রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রান বিভাগের অধ্যাপক ড. সোহেল হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন চাকরির প্রশ্নের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যেন রাবিকে প্রশ্নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রশ্নফাঁসের কোনো রেকর্ড নেই। প্রশ্নের দায়িত্ব পেলে রাবি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলেই তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিই, তখন প্রশ্নের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি রুমেই অবস্থান করি-এতটা সিরিয়াস থাকি আমরা।
বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে একাদশ তম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার বলেন, ১ জুলাই থেকে একভাবে আমাদের এই আন্দোলন করে যাচ্ছি। এতদিন আমরা ক্লাস পরীক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বিরত রয়েছি। তবুও আজকে পর্যন্ত সরকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে কোনো আশ্বাস মেলেনি। কোনো মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন না। কারণ এই প্রজ্ঞাপনটা ক্রুটিপূর্ণ। সেটা আমরা তুলে ধরেছি, গাণিতিক ব্যাখ্যা দিয়েছি। বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক দিয়ে সবকিছু দেখানো হয়েছে। যে এটা আমাদের জন্য আর্থিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যায় না। আমরা চাই শিক্ষকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করা হোক। তারপর আমাদের যৌক্তিক দাবি শুনে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুন্সি মন্জুরুল হক বলেন, যখন মাঠে নেমেছি, দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। অতীতে শিক্ষকরা যেসব আন্দোলন করেছেন সেগুলো বৃথা যায়নি। বিশ্বাস করি এ আন্দোলনও বৃথা যাবে না। অতীতে বিভিন্ন সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে এই শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরা পিছু হটব না, যতক্ষণ না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হবে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী নিজেই অঙ্গীকার করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল করা হবে, কিন্তু আজ ১৪ বছর পর এসেও সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চাই সেই অঙ্গীকার বহাল থাকুক, তিনি যেনো আমাদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেন।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।
এটি প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগরাও লাগাতার কর্মসূচি করে আসছেন।
কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা সুলতানা চূড়া। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের প্রায় শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।