ঢাকা ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লায় সচিবালয়ে আগুন ও আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল গোয়াইনঘাটে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় ইয়াবাসহ ২ জন আসামীকে আটক করেছে ৫৩ বিজিবি। পাঁচবিবিতে দাবী আদায়ে বিসিএস কর্তাদের মানববন্ধন মিঠাপুকুরে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পরিবহনে কৃষকের জম দিয়ে রাস্তা না দেওয়ায় বাড়িঘরে ভাংচুরের অভিযোগ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনীদের শাস্তি দাবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকৃত করে শেখ পরিবার বাংলাদেশকে তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের জন্য চসিক মেয়রের দরজা সবসময় খোলা থাকবে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা মহাসড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা: নিহত ৪, আহত ২ সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ফুলেন্নেছা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে রোববার রাতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ সাহেদ হোসেন মনা নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাখি গলিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। সন্ত্রাসী জুয়েলের নেতৃত্বে গ্যাংয়ের সদস্যরা উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে মনাকে।

এদিকে চট্টগ্রামে ফের বেপরোয়া কিশোর অপরাধীরা। দিন দিনই আরও নৃশংস হয়ে উঠছে তারা। তাদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ছাত্রলীগের নেতারাও। কথিত রাজনৈতিক ‘বড় ভাই’দের ছত্রচ্ছায়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় ‘লাঠিসোঁটা ও অস্ত্র নিয়ে’ প্রকাশ্যে দৌড়াদৌড়ি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে তাদেরও মারধর করা হয়। নগরী ও জেলার পাড়া-মহল্লায় চলছে এদের দাপট। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধেই জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। এ সব অপরাধীদের অনেকে আবার মাদকাসক্ত। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ, এমন কি খেলতে গিয়ে কথা কাটাকাটির মতো তুচ্ছ ঘটনায়ও এরা জড়িয়ে পড়ছে খুনোখুনিতে। রোববার রাতে খুন হওয়া মনার পরিবার ও তার বন্ধুরা জানিয়েছে, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার সন্ত্রাসী জুয়েলের নেতৃত্বে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মনাকে। জুয়েল ও মনা পরস্পর বন্ধু। এদিকে মনাও রিয়াজউদ্দিন বাজারের চাঞ্চল্যকর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই মামলার অন্যতম আসামি ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। মনা বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকার শাহ আলমের ছেলে।

মনার স্বজনরা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি ভাতের হোটেল নিয়ে জুয়েলের সঙ্গে মনার বিরোধ চলছিল। রোববার রাতে মনা ও তার কয়েকজন বন্ধুসহ ওই গলিতে পাখির খাদ্য কিনতে আসেন। বিষয়টি গ্যাং লিডার জুয়েল জানার পর ১২ থেকে ১৪ কিশোরকে নিয়ে মনার ওপর হামলা করে। মনা যে দোকান থেকে পাখির খাদ্য কিনছিলেন ওই দোকানের ভেতরে নিয়ে শাটার বন্ধ করে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তার পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। মনা ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

মনার বন্ধু মো. রুবেল জানান, স্টেশন রোড এলাকায় ‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ’র নেতা পরিচয় দিয়ে জুয়েল নানা অপকর্ম করত। চাঁদাবাজি, মোবাইল ছিনতাই, স্টেশন এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোই তার পেশা। এছাড়া রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিভিন্ন দখল-বেদখলে অস্ত্র ও কিশোর গ্যাং সরবরাহ করত জুয়েল। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গত বছরের ৯ জুলাই রিয়াজউদ্দিন বাজারের জুবিলী রোডে মারামারির ঘটনা সাজিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ডাকাতির ঘটনায় মনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অবশ্য জামিনে বের হয় সে। কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম ওবায়দুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভাতের হোটেল নিয়ে মনার সঙ্গে তার বন্ধু জুয়েলের দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জেরে মনাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ঘাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে আহত : শনিবার রাতে বাকলিয়া থানার রসূলবাগ আবাসিক এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক মো. ওমর ফরহাদকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। পরে ওমর ফরহাদকে বাকলিয়া থানা পুলিশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে পরে তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ওমর ফরহাদ বাদী হয়ে ৭ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামিরা হচ্ছে-নয়ন ভট্টাচার্য (২০), শাওন (২২), আরিফ (২০), আজিজ (২৪), তৌহিদুল ইসলাম (২৪), সাইফুল ইসলাম (২৩) ও তাজুল ইসলাম (২৫)। স্থানীয়রা জানান, আসামিরা নানা অপকর্মে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত এরা। এদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

রসূলবাগ আবাসিক এলাকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক মো. ওমর ফরহাদ যুগান্তরকে বলেন, ২৮ জুন বাকলিয়া এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার আজিজুর রহমানসহ কয়েকজন মিলে আমাদের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় আমার ভাই ওমর ফারুক ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর থেকে আসামিরা মামলা তুলে নিতে আমাদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু আমরা মামলা তুলে নেইনি। এরপর কিশোর গ্যাং ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্য পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আমি মারা গেছি ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে আমার পরিবার পুলিশ নিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

ছুরিকাঘাতে আগ্রাবাদে কিশোর খুন : ৩ জুন ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নুরুল আজিম নামের এক কিশোর খুন হয়। নুরুল আজিমের বাড়ি চাঁদপুরে। সে চৌমুহনী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নয়ন, মোহাম্মদ সোহেল, মোহাম্মদ রনি ও মামুন নামের চার কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নিহত আজিম ঘটনাস্থলে একা দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন কিশোর এসে তাকে ছুরিকাঘাত করে। এতে তার মৃত্যু হয়। গ্রেফতারকৃত কিশোররা এখন কারাগারে রয়েছে। একই দিন নেশা করার জন্য টাকা চেয়ে না পাওয়ায় নগরের পাহাড়তলীতে ছেলে ওমর ফারুকের হাতে খুন হন মা রিনা আক্তার। রিনার শরীরে ৪৬টি কোপের আঘাত পাওয়া গেছে। মাথা ও কোমরের নিচ পর্যন্ত সব খানেই আঘাতের চিহ্ন ছিল। আপন মাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে ওমর ফারুক খাবার খেয়েছেন স্বাভাবিকভাবে। তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, কয়েক ঘণ্টা আগে সে গর্ভধারিণী মাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করেছে। ওমর ফারুক সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকার একটি কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মাকে খুনের পর তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি।

বোয়ালখালীতে খুন স্কুলছাত্র আরিফ : ১ জুন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হয় স্কুলছাত্র আরিফ হোসেন। তাকে খুন করে তারই বন্ধু সাকিবুল ইসলাম নামের ১৪ বছরের এক কিশোর। এ ঘটনায় নিহত আরিফের বাবা জাগির হোসেন বাদী হয়ে মামলা করলে অভিযুক্ত ওই কিশোর ও তার মাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আরিফ শাকপুরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার সাইফুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ওপর নজরদারি বাড়াবে পুলিশ। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা কারা তাদেরও খুঁজে বের করা হবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে যা যা করা দরকার সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লায় সচিবালয়ে আগুন ও আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

আপডেট সময় ১০:৫৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে রোববার রাতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ সাহেদ হোসেন মনা নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাখি গলিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। সন্ত্রাসী জুয়েলের নেতৃত্বে গ্যাংয়ের সদস্যরা উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে মনাকে।

এদিকে চট্টগ্রামে ফের বেপরোয়া কিশোর অপরাধীরা। দিন দিনই আরও নৃশংস হয়ে উঠছে তারা। তাদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ছাত্রলীগের নেতারাও। কথিত রাজনৈতিক ‘বড় ভাই’দের ছত্রচ্ছায়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় ‘লাঠিসোঁটা ও অস্ত্র নিয়ে’ প্রকাশ্যে দৌড়াদৌড়ি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে তাদেরও মারধর করা হয়। নগরী ও জেলার পাড়া-মহল্লায় চলছে এদের দাপট। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধেই জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। তাদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। এ সব অপরাধীদের অনেকে আবার মাদকাসক্ত। নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ, এমন কি খেলতে গিয়ে কথা কাটাকাটির মতো তুচ্ছ ঘটনায়ও এরা জড়িয়ে পড়ছে খুনোখুনিতে। রোববার রাতে খুন হওয়া মনার পরিবার ও তার বন্ধুরা জানিয়েছে, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার সন্ত্রাসী জুয়েলের নেতৃত্বে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মনাকে। জুয়েল ও মনা পরস্পর বন্ধু। এদিকে মনাও রিয়াজউদ্দিন বাজারের চাঞ্চল্যকর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই মামলার অন্যতম আসামি ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। মনা বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকার শাহ আলমের ছেলে।

মনার স্বজনরা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে একটি ভাতের হোটেল নিয়ে জুয়েলের সঙ্গে মনার বিরোধ চলছিল। রোববার রাতে মনা ও তার কয়েকজন বন্ধুসহ ওই গলিতে পাখির খাদ্য কিনতে আসেন। বিষয়টি গ্যাং লিডার জুয়েল জানার পর ১২ থেকে ১৪ কিশোরকে নিয়ে মনার ওপর হামলা করে। মনা যে দোকান থেকে পাখির খাদ্য কিনছিলেন ওই দোকানের ভেতরে নিয়ে শাটার বন্ধ করে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তার পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। মনা ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

মনার বন্ধু মো. রুবেল জানান, স্টেশন রোড এলাকায় ‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ’র নেতা পরিচয় দিয়ে জুয়েল নানা অপকর্ম করত। চাঁদাবাজি, মোবাইল ছিনতাই, স্টেশন এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোই তার পেশা। এছাড়া রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিভিন্ন দখল-বেদখলে অস্ত্র ও কিশোর গ্যাং সরবরাহ করত জুয়েল। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গত বছরের ৯ জুলাই রিয়াজউদ্দিন বাজারের জুবিলী রোডে মারামারির ঘটনা সাজিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ডাকাতির ঘটনায় মনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অবশ্য জামিনে বের হয় সে। কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম ওবায়দুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভাতের হোটেল নিয়ে মনার সঙ্গে তার বন্ধু জুয়েলের দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জেরে মনাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ঘাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে আহত : শনিবার রাতে বাকলিয়া থানার রসূলবাগ আবাসিক এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক মো. ওমর ফরহাদকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। পরে ওমর ফরহাদকে বাকলিয়া থানা পুলিশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে পরে তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ওমর ফরহাদ বাদী হয়ে ৭ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামিরা হচ্ছে-নয়ন ভট্টাচার্য (২০), শাওন (২২), আরিফ (২০), আজিজ (২৪), তৌহিদুল ইসলাম (২৪), সাইফুল ইসলাম (২৩) ও তাজুল ইসলাম (২৫)। স্থানীয়রা জানান, আসামিরা নানা অপকর্মে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত এরা। এদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

রসূলবাগ আবাসিক এলাকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক মো. ওমর ফরহাদ যুগান্তরকে বলেন, ২৮ জুন বাকলিয়া এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার আজিজুর রহমানসহ কয়েকজন মিলে আমাদের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় আমার ভাই ওমর ফারুক ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর থেকে আসামিরা মামলা তুলে নিতে আমাদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু আমরা মামলা তুলে নেইনি। এরপর কিশোর গ্যাং ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্য পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আমি মারা গেছি ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে আমার পরিবার পুলিশ নিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

ছুরিকাঘাতে আগ্রাবাদে কিশোর খুন : ৩ জুন ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নুরুল আজিম নামের এক কিশোর খুন হয়। নুরুল আজিমের বাড়ি চাঁদপুরে। সে চৌমুহনী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নয়ন, মোহাম্মদ সোহেল, মোহাম্মদ রনি ও মামুন নামের চার কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নিহত আজিম ঘটনাস্থলে একা দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন কিশোর এসে তাকে ছুরিকাঘাত করে। এতে তার মৃত্যু হয়। গ্রেফতারকৃত কিশোররা এখন কারাগারে রয়েছে। একই দিন নেশা করার জন্য টাকা চেয়ে না পাওয়ায় নগরের পাহাড়তলীতে ছেলে ওমর ফারুকের হাতে খুন হন মা রিনা আক্তার। রিনার শরীরে ৪৬টি কোপের আঘাত পাওয়া গেছে। মাথা ও কোমরের নিচ পর্যন্ত সব খানেই আঘাতের চিহ্ন ছিল। আপন মাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে ওমর ফারুক খাবার খেয়েছেন স্বাভাবিকভাবে। তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, কয়েক ঘণ্টা আগে সে গর্ভধারিণী মাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করেছে। ওমর ফারুক সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকার একটি কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মাকে খুনের পর তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি।

বোয়ালখালীতে খুন স্কুলছাত্র আরিফ : ১ জুন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হয় স্কুলছাত্র আরিফ হোসেন। তাকে খুন করে তারই বন্ধু সাকিবুল ইসলাম নামের ১৪ বছরের এক কিশোর। এ ঘটনায় নিহত আরিফের বাবা জাগির হোসেন বাদী হয়ে মামলা করলে অভিযুক্ত ওই কিশোর ও তার মাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আরিফ শাকপুরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার সাইফুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ওপর নজরদারি বাড়াবে পুলিশ। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা কারা তাদেরও খুঁজে বের করা হবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে যা যা করা দরকার সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।