ঢাকা ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিবচরে রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

মাদারীপুর শিবচরে আমন ধান চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে কৃষকরা। জমি তৈরি, চাষাবাদ আর জমিতে চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে আমন চাষকে ঘিরে মাঠে মাঠে যেন এখন উৎসব শুরু হয়েছে। তবে তীব্র দাবদাহে আর বৃষ্টির অভাবে শিবচর উপজেলার কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুম হলেও জমিতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আমনের চারা রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন।

এরই মধ্য শ্রাবণের একটানা কয়েক দিনের বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা আমন ধানের আবাদ শুরু করেছেন। কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টিকে উপক্ষো করে উপজেলার কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণের কাজে  ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শিবচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উফশী জাতের ৩ হাজার ৪৭০হেক্টর, হাইব্রীড ৪ হেক্টর ও স্থানীয় ১ হাজার ২০০ হেক্টর।

সরজমিন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, শিবচর উপজেলার কাদিরপুর, কুতুবপুর, চরজানাজাতসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন। কোথাও কোথাও মাঠ সমান করার জন্য পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে মইয়ের কাজ। কোনো কোনো স্থানে পাওয়ার টিলার ছাড়াও কৃষকরা নিজেই মই টেনে জমি সমান করার দৃশ্য দেখা গেছে।

আবার কোথাও আমন ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কেউ আবার জৈব সার জমিতে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে তৈরি জমিতে বৃষ্টির পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। রোদের গরমে কৃষকদের শরীর থেকে বইছে ঘাম, মাথায় বেঁধে রেখেছেন গামছা।

কাদিরপুর ইউনিয়নের কৃষক বাবুল মোড়ল জানান, চলতি মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি পাওয়ার চাষাবাদে কোন অসুবিধা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনও বেশ ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

একই এলাকার কৃষক তৈয়ব আলী সরদার বলেন, ‘আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হওয়ায় আবাদ শুরু করা হয়। শ্রাবণ মাস শুরু হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় বাকি আবাদ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। মেঘের আনাগোনা থাকলেও প্রত্যাশিত বৃষ্টি নেই। বাধ্য হয়েই গভীর নলকূপের সেচের পানি দিয়ে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। এতে আমন আবাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’

আরেক কৃষক বাদল শিকদার বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তারা গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানির সুবিধা পাচ্ছেন না। জমিতে সেচ সুবিধার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সেচের পানি সংরক্ষণ করে বাকি জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হবে।’

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আফসানা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে আমন চারা রোপনে কৃষককে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। কুতুবপুর ইউনিয়নে এবারে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হেক্টর ধরা হয়েছে।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪৭০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা বর্তমান পুরোদমে আমন ধানের চারা লাগানোর ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া বর্তমান অনুকূলে রয়েছে। আর আমরা চাষিদের চারাগুলো লাইন করে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি বোরোর মতোই আমনেরও বাম্পার ফলন হবে বলে আমি আশা করছি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিবচরে রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

আপডেট সময় ০৩:১৭:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩
মাদারীপুর শিবচরে আমন ধান চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে কৃষকরা। জমি তৈরি, চাষাবাদ আর জমিতে চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে আমন চাষকে ঘিরে মাঠে মাঠে যেন এখন উৎসব শুরু হয়েছে। তবে তীব্র দাবদাহে আর বৃষ্টির অভাবে শিবচর উপজেলার কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণের ভরা মৌসুম হলেও জমিতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আমনের চারা রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন।

এরই মধ্য শ্রাবণের একটানা কয়েক দিনের বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা আমন ধানের আবাদ শুরু করেছেন। কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টিকে উপক্ষো করে উপজেলার কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণের কাজে  ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শিবচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উফশী জাতের ৩ হাজার ৪৭০হেক্টর, হাইব্রীড ৪ হেক্টর ও স্থানীয় ১ হাজার ২০০ হেক্টর।

সরজমিন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, শিবচর উপজেলার কাদিরপুর, কুতুবপুর, চরজানাজাতসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন। কোথাও কোথাও মাঠ সমান করার জন্য পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে মইয়ের কাজ। কোনো কোনো স্থানে পাওয়ার টিলার ছাড়াও কৃষকরা নিজেই মই টেনে জমি সমান করার দৃশ্য দেখা গেছে।

আবার কোথাও আমন ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কেউ আবার জৈব সার জমিতে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে তৈরি জমিতে বৃষ্টির পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। রোদের গরমে কৃষকদের শরীর থেকে বইছে ঘাম, মাথায় বেঁধে রেখেছেন গামছা।

কাদিরপুর ইউনিয়নের কৃষক বাবুল মোড়ল জানান, চলতি মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি পাওয়ার চাষাবাদে কোন অসুবিধা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনও বেশ ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

একই এলাকার কৃষক তৈয়ব আলী সরদার বলেন, ‘আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হওয়ায় আবাদ শুরু করা হয়। শ্রাবণ মাস শুরু হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় বাকি আবাদ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। মেঘের আনাগোনা থাকলেও প্রত্যাশিত বৃষ্টি নেই। বাধ্য হয়েই গভীর নলকূপের সেচের পানি দিয়ে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। এতে আমন আবাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’

আরেক কৃষক বাদল শিকদার বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তারা গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানির সুবিধা পাচ্ছেন না। জমিতে সেচ সুবিধার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি সেচের পানি সংরক্ষণ করে বাকি জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হবে।’

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আফসানা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে আমন চারা রোপনে কৃষককে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। কুতুবপুর ইউনিয়নে এবারে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হেক্টর ধরা হয়েছে।

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪৭০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা বর্তমান পুরোদমে আমন ধানের চারা লাগানোর ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া বর্তমান অনুকূলে রয়েছে। আর আমরা চাষিদের চারাগুলো লাইন করে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি বোরোর মতোই আমনেরও বাম্পার ফলন হবে বলে আমি আশা করছি।