বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কিছু কর্মকর্তা বিগত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে প্রশাসনকে ব্যাপকভাবে দলীয় রাজনীতিকরণসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন। তারা সার্বিক আমলাতন্ত্রের পেশাদারিত্ব ভুলে গিয়ে তৎকালীন রাজনীতিবিদদের সাথে একাত্ম হয়ে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। দেশ ধ্বংসকারী এসব অপরাধীর অনুকূলে অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। অত:পর আওয়ামী রাজনীতিবিদসহ বেশকিছু স্বার্থান্বেষি ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্তিসঙ্গত আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলা মোকদ্দমা রুজ্জু এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক তাদের গ্রেফতারসহ বিচারের আওতায় আনার নিরন্তর প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। এসব কর্মকর্তা বিগত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে প্রশাসনকে ব্যাপকভাবে দলীয় রাজনীতিকরণসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন।
তারা সার্বিক আমলাতন্ত্রের পেশাদারিত্ব ভুলে গিয়ে তৎকালীন রাজনীতিবিদদের সাথে একাত্ম হয়ে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। আমলাতন্ত্রের আবরণে ক্ষমতা ও আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে অপরাজনীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে দেশের সামগ্রিক প্রশাসন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি থেকে এসব আমলারা শুধু অর্থ সম্পদের জৌলুস বানাননি, প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে একটা স্বার্থবাদী, বসংবদ ও দলদাস আমলা গোষ্ঠী তৈরির করার ফলে সমগ্র প্রশাসনে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব আমলাতন্ত্রের ওপরে কালিমালিপ্ত করেছে। চিহ্নিত এসব অপকর্মে জড়িত সকল শ্রেণী-পেশার আমলাদের বিরুদ্ধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক তাদের কৃত অপরাধের বিচারের জন্য এ ধরনের ন্যায় সঙ্গত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন সাধুবাদ জানায় এবং সমীচীন মনে করে।
এতে আরও বলা হয়, ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী, দুর্নীতিপরায়ণসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত শুধু প্রশাসন ক্যাডারের আমলা নয় বরং সকল পর্যায়ের সুনির্দিষ্ট অপরাধে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার প্রত্যেকটি কার্যক্রমকে আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থা, আইন ও বিচার বিভাগসহ রাজনৈতিক সংগঠন ও সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষকে সমর্থন করা উচিত বলে আমরা মনে করি। কেননা ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ করাই হচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে এ সরকার আইনের চোখে সবাই সমান এবং সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও আমরা মনে করি। অপরাধী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইন ও বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন রকম কুন্ঠাবোধ করবে না বলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন প্রত্যাশা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এসোসিয়েশন মনে করে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর স্বৈরাচারের দোসররা দেশের দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপাকে ফেলার এবং দেশের প্রশাসন ও আইন শৃংখলার অবনতি ও অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। জনজীবন বিপন্ন হওয়া এ অপপ্রয়াসকে এসোসিয়েশন কখনোই সমর্থন করেনা এবং সহস্র শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশে বৈষম্যহীন ও বর্তমান বঞ্চনামুক্ত দেশ গড়ে তোলার যে প্রত্যয় ও অঙ্গীকার অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণ করেছে সেই অঙ্গীকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন ইতিবাচক ভূমিকা পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এই আন্তরিক প্রয়াসের সাথে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকলের এবং সর্বোপরি দেশবাসীর সর্বাত্মক সমর্থন থাকবে মর্মে মনে করে।