ঢাকা ১০:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মৃত্যুর দুই দিন পর জহুর আলীর মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ বোরহানউদ্দিনে‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত পবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হলেন বিখ্যাত আইটি বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন দক্ষিণ মুগদা থানা ৭১ নং ওয়ার্ড যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সংস্কারের বৈধতা আমরা দিতে পারব না: ফখরুল জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যে পদক্ষেপের কথা জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্য গ্রেফতার কোনো দল-গোষ্ঠী-ব্যক্তিকে সহযোগিতা করতে মাঠে নামিনি: সিইসি আনিসুল হক আরেক মামলায় গ্রেফতার চান্দিনায় মারুতির পেছনে বাসের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু,অন্তঃসত্ত্বা মা সহ আহত ৩

তিন মামলায় আসামি ২১ হাজার, ক্ষতি ৩৫০ কোটি টাকা

মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দুটি ও কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও অঙ্গসংগঠনের অজ্ঞাত ২১ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নাশকতায় মেট্রোরেলের ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিন মামলার এজাহারে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২২ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এমআরটি লাইন-৬-এর উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় তিনি অজ্ঞাত ছয় হাজার আসামির কথা উল্লেখ করেন। কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের কাফরুল থানার আওতাধীন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ করেন। পরে গত ২৩ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এমআরটি লাইন-৬-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক মো. গোলাম রসূল আজাদ মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের মিরপুর থানার আওতাধীন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত ছয় হাজার জনকে আসামি করেন। এরপর গত ২৪ জুলাই উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবীর বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি মিরপুর-১০ স্টেশনে ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৯ হাজার জনকে আসামি করেন।

এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আন্দোলনরত সরকারবিরোধী দল ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুর্বৃত্ত লাঠিসোটা, লোহার রড, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যেমন-রামদা, দা, কুড়াল, শাবল, কাটার, হাতুড়ি ইত্যাদি নিয়ে কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায় এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি লুটপাট করে নিয়ে যায়। তাদের অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুরে এই স্টেশনের ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কাফরুল থানার আওতাধীন অংশে ৫০ কোটি টাকা এবং মিরপুর মডেল থানার অংশে আরও ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

একই দিন বিকেল সোয়া ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা স্টেশনের প্রবেশ ও বহির্গমন গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া স্টেশনের গ্রাউন্ডে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে মিরপুর-১০ স্টেশনের ২৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আসামিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। তারা সরকার উৎখাতে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সন্দেহভাজন অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এসব মামলায় এরই মধ্যে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কাফরুল থানার বিএনপি নেতা কাজী আরিফুল হোসেন, কে এম আরিফুর কবির, কবীর হোসেন মিল্টন, সাদ মোর্শেদ, মনির হোসেন, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আল আসাদ ওরফে সাঈদ খান, সানাউল হক নিরু, আলমগীর, মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া ওরফে নাইম, আব্দুল আজিজ সুলতান ও মাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ছাড়া কাফরুল থানার মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ সালাম ও বিএনপির সমর্থক মাহমুদুস সালেহীনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃত্যুর দুই দিন পর জহুর আলীর মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ

তিন মামলায় আসামি ২১ হাজার, ক্ষতি ৩৫০ কোটি টাকা

আপডেট সময় ১১:৫৪:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দুটি ও কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও অঙ্গসংগঠনের অজ্ঞাত ২১ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নাশকতায় মেট্রোরেলের ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিন মামলার এজাহারে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২২ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এমআরটি লাইন-৬-এর উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় তিনি অজ্ঞাত ছয় হাজার আসামির কথা উল্লেখ করেন। কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের কাফরুল থানার আওতাধীন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ করেন। পরে গত ২৩ জুলাই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের এমআরটি লাইন-৬-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক মো. গোলাম রসূল আজাদ মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের মিরপুর থানার আওতাধীন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত ছয় হাজার জনকে আসামি করেন। এরপর গত ২৪ জুলাই উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. ইমাম উদ্দীন কবীর বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি মিরপুর-১০ স্টেশনে ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৯ হাজার জনকে আসামি করেন।

এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আন্দোলনরত সরকারবিরোধী দল ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুর্বৃত্ত লাঠিসোটা, লোহার রড, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যেমন-রামদা, দা, কুড়াল, শাবল, কাটার, হাতুড়ি ইত্যাদি নিয়ে কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায় এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি লুটপাট করে নিয়ে যায়। তাদের অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুরে এই স্টেশনের ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কাফরুল থানার আওতাধীন অংশে ৫০ কোটি টাকা এবং মিরপুর মডেল থানার অংশে আরও ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

একই দিন বিকেল সোয়া ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা স্টেশনের প্রবেশ ও বহির্গমন গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া স্টেশনের গ্রাউন্ডে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে মিরপুর-১০ স্টেশনের ২৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আসামিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। তারা সরকার উৎখাতে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সন্দেহভাজন অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এসব মামলায় এরই মধ্যে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কাফরুল থানার বিএনপি নেতা কাজী আরিফুল হোসেন, কে এম আরিফুর কবির, কবীর হোসেন মিল্টন, সাদ মোর্শেদ, মনির হোসেন, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আল আসাদ ওরফে সাঈদ খান, সানাউল হক নিরু, আলমগীর, মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া ওরফে নাইম, আব্দুল আজিজ সুলতান ও মাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ছাড়া কাফরুল থানার মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ সালাম ও বিএনপির সমর্থক মাহমুদুস সালেহীনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে।