ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ঈশ্বরদীর আরামবাড়িয়া বাজারে গুলি: যুবদল কর্মী বিপু গুলিবিদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। ফের বাড়ল সোনার দাম মুসলমানদেরকে শিরক মুক্ত ঈমান ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন করতে হবে ভোলায় গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সংগ্রহের লিফলেট বিতরণ মধ্যরাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ঝটিকা মিছিল নভেম্বরেও হচ্ছে না হামজার অভিষেক! ইউএনও’র বাসভবনে সিন্দুক ভরা পোড়া টাকার ভিডিও ভাইরাল, সমালোচনা কুমিল্লা জেলা দেবিদ্বার থানাধীন গ্রাম পদ্মকোট বৈধ গ্যাস লাইন বকেয়ার বিলের কারনে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে, পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার

কক্সবাজারে সাংবাদিকদের ওপর আ.লীগ-ছাত্রলীগের হামলা

কক্সবাজারে কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছে সাংবাদিকরা। এ সময় অন্তত ৫ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মারুফ হোসেন নামের একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে অস্ত্র হাতেও দেখা গেছে।

হামলার শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন দেশ টেলিভিশনের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সৌরভ দেব, একাত্তর টিভির ক্যামেরাপার্সন হেলাল উদ্দিন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সিসিএনের মিশু দাশ গুপ্ত। এ সময় অনেকেই হুমকি পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে দৈনিক আজাদীর কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি আজিজ রাসেল ও চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক আজিম নিহাদ।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দর সড়ক থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী মিছিল বের করে লালদীঘির পাড়ের দিকে রওনা দেয়। ওই সময় পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে জমায়েত হচ্ছিলো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা পৌরসভা অতিক্রম করার সময় ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের না পেয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খুঁজতে থাকে তারা। ওই সময় সোনালী রেস্টুরেন্টে বসে থাকা এক যুবককে পেটাতে শুরু করে তারা। তাকে লাঠি, জ্বলন্ত কাঠের লাকড়িসহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট ধরে পেটায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

যুবককে পেটানোর সেই দৃশ্য ধারণ করার সময় সাংবাদিকের উপর চড়াও হয় তারা। ওই সময় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি বোরহান উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী সাংবাদিকদের মারধর করে। এ সময় সাংবাদিকদের পিস্তল দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শন করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেন।

হামলার শিকার স্থানীয় সাংবাদিক মিশুগুপ্ত বলেন, রেস্টুরেন্টে বসা যুবককে মারধরের ভিডিও ধারণের সময় ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন খোকন মোবাইল কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এসময় আশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তাকে।

হামলার শিকার দেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সৌরভ দেব বলেন, মূলত আমরা সংবাদ সংগ্রহে যাই। সেখানে একজন টমটম চালকের উপর অমানবিক হামলা হতে দেখে আমরা এগিয়ে যাই। এসময় আমাদের উপরও দেখেশুনে লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করা হয়।

তিনি দাবি করেন, অনেকেই টেলিভিশনের ক্যামেরা উদ্দেশ্যে করে তেড়ে যায়। ক্যামেরা বন্ধ না করায় মারধর করার চেষ্টা করে।

একাত্তর টিভির ক্যামেরাপার্সন হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি যখন ভিডিও করছিলাম তখন আমার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ক্যামেরা ভাঙচুর করার চেষ্টা চালিয়েছে। এসময় আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে।

রিপোটার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক এম ওসমান গনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যখন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছিলো তখন আমাদের সহকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দ্রুত সময়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন খোকন দাবী করেন, না চেনার কারণে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তবে ধাক্কা দেওয়া ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে,কোটা আন্দোলনকারীদের মিছিল যাওয়ার সময় মূলত উসকানি দেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মইন উদ্দিন। তার উসকানি পেয়ে সবাই হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। মোবাইল ফোনে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এদিকে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন ঘটনা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতর বিষয়টি আমার জানা নেই। কিন্তু সাংবাদিকের ওপরে হামলার বিষয়টি আমাকে অবগত করার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈশ্বরদীর আরামবাড়িয়া বাজারে গুলি: যুবদল কর্মী বিপু গুলিবিদ্ধ

কক্সবাজারে সাংবাদিকদের ওপর আ.লীগ-ছাত্রলীগের হামলা

আপডেট সময় ১১:৩৯:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

কক্সবাজারে কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছে সাংবাদিকরা। এ সময় অন্তত ৫ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মারুফ হোসেন নামের একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে অস্ত্র হাতেও দেখা গেছে।

হামলার শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন দেশ টেলিভিশনের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সৌরভ দেব, একাত্তর টিভির ক্যামেরাপার্সন হেলাল উদ্দিন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সিসিএনের মিশু দাশ গুপ্ত। এ সময় অনেকেই হুমকি পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে দৈনিক আজাদীর কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি আজিজ রাসেল ও চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক আজিম নিহাদ।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দর সড়ক থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী মিছিল বের করে লালদীঘির পাড়ের দিকে রওনা দেয়। ওই সময় পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে জমায়েত হচ্ছিলো আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা পৌরসভা অতিক্রম করার সময় ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের না পেয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খুঁজতে থাকে তারা। ওই সময় সোনালী রেস্টুরেন্টে বসে থাকা এক যুবককে পেটাতে শুরু করে তারা। তাকে লাঠি, জ্বলন্ত কাঠের লাকড়িসহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট ধরে পেটায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

যুবককে পেটানোর সেই দৃশ্য ধারণ করার সময় সাংবাদিকের উপর চড়াও হয় তারা। ওই সময় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি বোরহান উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী সাংবাদিকদের মারধর করে। এ সময় সাংবাদিকদের পিস্তল দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শন করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান যুবলীগ নেতা মারুফ হোসেন।

হামলার শিকার স্থানীয় সাংবাদিক মিশুগুপ্ত বলেন, রেস্টুরেন্টে বসা যুবককে মারধরের ভিডিও ধারণের সময় ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন খোকন মোবাইল কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এসময় আশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তাকে।

হামলার শিকার দেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সৌরভ দেব বলেন, মূলত আমরা সংবাদ সংগ্রহে যাই। সেখানে একজন টমটম চালকের উপর অমানবিক হামলা হতে দেখে আমরা এগিয়ে যাই। এসময় আমাদের উপরও দেখেশুনে লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করা হয়।

তিনি দাবি করেন, অনেকেই টেলিভিশনের ক্যামেরা উদ্দেশ্যে করে তেড়ে যায়। ক্যামেরা বন্ধ না করায় মারধর করার চেষ্টা করে।

একাত্তর টিভির ক্যামেরাপার্সন হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি যখন ভিডিও করছিলাম তখন আমার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ক্যামেরা ভাঙচুর করার চেষ্টা চালিয়েছে। এসময় আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে।

রিপোটার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক এম ওসমান গনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যখন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছিলো তখন আমাদের সহকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দ্রুত সময়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন খোকন দাবী করেন, না চেনার কারণে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তবে ধাক্কা দেওয়া ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে,কোটা আন্দোলনকারীদের মিছিল যাওয়ার সময় মূলত উসকানি দেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মইন উদ্দিন। তার উসকানি পেয়ে সবাই হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। মোবাইল ফোনে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এদিকে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন ঘটনা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতর বিষয়টি আমার জানা নেই। কিন্তু সাংবাদিকের ওপরে হামলার বিষয়টি আমাকে অবগত করার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই।