ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দুদক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের অবৈধ সম্পদের পাহাড়  আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ঘনিষ্ঠ দু’জনকে অতিরিক্ত এমডি পদে নিয়োগের আয়োজন ১১৭০ টাকার নামজারির খরচ, ভূমি কর্মকর্তা নেন ৮-১৫ হাজার! পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামানের দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ। এস আলমের নির্দেশে টাকা সরানো হতো সাদা স্লিপে তাসাউফ রিয়েল এস্টেট লিঃ এর চেয়ারম্যান ভূমি দস্যু শরীফ বিন আকবর খান সাদুল্লাপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ‘জিনের বাদশা’ আবু বকর অবৈধ সম্পদেও বাদশা জাজিরায় বালুর নিচে পুঁতে রাখা অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের অসাংবিধানিক নির্বাচন বাতিলের দাবি মিঠাপুকুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে ৭২০ কোটি টাকা লুট

দীর্ঘ ১৬ বছরে বান্দরবান জেলা পরিষদের প্রায় ৭২০ কোটি টাকার খাদ্যশস্য প্রকল্পের পুরোটাই লুটপাট ও আত্মসাৎ করা হয়েছে। অস্তিত্বহীন ও ভুয়া দেড় শতাধিক প্রকল্পের নামে এসব খাদ্যশস্য কাগজপত্রে বরাদ্দ দেখানো হয়। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে কোনো প্রকল্পের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই লুটপাটের সঙ্গে জড়িত আছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী থোয়াই চ মং, হিসাবরক্ষক উসাজাই মারমা। তবে অফিসের কেউ তাদের ভয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলতে চান না। সাধারণত দাতব্য প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, রাস্তাঘাট সংস্কার ও ছোটখাটো ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের জন্য এই খাদ্যশস্য প্রকল্পগুলো সরকার দিয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত গত ১৬ বছরে বান্দরবান জেলা পরিষদে খাদ্যশস্য প্রকল্পের চাল বরাদ্দ আসে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন এবং গমের বরাদ্দ আসে প্রায় ৮০ হাজার টন। গড়ে চালের দাম যদি প্রতি টনে ৪০ হাজার টাকা করে ধরা হয় তাহলে ১ লাখ ২০ হাজার টনের দাম আসে ৪৮০ কোটি টাকা। গমের দাম যদি টনপ্রতি গড়ে ৩০ হাজার টাকা ধরা হয় তাহলে ৮০ হাজার টনের দাম আসে ২৪০ কোটি টাকা। চাল আর গম মিলে খাদ্যশস্য প্রকল্পে বান্দরবান জেলা পরিষদে ১৬ বছরে বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৭২০ কোটি টাকার। কিন্তু কাগজপত্রে সব ঠিক রেখে ভূতুড়ে প্রকল্প তৈরি করে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, খাদ্যশস্যের এই প্রকল্পগুলো প্রায় পুরোটাই অস্থিত্বহীন। সরেজমিন সাম্প্রতিক কয়েক বছরের প্রকল্পগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের একটি প্রকল্প হচ্ছে দুলালপাড়া থেকে বেলালপাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। কিন্তু আজিজনগরে দুলালপাড়া আর বেলালপাড়া বলতে কোনো পাড়াই খুঁজে পাওয়া যায়নি এই ইউনিয়নে। পরে একই ইউনিয়নে জাহেদুলপাড়া পুকুর সংস্কার এবং ওয়াহেদুলপাড়া পুকুর সংস্কারের কাজ কতটুকু বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আজিজনগরে জাহেদুলপাড়া আর ওয়াহেদুলপাড়া নামেরও কোনো পাড়ার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

পরে সরেজমিন ফাইতংয়ের কামাইরগা ঝিরি থেকে চিউনিপাড়া রাস্তা সংস্কার আর ফাইতং জাদিদংপাড়া রাস্তা সংস্কারের কাজ কতটুকু দেখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই ইউনিয়নে কামাইরগা ঝিরি থেকে চিউনিপাড়া সংস্কার করার মতো কোনো রাস্তাই নেই এবং ফাইতং জাদিদংপাড়ায় বিগত কয়েক বছরে কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। এভাবে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঠান্ডাঝিরি রাস্তা সংস্কার, ডলুঝিরি হতে রাবার বাগান রাস্তা সংস্কার, মরুঝিরি বাঁধ সংস্কার, ডেসটিনি বাগান থেকে লম্বাশিয়া রাস্তা সংস্কার এবং ২নং ওয়ার্ডের গরিব মহিলাদের মাঝে হাঁস-মুরগি ও ছাগল বিতরণসহ অসংখ্য প্রকল্প সরেজমিন তদন্ত করা হয়। ওইখানে সংস্কার কাজের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নের কলাঝিরি ছাউনিপাড়া যাওয়ার রাস্তা সংস্কার, সদর ইউপির ১নং ওয়ার্ডে দুস্থ মহিলাদের মাঝে হাঁস-মুরগি বিতরণ। এখানে ছাউনিপাড়া নামে কোনো পাড়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দুস্থ মহিলাদের হাঁস-মুরগি বিতরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এভাবে বান্দরবান সদর উপজেলার জামছড়ি ইউনিয়নের কামদংপাড়া সামাজিক পুকুর সংস্কার, রোয়াংছড়ি রাস্তার মাথা থেকে সামুকঝিড়ি রাস্তা সংস্কার, কুহালং ইউনিয়নের ক্যমলংপাড়া শ্মশানে যাওয়ার রাস্তা সংস্কারসহ দেড়শর বেশি প্রকল্প সরেজমিন তদন্ত করা হয়। কিন্তু কোনো কাজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাগজপত্রে থাকলেও বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই প্রকল্পগুলোর। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় যাদের প্রকল্প চেয়ারম্যান দেখানো হয়েছে তাদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ থেকে বোঝা যায়, খাদ্যশস্য প্রকল্পের পুরোটাই ভুয়া এবং ভুয়া স্থান ও ব্যক্তি দেখিয়ে লুটপাট ও আত্মসাৎ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, নামে-বেনামে প্রকল্প সাজিয়ে মূলত লুটপাট করেছেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রকল্পগুলোর সরেজমিন কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, কোনো কর্মকর্তা যাতে তদন্ত করতে যেতে না পারেন সেজন্য বেশ কিছু প্রকল্প দুর্গম এলাকাগুলোতে দেখানো হয়েছে। যেখানে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। কোনো যানবাহন চলে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক উসাজাই মারমা বলেন, হিসাবরক্ষক হিসেবে যতটুকু দায়িত্ব পালন করার ততটুকু করেছি। চেয়ারম্যান স্যারের অনুমতি ছাড়া আপাতত কিছু বলতে পারব না। আপনারা উনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী থোয়াই চ মং বলেন, প্রকল্পে আমি ছাড়াও আরও সহকর্মী দায়িত্বে ছিল। নিউজ করলে করেন। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। এই বলে ফোন কেটে দেন থোয়াই চ মং। নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, প্রকল্পগুলো আমি দেখি না। হিসাবরক্ষক উসাজাই আর সাব-ইঞ্জিনিয়াররা দেখেন।

বান্দরবান জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি যোগদান করেছি মাত্র ৫ মাস হলো। তাই এই বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে পারছি না। প্রকৌশল সাইটটা নির্বাহী প্রকৌশলী দেখলেও অফিসের সব বিল উত্তোলন হয় আমার আর চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার বক্তব্যের জন্য সরাসরি দুবার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনেও অসংখ্যবার কল করা হয়। কিন্তু রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হয় হোয়াটসঅ্যাপ এবং এসএমএসে। কিন্তু তারপরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দুদক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের অবৈধ সম্পদের পাহাড় 

অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে ৭২০ কোটি টাকা লুট

আপডেট সময় ১২:০৮:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪

দীর্ঘ ১৬ বছরে বান্দরবান জেলা পরিষদের প্রায় ৭২০ কোটি টাকার খাদ্যশস্য প্রকল্পের পুরোটাই লুটপাট ও আত্মসাৎ করা হয়েছে। অস্তিত্বহীন ও ভুয়া দেড় শতাধিক প্রকল্পের নামে এসব খাদ্যশস্য কাগজপত্রে বরাদ্দ দেখানো হয়। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে কোনো প্রকল্পের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই লুটপাটের সঙ্গে জড়িত আছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী থোয়াই চ মং, হিসাবরক্ষক উসাজাই মারমা। তবে অফিসের কেউ তাদের ভয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলতে চান না। সাধারণত দাতব্য প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, গির্জা, রাস্তাঘাট সংস্কার ও ছোটখাটো ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের জন্য এই খাদ্যশস্য প্রকল্পগুলো সরকার দিয়ে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত গত ১৬ বছরে বান্দরবান জেলা পরিষদে খাদ্যশস্য প্রকল্পের চাল বরাদ্দ আসে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন এবং গমের বরাদ্দ আসে প্রায় ৮০ হাজার টন। গড়ে চালের দাম যদি প্রতি টনে ৪০ হাজার টাকা করে ধরা হয় তাহলে ১ লাখ ২০ হাজার টনের দাম আসে ৪৮০ কোটি টাকা। গমের দাম যদি টনপ্রতি গড়ে ৩০ হাজার টাকা ধরা হয় তাহলে ৮০ হাজার টনের দাম আসে ২৪০ কোটি টাকা। চাল আর গম মিলে খাদ্যশস্য প্রকল্পে বান্দরবান জেলা পরিষদে ১৬ বছরে বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৭২০ কোটি টাকার। কিন্তু কাগজপত্রে সব ঠিক রেখে ভূতুড়ে প্রকল্প তৈরি করে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, খাদ্যশস্যের এই প্রকল্পগুলো প্রায় পুরোটাই অস্থিত্বহীন। সরেজমিন সাম্প্রতিক কয়েক বছরের প্রকল্পগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের একটি প্রকল্প হচ্ছে দুলালপাড়া থেকে বেলালপাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। কিন্তু আজিজনগরে দুলালপাড়া আর বেলালপাড়া বলতে কোনো পাড়াই খুঁজে পাওয়া যায়নি এই ইউনিয়নে। পরে একই ইউনিয়নে জাহেদুলপাড়া পুকুর সংস্কার এবং ওয়াহেদুলপাড়া পুকুর সংস্কারের কাজ কতটুকু বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আজিজনগরে জাহেদুলপাড়া আর ওয়াহেদুলপাড়া নামেরও কোনো পাড়ার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

পরে সরেজমিন ফাইতংয়ের কামাইরগা ঝিরি থেকে চিউনিপাড়া রাস্তা সংস্কার আর ফাইতং জাদিদংপাড়া রাস্তা সংস্কারের কাজ কতটুকু দেখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই ইউনিয়নে কামাইরগা ঝিরি থেকে চিউনিপাড়া সংস্কার করার মতো কোনো রাস্তাই নেই এবং ফাইতং জাদিদংপাড়ায় বিগত কয়েক বছরে কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। এভাবে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঠান্ডাঝিরি রাস্তা সংস্কার, ডলুঝিরি হতে রাবার বাগান রাস্তা সংস্কার, মরুঝিরি বাঁধ সংস্কার, ডেসটিনি বাগান থেকে লম্বাশিয়া রাস্তা সংস্কার এবং ২নং ওয়ার্ডের গরিব মহিলাদের মাঝে হাঁস-মুরগি ও ছাগল বিতরণসহ অসংখ্য প্রকল্প সরেজমিন তদন্ত করা হয়। ওইখানে সংস্কার কাজের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নের কলাঝিরি ছাউনিপাড়া যাওয়ার রাস্তা সংস্কার, সদর ইউপির ১নং ওয়ার্ডে দুস্থ মহিলাদের মাঝে হাঁস-মুরগি বিতরণ। এখানে ছাউনিপাড়া নামে কোনো পাড়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দুস্থ মহিলাদের হাঁস-মুরগি বিতরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এভাবে বান্দরবান সদর উপজেলার জামছড়ি ইউনিয়নের কামদংপাড়া সামাজিক পুকুর সংস্কার, রোয়াংছড়ি রাস্তার মাথা থেকে সামুকঝিড়ি রাস্তা সংস্কার, কুহালং ইউনিয়নের ক্যমলংপাড়া শ্মশানে যাওয়ার রাস্তা সংস্কারসহ দেড়শর বেশি প্রকল্প সরেজমিন তদন্ত করা হয়। কিন্তু কোনো কাজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাগজপত্রে থাকলেও বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই প্রকল্পগুলোর। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় যাদের প্রকল্প চেয়ারম্যান দেখানো হয়েছে তাদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ থেকে বোঝা যায়, খাদ্যশস্য প্রকল্পের পুরোটাই ভুয়া এবং ভুয়া স্থান ও ব্যক্তি দেখিয়ে লুটপাট ও আত্মসাৎ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, নামে-বেনামে প্রকল্প সাজিয়ে মূলত লুটপাট করেছেন বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রকল্পগুলোর সরেজমিন কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, কোনো কর্মকর্তা যাতে তদন্ত করতে যেতে না পারেন সেজন্য বেশ কিছু প্রকল্প দুর্গম এলাকাগুলোতে দেখানো হয়েছে। যেখানে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। কোনো যানবাহন চলে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক উসাজাই মারমা বলেন, হিসাবরক্ষক হিসেবে যতটুকু দায়িত্ব পালন করার ততটুকু করেছি। চেয়ারম্যান স্যারের অনুমতি ছাড়া আপাতত কিছু বলতে পারব না। আপনারা উনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী থোয়াই চ মং বলেন, প্রকল্পে আমি ছাড়াও আরও সহকর্মী দায়িত্বে ছিল। নিউজ করলে করেন। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। এই বলে ফোন কেটে দেন থোয়াই চ মং। নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, প্রকল্পগুলো আমি দেখি না। হিসাবরক্ষক উসাজাই আর সাব-ইঞ্জিনিয়াররা দেখেন।

বান্দরবান জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি যোগদান করেছি মাত্র ৫ মাস হলো। তাই এই বিষয়ে আপাতত কিছু বলতে পারছি না। প্রকৌশল সাইটটা নির্বাহী প্রকৌশলী দেখলেও অফিসের সব বিল উত্তোলন হয় আমার আর চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার বক্তব্যের জন্য সরাসরি দুবার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনেও অসংখ্যবার কল করা হয়। কিন্তু রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হয় হোয়াটসঅ্যাপ এবং এসএমএসে। কিন্তু তারপরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।