ঢাকা ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোট দারোগার হাট বাজার এলাকায় উল্টো পথে আসা ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ বোরহানউদ্দিনে পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাফর মৃধা’র বসতবাড়িতে হামলা। বনানীর আবাসিক হোটেলে মিলল ৯৮৪ বোতল বিদেশি মদ গাজীপুর কাস্টমসের পিওন কাওসারের কোটি টাকার সম্পত্তি পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

ইথোফোন-রাইপেনে পাকানো হচ্ছে অপরিপক্ব টমেটো!

দাম ভালো পাওয়ায় রাজশাহীতে হরহামেশাই অপরিপক্ব টমেটো ইথোফোন-রাইপেন দিয়ে পাকানো হচ্ছে। আর এসব টমেটো রাজশাহীর বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাকযোগে পাঠাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইটাহার, ললত্রি, পানিহার, জগপুর, বিড়ইল গ্রামে গিয়ে ইথোফোন দিয়ে টমেটো পাকানোর সত্যতা পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, বর্তমানে টমেটো প্রতি মণ ২ হাজার থেকে ২২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চাহিদাও ভালো আছে। চাষিরা বলছেন, ‘কিছু দিন পর এই দাম আর দাম থাকবে না। তাই ছোট অবস্থায় টমেটো বিক্রি করছেন।

গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। গত বছর গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল। জেলার গোদাগাড়ীতে সব চেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয়। আর রাজশাহী জেলাজুড়ে ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয়। এর মধ্যে তিন জাতের টমেটো বেশি চাষ হয়।

Dhaka post

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব টমেটো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। ফলে টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে আউশ ধান কেটে নেওয়ার পর টমেটো চাষ শুরু হয়। এটা মূলত শীত ও বর্ষাকালীন টমেটো। যার সবগুলো হাইব্রিড। অন্য যেকোনো ফসলের তুলনায় টমেটো চাষ লাভজনক। এক বিঘায় ৬০-৭০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ ১ হাজার টাকা করে হলেও ৬০-৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। যা ধান কিংবা অন্য ফসলে সম্ভব না।

চাষি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমি থেকে টমেটো তুলে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টায় দু’বার ইথোফোন বা রাইপেন ছিটানো হয়। এরপর তা শুকনো কাঁথা ও ধানের নাড়া বা কুটো দিয়ে জাগ দেওয়া হয়। এতে টমেটো দ্রুত লাল হয়ে যায়।

চাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘টমেটো চাষে সুবিধা আছে। ব্যাবসায়ীরা জমির কাছে থেকে টমেটো কিনে নেয়। ফলে হাটে-বাজারে বিক্রির খরচ নেই। অনেক সময় টমেটো চাষের জন্য ব্যবসায়ীরা চাষিদের অগ্রিম টাকাও দিয়ে থাকে। আবার পুরো জমির টমেটো কিনে নেয় ব্যবসায়ীরা। টমেটো উঠার শুরু থেকেই ভালো দাম পাওয়া যায়।

গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ীর কৃষক সাদ্দাম হোসেন দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। গাছে টমেটো আসার আগ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার টাকা বেশি। আরও ৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।

বিড়ইল গ্রামের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘প্রতিদিন ৮-১০ ট্রাক টমেটো ঢাকা, কারওয়ান বাজার, চৌরাস্তা, সিলেট ও চট্টগ্রামে যায়। আমার জানা মতে, শনিবার ৮ ট্রাক টমেটো নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসব এলাকা থেকে।

তিনি আরও বলেন, পাকা টমেটো পেতে এখনো এক মাস সময় লাগবে। তখন দাম আরও কমে যাবে। কাঁচা টমেটো কীভাবে পাকান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যেসব পাকা টমেটো দেখবেন সব ওষুধ দিলে পাকানো। তবে এই টমেটোতে তেমন স্বাদ নেই।’

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, ‘হরমোন দিয়ে টমেটো পাকানো হচ্ছে। এটা খেলে মানবদেহের ক্ষতি হবে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এতে ক্ষতিকারক কিছু থাকে না, তারপরও কম মাত্রায় থাকতে পারে। এই হরমোন (ইথোফোন) কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করা হয়েছে। মূলত বেশি দাম পাওয়ার জন্য কাঁচা টমেটো বিক্রি করছেন চাষিরা।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা

ইথোফোন-রাইপেনে পাকানো হচ্ছে অপরিপক্ব টমেটো!

আপডেট সময় ১২:৩১:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২

দাম ভালো পাওয়ায় রাজশাহীতে হরহামেশাই অপরিপক্ব টমেটো ইথোফোন-রাইপেন দিয়ে পাকানো হচ্ছে। আর এসব টমেটো রাজশাহীর বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাকযোগে পাঠাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইটাহার, ললত্রি, পানিহার, জগপুর, বিড়ইল গ্রামে গিয়ে ইথোফোন দিয়ে টমেটো পাকানোর সত্যতা পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, বর্তমানে টমেটো প্রতি মণ ২ হাজার থেকে ২২শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চাহিদাও ভালো আছে। চাষিরা বলছেন, ‘কিছু দিন পর এই দাম আর দাম থাকবে না। তাই ছোট অবস্থায় টমেটো বিক্রি করছেন।

গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। গত বছর গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল। জেলার গোদাগাড়ীতে সব চেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয়। আর রাজশাহী জেলাজুড়ে ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয়। এর মধ্যে তিন জাতের টমেটো বেশি চাষ হয়।

Dhaka post

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব টমেটো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। ফলে টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে আউশ ধান কেটে নেওয়ার পর টমেটো চাষ শুরু হয়। এটা মূলত শীত ও বর্ষাকালীন টমেটো। যার সবগুলো হাইব্রিড। অন্য যেকোনো ফসলের তুলনায় টমেটো চাষ লাভজনক। এক বিঘায় ৬০-৭০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ ১ হাজার টাকা করে হলেও ৬০-৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। যা ধান কিংবা অন্য ফসলে সম্ভব না।

চাষি, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমি থেকে টমেটো তুলে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টায় দু’বার ইথোফোন বা রাইপেন ছিটানো হয়। এরপর তা শুকনো কাঁথা ও ধানের নাড়া বা কুটো দিয়ে জাগ দেওয়া হয়। এতে টমেটো দ্রুত লাল হয়ে যায়।

চাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘টমেটো চাষে সুবিধা আছে। ব্যাবসায়ীরা জমির কাছে থেকে টমেটো কিনে নেয়। ফলে হাটে-বাজারে বিক্রির খরচ নেই। অনেক সময় টমেটো চাষের জন্য ব্যবসায়ীরা চাষিদের অগ্রিম টাকাও দিয়ে থাকে। আবার পুরো জমির টমেটো কিনে নেয় ব্যবসায়ীরা। টমেটো উঠার শুরু থেকেই ভালো দাম পাওয়া যায়।

গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ীর কৃষক সাদ্দাম হোসেন দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। গাছে টমেটো আসার আগ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার টাকা বেশি। আরও ৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।

বিড়ইল গ্রামের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘প্রতিদিন ৮-১০ ট্রাক টমেটো ঢাকা, কারওয়ান বাজার, চৌরাস্তা, সিলেট ও চট্টগ্রামে যায়। আমার জানা মতে, শনিবার ৮ ট্রাক টমেটো নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসব এলাকা থেকে।

তিনি আরও বলেন, পাকা টমেটো পেতে এখনো এক মাস সময় লাগবে। তখন দাম আরও কমে যাবে। কাঁচা টমেটো কীভাবে পাকান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যেসব পাকা টমেটো দেখবেন সব ওষুধ দিলে পাকানো। তবে এই টমেটোতে তেমন স্বাদ নেই।’

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, ‘হরমোন দিয়ে টমেটো পাকানো হচ্ছে। এটা খেলে মানবদেহের ক্ষতি হবে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এতে ক্ষতিকারক কিছু থাকে না, তারপরও কম মাত্রায় থাকতে পারে। এই হরমোন (ইথোফোন) কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করা হয়েছে। মূলত বেশি দাম পাওয়ার জন্য কাঁচা টমেটো বিক্রি করছেন চাষিরা।’