ঢাকা ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিএনপি এক ব্যক্তির শাসন দেখতে চায় নাশহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গণতন্ত্র কিংবা অন্য কোন মানব রচিত ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্নীতি ও বৈষম্য মুক্ত কল্যাণকর সমাজ এবং রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়- আমীর, ইসলামী সমাজ। ঈশ্বরদীর আরামবাড়িয়া বাজারে গুলি: যুবদল কর্মী বিপু গুলিবিদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। ফের বাড়ল সোনার দাম মুসলমানদেরকে শিরক মুক্ত ঈমান ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন করতে হবে ভোলায় গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সংগ্রহের লিফলেট বিতরণ মধ্যরাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ঝটিকা মিছিল নভেম্বরেও হচ্ছে না হামজার অভিষেক! ইউএনও’র বাসভবনে সিন্দুক ভরা পোড়া টাকার ভিডিও ভাইরাল, সমালোচনা

কোটা আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগ; কঠোর অবস্থানে সরকার

সাধারণ ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে রোববার রাতের কর্মসূচি ও তাদের স্লোগানকে ঘিরে সরকার দল কতটা কঠোর অবস্থানে রয়েছে একাধিক মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্যে সেটি স্পষ্ট হয়েছে। একাধিক মন্ত্রী এ নিয়ে সরকার কেন কঠোর- সে বিষয়েও কথা বলেছেন। কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী তাদের ফেসবুক পেজেও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কোটা আন্দোলনের নামে রাজনীতি করা হলে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। কোটাবিরোধী আন্দোলনে রোববার রাতের স্লোগানের বিষয়ে বলেছেন, আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের মোকাবিলা করবে সরকার। এর জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত আছে।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন নামে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত। আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের ছাত্রলীগ মোকাবিলা করবে। বিএনপিসহ একটি চিহ্নিত মহলের ষড়যন্ত্র ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য তিনি সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। অথচ বিএনপি ও তার দোসররা এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে উসকানি দিচ্ছে। সরকার একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে কেন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে? কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছি। সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। তাই কারও উসকানিতে পড়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য না দিয়ে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কর্মসূচি পরিহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, চূড়ান্ত শুনানিতে আদালত সব পক্ষের বক্তব্য এবং যুক্তিতর্ক আমলে নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেবেন। আমরা আশা করি, অচিরেই এ বিষয়ে সমাধান হবে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রোববার রাতে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। ৩০ লাখ শহিদের রক্তে অর্জিত দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান, এটি শুধু সরকার নয়- এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। আমরা আগেই বলেছি, কোটা আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকে পড়েছে।

তিনি বলেন, সরকার অনেক শক্তিশালী। দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেব না। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি। আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। পরিকল্পিতভাবে কিছু মানুষ সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আসলে রোববার রাতের সব ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগান এবং বক্তব্য, প্রমাণিত হয় এটি কোটাবিরোধী আন্দোলন নয়। এটি রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেব না। আমাদের সরকার অনেক শক্তিশালী সরকার। আমরা কোনো রাজনৈতিক অপশক্তিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলা করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেব না।

সোমবার জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, কোটা আন্দোলন এখন আর কোটা ইস্যুতে নেই। এটা এখন রাজনৈতিক আন্দোলন হয়ে গেছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, সরকার এখন এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে। দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধে শহিদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে মিছিলের কোনো অধিকার থাকতে পারে না।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ফেসবুকে লিখেন, যাদের মুখ থেকে বের হয়, আমি রাজাকার তারা প্রমাণ করছে তারা এ যুগের রাজাকার। এরা আদালত মানে না, সরকারও মানে না। তাই এ রাষ্ট্রদ্রোহীদের পক্ষে এই রাষ্ট্রকে মানা সম্ভব নয়। সঠিক স্লোগানই ধরেছে তারা! বের হয়ে আসুক এ যুগের রাজাকারদের আসল চেহারা।

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক পোস্টে লিখেছেন, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং মেধার পক্ষে কথা বলেছে তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি ছিল এবং আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করেছে, তাদের প্রতি জানাই ধিক্কার।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফেসবুকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদের গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারের পক্ষে তাদের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাজাকারদের দখলে থাকতে পারে না।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আদালতের আদেশ না মেনে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সোমবার সকালে রাজধানীর হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় পবিত্র আশুরা উদযাপন ও তাজিয়া মিছিল উপলক্ষ্যে ডিএমপির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান আরও বলেন, কোটা সংস্কার সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। তাই আদালত যে আদেশ দেবেন সেই আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং মেনে নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে চান সে যেই হোক তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে থালাবাটি বাজিয়ে সমস্বরে তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার! স্লোগান দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার তার প্রতিক্রিয়ায় সরকারের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী এবং ডিএমপি কমিশনার তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিএনপি এক ব্যক্তির শাসন দেখতে চায় নাশহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

কোটা আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগ; কঠোর অবস্থানে সরকার

আপডেট সময় ১২:৩৫:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

সাধারণ ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে রোববার রাতের কর্মসূচি ও তাদের স্লোগানকে ঘিরে সরকার দল কতটা কঠোর অবস্থানে রয়েছে একাধিক মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্যে সেটি স্পষ্ট হয়েছে। একাধিক মন্ত্রী এ নিয়ে সরকার কেন কঠোর- সে বিষয়েও কথা বলেছেন। কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী তাদের ফেসবুক পেজেও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কোটা আন্দোলনের নামে রাজনীতি করা হলে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। কোটাবিরোধী আন্দোলনে রোববার রাতের স্লোগানের বিষয়ে বলেছেন, আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের মোকাবিলা করবে সরকার। এর জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত আছে।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন নামে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত। আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের ছাত্রলীগ মোকাবিলা করবে। বিএনপিসহ একটি চিহ্নিত মহলের ষড়যন্ত্র ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য তিনি সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। অথচ বিএনপি ও তার দোসররা এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে উসকানি দিচ্ছে। সরকার একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে কেন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে? কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছি। সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। তাই কারও উসকানিতে পড়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য না দিয়ে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কর্মসূচি পরিহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, চূড়ান্ত শুনানিতে আদালত সব পক্ষের বক্তব্য এবং যুক্তিতর্ক আমলে নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেবেন। আমরা আশা করি, অচিরেই এ বিষয়ে সমাধান হবে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রোববার রাতে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। ৩০ লাখ শহিদের রক্তে অর্জিত দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান, এটি শুধু সরকার নয়- এটি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান। আমরা আগেই বলেছি, কোটা আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকে পড়েছে।

তিনি বলেন, সরকার অনেক শক্তিশালী। দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেব না। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি। আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। পরিকল্পিতভাবে কিছু মানুষ সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আসলে রোববার রাতের সব ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগান এবং বক্তব্য, প্রমাণিত হয় এটি কোটাবিরোধী আন্দোলন নয়। এটি রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা দেশকে কখনো অস্থিতিশীল করতে দেব না। আমাদের সরকার অনেক শক্তিশালী সরকার। আমরা কোনো রাজনৈতিক অপশক্তিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলা করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেব না।

সোমবার জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, কোটা আন্দোলন এখন আর কোটা ইস্যুতে নেই। এটা এখন রাজনৈতিক আন্দোলন হয়ে গেছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, সরকার এখন এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে। দেশকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধে শহিদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে মিছিলের কোনো অধিকার থাকতে পারে না।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ফেসবুকে লিখেন, যাদের মুখ থেকে বের হয়, আমি রাজাকার তারা প্রমাণ করছে তারা এ যুগের রাজাকার। এরা আদালত মানে না, সরকারও মানে না। তাই এ রাষ্ট্রদ্রোহীদের পক্ষে এই রাষ্ট্রকে মানা সম্ভব নয়। সঠিক স্লোগানই ধরেছে তারা! বের হয়ে আসুক এ যুগের রাজাকারদের আসল চেহারা।

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক পোস্টে লিখেছেন, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং মেধার পক্ষে কথা বলেছে তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি ছিল এবং আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করেছে, তাদের প্রতি জানাই ধিক্কার।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফেসবুকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদের গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারের পক্ষে তাদের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাজাকারদের দখলে থাকতে পারে না।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আদালতের আদেশ না মেনে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সোমবার সকালে রাজধানীর হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় পবিত্র আশুরা উদযাপন ও তাজিয়া মিছিল উপলক্ষ্যে ডিএমপির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান আরও বলেন, কোটা সংস্কার সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। তাই আদালত যে আদেশ দেবেন সেই আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং মেনে নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে চান সে যেই হোক তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে থালাবাটি বাজিয়ে সমস্বরে তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার! স্লোগান দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার তার প্রতিক্রিয়ায় সরকারের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী এবং ডিএমপি কমিশনার তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।