ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন সমন্বয়ককে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী তিনজনকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। কারা তাদের আক্রমণ করতে চায়, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন যে ৮ দাবি দিয়েছেন—প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তার মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়া হবে; কিন্তু সেই সুযোগ শিক্ষার্থীরা দেননি।

শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে সহিংসতায় নারায়ণগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমাদের সন্তানরা অলরেডি ৩০ বছর পার করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের কোটা এটাও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে থাকবে না। অলরেডি এটাও মেধা তালিকার কাছে চলে গেছে। কাজেই কোটা এখন ৯৮ শতাংশ মেধায় চলে গেছে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি মহল এমনভাবে গুজব ছড়াচ্ছে; যাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা একদিকে গুজব ছড়িয়েছে, অন্য দিকে আক্রমণ করেছে, তারা সংঘবদ্ধ আক্রমণ করেছে। এ রকম সংঘবদ্ধ আক্রমণ ডেডিকেটেড ফোর্সরাই করতে পারে। যেটা নাকি জামায়াত-বিএনপি এবং জঙ্গিদেরই কাজ। আমরা প্রমাণও পাচ্ছি। মন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন, কতগুলো বাচ্চা ছেলেকে সংঘাতে নামিয়ে মানবঢাল হিসেবে তাদের ব্যবহার করেছে।

কোটা নিয়ে আদালতের রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম ছাত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে আন্দোলন থামিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবে; কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখলাম, তারা এ কাজটি করেননি। কারণ তারা তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি ও জঙ্গি—যারা দেশে স্বাধীনতা চায়নি; যারা দেশে জঙ্গির উত্থান ঘটাতে চেয়েছিল; সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে দেশকে অকার্যকর করার প্রচেষ্টা নিয়েছিল, তারা তাদের হাতের এখন ক্রীড়নক হয়ে গেছে। আমি আগেই বলেছি, ছাত্রদের আন্দোলনের ফাঁকে ছাত্রদের মিসগাইড করে হত্যাকাণ্ডসহ নানা নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রধান আক্রোশই ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি।

গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান থাকবে, সত্যিকারের ঘটনা কী সেটা দেশবাসীকে জানাবেন। দুজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এমনকি নারী সাংবাদিককে কীভাবে নাজেহাল করা হয়েছে তাও আপনারা দেখেছেন। এরা মানুষের শত্রু, জনগণ ও দেশের শত্রু।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি অনেক সাধারণ মানুষ ও ছাত্রলীগের অনেকে শাহাদাতবরণ করেছেন। তিনজন পুলিশ ও একজন আনসার শাহাদাতবরণ করেছেন। একজন পুলিশ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আমাদের এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গাজীপুরে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের পিএসকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ-বিজিবির ওপর হামলা হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবি একত্র হয়ে যখন পারছিলেন না, তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি। সেনাবাহিনী এখন কাজ করছে। আমরা খুব শিগগির এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, নারাণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নূরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রমুখ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ‘প্রিয়ম নিবাস’ পরিদর্শন করেন। এ ভবনটিতে হাইওয়ে পুলিশের ব্যারাক রয়েছে। পরে তিনি সাইনবোর্ড এলাকায় জেলা পিবিআই কার্যালয়, জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসহ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন সমন্বয়ককে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আপডেট সময় ১১:০৪:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী তিনজনকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। কারা তাদের আক্রমণ করতে চায়, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন যে ৮ দাবি দিয়েছেন—প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তার মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে মেনে নেওয়া হবে; কিন্তু সেই সুযোগ শিক্ষার্থীরা দেননি।

শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে সহিংসতায় নারায়ণগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমাদের সন্তানরা অলরেডি ৩০ বছর পার করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের কোটা এটাও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে থাকবে না। অলরেডি এটাও মেধা তালিকার কাছে চলে গেছে। কাজেই কোটা এখন ৯৮ শতাংশ মেধায় চলে গেছে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি মহল এমনভাবে গুজব ছড়াচ্ছে; যাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা একদিকে গুজব ছড়িয়েছে, অন্য দিকে আক্রমণ করেছে, তারা সংঘবদ্ধ আক্রমণ করেছে। এ রকম সংঘবদ্ধ আক্রমণ ডেডিকেটেড ফোর্সরাই করতে পারে। যেটা নাকি জামায়াত-বিএনপি এবং জঙ্গিদেরই কাজ। আমরা প্রমাণও পাচ্ছি। মন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন, কতগুলো বাচ্চা ছেলেকে সংঘাতে নামিয়ে মানবঢাল হিসেবে তাদের ব্যবহার করেছে।

কোটা নিয়ে আদালতের রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম ছাত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে আন্দোলন থামিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবে; কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখলাম, তারা এ কাজটি করেননি। কারণ তারা তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি ও জঙ্গি—যারা দেশে স্বাধীনতা চায়নি; যারা দেশে জঙ্গির উত্থান ঘটাতে চেয়েছিল; সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে দেশকে অকার্যকর করার প্রচেষ্টা নিয়েছিল, তারা তাদের হাতের এখন ক্রীড়নক হয়ে গেছে। আমি আগেই বলেছি, ছাত্রদের আন্দোলনের ফাঁকে ছাত্রদের মিসগাইড করে হত্যাকাণ্ডসহ নানা নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রধান আক্রোশই ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি।

গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান থাকবে, সত্যিকারের ঘটনা কী সেটা দেশবাসীকে জানাবেন। দুজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এমনকি নারী সাংবাদিককে কীভাবে নাজেহাল করা হয়েছে তাও আপনারা দেখেছেন। এরা মানুষের শত্রু, জনগণ ও দেশের শত্রু।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি অনেক সাধারণ মানুষ ও ছাত্রলীগের অনেকে শাহাদাতবরণ করেছেন। তিনজন পুলিশ ও একজন আনসার শাহাদাতবরণ করেছেন। একজন পুলিশ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আমাদের এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গাজীপুরে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের পিএসকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ-বিজিবির ওপর হামলা হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবি একত্র হয়ে যখন পারছিলেন না, তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি। সেনাবাহিনী এখন কাজ করছে। আমরা খুব শিগগির এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, নারাণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নূরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রমুখ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ‘প্রিয়ম নিবাস’ পরিদর্শন করেন। এ ভবনটিতে হাইওয়ে পুলিশের ব্যারাক রয়েছে। পরে তিনি সাইনবোর্ড এলাকায় জেলা পিবিআই কার্যালয়, জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসহ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।