় হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। ঢাকার সচিবালয়ের আশপাশের সড়ক, আগারগাঁও সংসদ ভবন এলাকা, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা বিভিন্ন সময়ে নীরব এলাকা (সাইলেন জোন) ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরীর স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় উচ্চমাত্রায় হর্ন না বাজানোর নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এসব নির্দেশনা এক মিনিটের জন্যও কার্যকর হয়নি। গত কয়েক দিনে ঢাকার ঘোষিত পাঁচটি নীরব এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে নিয়ম ভাঙার নানান চিত্র। গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীরব এলাকার তাদের হর্ন বাজানোর নানান অজুহাত।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার সামনে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল রাইদা, গ্রেট তুরাগ ও ভিক্টর পরিবহণের তিনটি বাস। সামনে পেছনে দাঁড়ানো ছিল আরও কয়েকটি পরিবহণ। এই সময়ে অবিরাম বেজে চলছিল হর্ন। যদিও এলাকাটি হর্নমুক্ত নীরব এলাকা। শুধু বিমানবন্দর এলাকাই নয়, এর উত্তরে দেড় কিলোমিটার এবং দক্ষিণে দেড় কিলোমিটার (হোটেল লা মেরিডিয়ান থেকে স্কলাস্টিকা স্কুল পর্যন্ত) এলাকাকে গত ১ অক্টোবর থেকে নীরব এলাকা (সাইলেন জোন) ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্র্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগটি নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সড়ক বিভাগ ও পরিবহণ মালিক সমিতি। তবে উত্তরার স্কলাস্টিকা পয়েন্ট এলাকার ফুটপাতের ওপর একটি স্টিলের খুঁটিতে সাইবোর্ডে লেখা ‘নীরব এলাকা শুরু : ঢাকা সড়ক বিভাগ’। দক্ষিণে লা মেরিডিয়ান পয়েন্টের সামনে ‘নীরব এলাকা’ সম্বলিত সাইনবোর্ড রয়েছে। এর বাইরে এই এলাকা হর্নমুক্ত করতে তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া এই এলাকায় হর্ন বাজানো নিয়ে চালকদেরও ভিন্নমত রয়েছে। ভিক্টর পরিবহণের চালক মোহাম্মদ আলী যুগান্তরকে বলেন, এই এলাকায় যে হর্ন বাজানো যাবে না, তা আমাদের কেউ জানায়নি। তাছাড়া হর্ন বাজানো ছাড়া এই এলাকায় গাড়ি চালানো একবারেই অসম্ভব। পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হন। হর্ন না বাজালে দুর্ঘটনা বাড়বে।

বিমানবন্দর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ১ ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, এই এলাকায় বাসের চেয়ে প্রাইভেটকার চালকরা হর্ন বাজান বেশি। প্রাইভেটকার চালক আরিফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা তো জানিই না যে, হর্ন বাজানো অপরাধ। এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যে কারণে সামনে গাড়ি থাকলেই হর্নে টিপ দেই।

বাংলাদেশ সচিবালয়ের চার পাশের সড়ককে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর হর্নমুক্ত নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়। গত বুধবার জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড় এবং সচিবালয় লিংক রোড ঘুরে যানবাহনগুলোকে সরবে হর্ন বাজাতে দেখা গেছে।

পল্টন মোড়ে রিকশার পেছন থেকে হর্ন বাজাতে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালক আলিমুজ্জামানকে। তিনি  বলেন, এই এলাকায় যে হর্ন বাজানো নিষেধ তা আমাদের কেউ জানায়নি। তাছাড়া রাস্তার যে অবস্থা হর্ন না বাজিয়ে কোনোভাবেই সড়কে চলা সম্ভব নয়।

সংসদ ভবনের সামনে সড়কে হর্ন বাজিয়ে চলতে দেখা গেছে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশা। সংসদ ভবন মোড়ে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করি, সড়কে শৃঙ্খলাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। আর হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তো সুযোগই নেই।

কারণ ছাড়া হর্ন বাজানোর একই চিত্র দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কে, আগারগাঁও লিংকরোডসহ বিভিন্ন সড়কে।

ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রাইভেটকার চালক ও মোটরসাইকেল চালকরা বেশি হর্ন বাজান সড়কে। তিনি বলেন, তারা কিছুদূর পরপরই হর্ন বাজাতে থাকেন। আর অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ফাঁকা সড়কেও সাইরেন বাজিয়ে ছোটেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমরা শুধু জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছি। এছাড়া যারা হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নিতে পারে, সেজন্য আইনের সংশোধন চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) সৈয়দা মাসুমা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় নীরব এলাকা ঘোষণা করে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সচিবালয়, আগারগাঁও, সংসদ ভবন এলাকা এবং বিমানবন্দর এলাকা সাইলেন জোন হিসাবে ঘোষিত আছে। এসব এলাকায় আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি নিয়মিত। এছাড়া অতিরিক্ত হর্ন বাজানো, শব্দ দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। চেষ্টা করা হচ্ছে, নীরব এলাকাগুলোতে হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণের।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মিশ্র ও ‘নীরব এলাকায়’ শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে বলা আছে, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময় ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা আছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। ‘নীরব’ বলে ঘোষিত এলাকায় শব্দের মাত্রা মেপে সবসময় বেশি পাওয়া গেছে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এ আইনে শাস্তি হিসাবে বলা আছে, আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নিষিদ্ধ এলাকায় বাজছে গাড়ির হর্ন, নেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ

আপডেট সময় ১১:৫০:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকার তিনটি এলাকায় গাড়ির হর্ন নিষিদ্ধ করা হলেও তা একদিনের জন্যও কার্যকর করা যায়নি। এই নীরব এলাকাগুলোতে উচ্চশব্দে হর্ন বাজিয়েই যাচ্ছেন চালকরা। নির্দেশনা কিংবা আইন কানুনের তোয়াক্কা করছের না কেউ। সাইনবোর্ড কিংবা ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ রাজধানীর বিভিন্ন নীরব এলাকার সড়ক। আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরও দৃশ্যমান দেখভাল নেই এই বিষয়ে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা নীরব এলাকায় হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। ঢাকার সচিবালয়ের আশপাশের সড়ক, আগারগাঁও সংসদ ভবন এলাকা, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা বিভিন্ন সময়ে নীরব এলাকা (সাইলেন জোন) ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরীর স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় উচ্চমাত্রায় হর্ন না বাজানোর নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এসব নির্দেশনা এক মিনিটের জন্যও কার্যকর হয়নি। গত কয়েক দিনে ঢাকার ঘোষিত পাঁচটি নীরব এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে নিয়ম ভাঙার নানান চিত্র। গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীরব এলাকার তাদের হর্ন বাজানোর নানান অজুহাত।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার সামনে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল রাইদা, গ্রেট তুরাগ ও ভিক্টর পরিবহণের তিনটি বাস। সামনে পেছনে দাঁড়ানো ছিল আরও কয়েকটি পরিবহণ। এই সময়ে অবিরাম বেজে চলছিল হর্ন। যদিও এলাকাটি হর্নমুক্ত নীরব এলাকা। শুধু বিমানবন্দর এলাকাই নয়, এর উত্তরে দেড় কিলোমিটার এবং দক্ষিণে দেড় কিলোমিটার (হোটেল লা মেরিডিয়ান থেকে স্কলাস্টিকা স্কুল পর্যন্ত) এলাকাকে গত ১ অক্টোবর থেকে নীরব এলাকা (সাইলেন জোন) ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্র্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগটি নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সড়ক বিভাগ ও পরিবহণ মালিক সমিতি। তবে উত্তরার স্কলাস্টিকা পয়েন্ট এলাকার ফুটপাতের ওপর একটি স্টিলের খুঁটিতে সাইবোর্ডে লেখা ‘নীরব এলাকা শুরু : ঢাকা সড়ক বিভাগ’। দক্ষিণে লা মেরিডিয়ান পয়েন্টের সামনে ‘নীরব এলাকা’ সম্বলিত সাইনবোর্ড রয়েছে। এর বাইরে এই এলাকা হর্নমুক্ত করতে তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া এই এলাকায় হর্ন বাজানো নিয়ে চালকদেরও ভিন্নমত রয়েছে। ভিক্টর পরিবহণের চালক মোহাম্মদ আলী যুগান্তরকে বলেন, এই এলাকায় যে হর্ন বাজানো যাবে না, তা আমাদের কেউ জানায়নি। তাছাড়া হর্ন বাজানো ছাড়া এই এলাকায় গাড়ি চালানো একবারেই অসম্ভব। পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হন। হর্ন না বাজালে দুর্ঘটনা বাড়বে।

বিমানবন্দর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ১ ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, এই এলাকায় বাসের চেয়ে প্রাইভেটকার চালকরা হর্ন বাজান বেশি। প্রাইভেটকার চালক আরিফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা তো জানিই না যে, হর্ন বাজানো অপরাধ। এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যে কারণে সামনে গাড়ি থাকলেই হর্নে টিপ দেই।

বাংলাদেশ সচিবালয়ের চার পাশের সড়ককে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর হর্নমুক্ত নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়। গত বুধবার জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড় এবং সচিবালয় লিংক রোড ঘুরে যানবাহনগুলোকে সরবে হর্ন বাজাতে দেখা গেছে।

পল্টন মোড়ে রিকশার পেছন থেকে হর্ন বাজাতে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালক আলিমুজ্জামানকে। তিনি  বলেন, এই এলাকায় যে হর্ন বাজানো নিষেধ তা আমাদের কেউ জানায়নি। তাছাড়া রাস্তার যে অবস্থা হর্ন না বাজিয়ে কোনোভাবেই সড়কে চলা সম্ভব নয়।

সংসদ ভবনের সামনে সড়কে হর্ন বাজিয়ে চলতে দেখা গেছে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশা। সংসদ ভবন মোড়ে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করি, সড়কে শৃঙ্খলাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। আর হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তো সুযোগই নেই।

কারণ ছাড়া হর্ন বাজানোর একই চিত্র দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কে, আগারগাঁও লিংকরোডসহ বিভিন্ন সড়কে।

ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রাইভেটকার চালক ও মোটরসাইকেল চালকরা বেশি হর্ন বাজান সড়কে। তিনি বলেন, তারা কিছুদূর পরপরই হর্ন বাজাতে থাকেন। আর অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ফাঁকা সড়কেও সাইরেন বাজিয়ে ছোটেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আমরা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমরা শুধু জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছি। এছাড়া যারা হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নিতে পারে, সেজন্য আইনের সংশোধন চেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) সৈয়দা মাসুমা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় নীরব এলাকা ঘোষণা করে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সচিবালয়, আগারগাঁও, সংসদ ভবন এলাকা এবং বিমানবন্দর এলাকা সাইলেন জোন হিসাবে ঘোষিত আছে। এসব এলাকায় আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি নিয়মিত। এছাড়া অতিরিক্ত হর্ন বাজানো, শব্দ দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। চেষ্টা করা হচ্ছে, নীরব এলাকাগুলোতে হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণের।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মিশ্র ও ‘নীরব এলাকায়’ শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে বলা আছে, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময় ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা আছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। ‘নীরব’ বলে ঘোষিত এলাকায় শব্দের মাত্রা মেপে সবসময় বেশি পাওয়া গেছে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এ আইনে শাস্তি হিসাবে বলা আছে, আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।