ঢাকা ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেওয়ারিশ কুকুরের সেবা করেই জীবন কাটে সাহিত্য আকনের

খুলনা: খুলনার একজন কলেজ ছাত্র সাহিত্য আকন (২৪)। তিনি ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজের (বিবিএস) ছাত্র হলেও পশুর প্রতি তার রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা।

পশুর সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়ে ২০২১ সালে রাজশাহী ভেটেরিনারি ইনস্টিটিউট থেকে সার্টিফিকেট-ইন-এনিমেল হেলথ্ অ্যান্ড প্রোডাকশন বিষয়ে এক বছরের কোর্স করেছেন।

তার জীবনের একটি পরম লক্ষ্য হচ্ছে পথের কুকুর-বিড়ালের চিকিৎসা করা। যে মমতা তারা পায় না, যে কুকুরের কেউ চায় না, সেই সব কুকুরদের পরম যত্নে সেবা দেন তিনি।

গার্ডিয়ান অব পোস অ্যান্ড ক্লোজ (জিপিসি) নামের একটি সংগঠন করেছেন সাহিত্য আকন। এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক তিনি। খুলনার খালিশপুরের আলমনগর পোড়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা তিনি। অনেক সময় রাস্তার বেওয়ারিশ প্রাণীগুলোকে রোগ-বালাইসহ নানা দুর্ঘটনার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাতে দেখে ব্যথিত হয়ে তাদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন সাহিত্য আকন।

প্রাণী সেবা কবে থেকে শুরু করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাহিত্য আকন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বন্ধু শেখ সাগরকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়াল নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রায় আনুমানিক ৩-৪ হাজার আহত ও অবহেলিত প্রাণীর সেবা দিয়েছি। আমার পরবর্তী উদ্দেশ্য যতখানি সম্ভব প্রাণীর চিকিৎসা করে যাওয়া। কুকুর ও বিড়াল হোন বা রাস্তার অসহায় যেকোনো প্রাণীকে আমরা চেষ্টা করি সেবাটা দেওয়ার জন্য। এমনও কেউ আছেন যাদের কেউ নেই বাসার কুকুরটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার এজন্য আমরা চেষ্টা করি সব জায়গায় ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। আমার পরিবারে অনেক আগে থেকেই কুকুর ও বিড়াল পালন করা হয়। এরা যখন অসুস্থ হয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এছাড়া রাস্তার কুকুর ও বিড়াল অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। তাই পরিবারের পরামর্শ নিয়ে প্রাণীদের রাস্তায় চিকিৎসা শুরু করি। এরপর থেকে আস্তে আস্তে পুরো খুলনায় অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসা করা শুরু করি।

প্রাণী সেবায় আপনার টিমে কত জন সদস্য কাজ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালদের সহায়তায়  তৈরি করেছি ‘গার্ডিয়ান অব পোস অ্যান্ড ক্লোজ (জিপিসি)’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তরুণ প্রজন্মের ৩০ জনের বেশি মিলে তৈরি করেছি সংগঠনটি। আমরা চেষ্টা করবো গ্রুপটি বাড়ানোর জন্য। এসব স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুকুর ও বিড়ালদের সেবা করেন। প্রাণীর সেবা দেওয়া, খাবার দেওয়া, চিকিৎসা করাসহ সার্বিক দেখাশোনা করা তাদের কাজ। কুকুরের বিষয়ে যেকোনো পরামর্শ পাওয়া যায় আমাদের কাছে। চেষ্টা করি সাধ্যমতো সাহায্য করার।

আপনাদের প্রত্যাশা কী এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাণীপ্রেমী সাহিত্য আকন বলেন, খুলনায় কুকুর-বিড়ালের জন্য স্থায়ী কোন শেল্টার নেই। আমরা চেষ্টা করবো ২-১ বছরের মধ্যে এদের জন্য শেল্টার করার। সে ক্ষেত্রে সরকার সহযোগিতা করতে পারে। বা আমরা চেষ্টা করছি কোনোভাবে শেল্টার করার। শেল্টার না থাকায় অসহায় কুকুরের রাস্তায় চিকিৎসা করতে হচ্ছে। কুকুর আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। মানুষ যেখানে অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে ওরাও সেখানে বাঁচতে পারবে। মানুষ ওদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমরা চায় না। আবার ওরা মানুষের দ্বারা আঘাত প্রান্ত হোক তাও চায় না।

তিনি আরও বলেন, অসহায় প্রাণী প্রায় সব জায়গায় থাকে। আমরা প্রথমে দেখে আসি কোনো একটি কুকুর-বিড়াল অসুস্থ পরে আছে। পরে তার ড্রেসিং করা, খাবার সংগ্রহ করে মুখে খাওয়ানো, ইনজেকশন ম্যানেজ করা এসব কাজ ভলেনটিয়াররা করে থাকে। এছাড়া তারা কুকুর ও বিড়াল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে থাকেন। অনেক সময় পঙ্গু কুকুর থাকে খুলনায় যাদের রেখে চিকিৎসা করার মতো কোনো জায়গা নেই। আমাদের জানানো হলে আমরা যেকোনো উপায়ে নিশ্চিত করে থাকি প্রাণীটির চিকিৎসা করা।

সাহিত্য আকনের বন্ধু ও জিডিসির অ্যাডমিন শেখ সাগর বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে সৃষ্টিকর্তার সব সৃষ্টিকে ভালোবাসার। শুধু কুকুর ও বিড়াল নয়, প্রত্যেক প্রাণীর একটা অদ্ভুত অনুভূতি রয়েছে যা ওদেরকে ভালো না বাসলে, প্রাণীদের সঙ্গে না মিশলে কারোর উপলব্ধি করার সামর্থ্য নেই। বিশেষ করে প্রাণীরা অথবা বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালগুলো যেন অত্যন্ত অবহেলিত। রাস্তায় মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা হলে আমরা মানুষ যেভাবে এগিয়ে আসি, কিন্তু বেওয়ারিশ প্রাণীগুলোর কিছু হলে দেখার কেউ থাকে না, ধুকে ধুকে নির্মমভাবে মারা যায় যা অত্যন্ত অমানবিক। একটু সেবা, আদর ভালোবাসা পেলে এরাও সুস্থ হতে পারে, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। প্রাণীরা বেশ আদর প্রিয় এবং মনিব ভক্ত হয়, কৃতজ্ঞতা বোধ রয়েছে তাদের মধ্যে। এসব বিবেচনা করলে ভালোবাসার দায় এড়িয়ে যাওয়া সত্যি কঠিন।

কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীদের সঙ্গে যারা নৃশংস আচরণ করছে তাদের প্রতি কী আহ্বান জানাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাণীদেরও আপনার আমার মতো জীবন রয়েছে, অনুভূতি শক্তি রয়েছে, তাদেরও ইমোশন কাজ করে। আমাদের মতো তারাও পরিবার তৈরি করে। মানুষের মতো প্রাণীদের বাচ্চারাও তাদের মায়ের পরম ভালোবাসা নিয়ে বড় হয়। এরাও ব্যথা পায় আঘাত পেলে কিন্তু আপনার আমার মতো প্রকাশ করেন পারে না, নীরবে কাঁদে সবার চক্ষুর আড়ালে। আহ্বান জানাই, দয়া করে এদের মারবেন না, বেওয়ারিশ প্রাণীগুলোকে ভালোবেসে দেখুন তারা আপনাকে দশগুণ ভালোবাসা ফেরত দেবে। নিশ্চই সৃষ্টিকর্তা ভালোবাসার প্রতিদান দেবেন।

পশু-পাখিদের নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে শেখ সাগর বলেন, অবশ্যই বড় পরিসরে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি। গার্ডিয়ান অব পোস অ্যান্ড ক্লোস জিপিসির পরিকল্পনা রয়েছে। খুলনায় একদিন বড় পরিসরে প্রাণীদের সেবা করার লক্ষ্যে একটি ক্লিনিক চালু করা। যেখানে শুধু পথ প্রাণী বা বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিবন্ধী, পঙ্গু প্রাণীদের বিশেষ করে যে প্রাণীরা সাহায্য ছাড়া খেতে পারে না, চলতে পারে না, যাদের সাহায্য ছাড়া বাঁচানো যাবে না, তাদের জন্য একটা স্থায়ী ও নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে একটা শেল্টার তৈরি করা। যেখানে কুকুর ও বিড়ালের নিরাপদ এবং সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা থাকবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেওয়ারিশ কুকুরের সেবা করেই জীবন কাটে সাহিত্য আকনের

আপডেট সময় ১২:৪৩:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৩

খুলনা: খুলনার একজন কলেজ ছাত্র সাহিত্য আকন (২৪)। তিনি ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজের (বিবিএস) ছাত্র হলেও পশুর প্রতি তার রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা।

পশুর সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়ে ২০২১ সালে রাজশাহী ভেটেরিনারি ইনস্টিটিউট থেকে সার্টিফিকেট-ইন-এনিমেল হেলথ্ অ্যান্ড প্রোডাকশন বিষয়ে এক বছরের কোর্স করেছেন।

তার জীবনের একটি পরম লক্ষ্য হচ্ছে পথের কুকুর-বিড়ালের চিকিৎসা করা। যে মমতা তারা পায় না, যে কুকুরের কেউ চায় না, সেই সব কুকুরদের পরম যত্নে সেবা দেন তিনি।

গার্ডিয়ান অব পোস অ্যান্ড ক্লোজ (জিপিসি) নামের একটি সংগঠন করেছেন সাহিত্য আকন। এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক তিনি। খুলনার খালিশপুরের আলমনগর পোড়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা তিনি। অনেক সময় রাস্তার বেওয়ারিশ প্রাণীগুলোকে রোগ-বালাইসহ নানা দুর্ঘটনার যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাতে দেখে ব্যথিত হয়ে তাদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন সাহিত্য আকন।

প্রাণী সেবা কবে থেকে শুরু করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাহিত্য আকন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বন্ধু শেখ সাগরকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়াল নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রায় আনুমানিক ৩-৪ হাজার আহত ও অবহেলিত প্রাণীর সেবা দিয়েছি। আমার পরবর্তী উদ্দেশ্য যতখানি সম্ভব প্রাণীর চিকিৎসা করে যাওয়া। কুকুর ও বিড়াল হোন বা রাস্তার অসহায় যেকোনো প্রাণীকে আমরা চেষ্টা করি সেবাটা দেওয়ার জন্য। এমনও কেউ আছেন যাদের কেউ নেই বাসার কুকুরটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার এজন্য আমরা চেষ্টা করি সব জায়গায় ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। আমার পরিবারে অনেক আগে থেকেই কুকুর ও বিড়াল পালন করা হয়। এরা যখন অসুস্থ হয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এছাড়া রাস্তার কুকুর ও বিড়াল অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। তাই পরিবারের পরামর্শ নিয়ে প্রাণীদের রাস্তায় চিকিৎসা শুরু করি। এরপর থেকে আস্তে আস্তে পুরো খুলনায় অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসা করা শুরু করি।

প্রাণী সেবায় আপনার টিমে কত জন সদস্য কাজ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালদের সহায়তায়  তৈরি করেছি ‘গার্ডিয়ান অব পোস অ্যান্ড ক্লোজ (জিপিসি)’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তরুণ প্রজন্মের ৩০ জনের বেশি মিলে তৈরি করেছি সংগঠনটি। আমরা চেষ্টা করবো গ্রুপটি বাড়ানোর জন্য। এসব স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুকুর ও বিড়ালদের সেবা করেন। প্রাণীর সেবা দেওয়া, খাবার দেওয়া, চিকিৎসা করাসহ সার্বিক দেখাশোনা করা তাদের কাজ। কুকুরের বিষয়ে যেকোনো পরামর্শ পাওয়া যায় আমাদের কাছে। চেষ্টা করি সাধ্যমতো সাহায্য করার।

আপনাদের প্রত্যাশা কী এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাণীপ্রেমী সাহিত্য আকন বলেন, খুলনায় কুকুর-বিড়ালের জন্য স্থায়ী কোন শেল্টার নেই। আমরা চেষ্টা করবো ২-১ বছরের মধ্যে এদের জন্য শেল্টার করার। সে ক্ষেত্রে সরকার সহযোগিতা করতে পারে। বা আমরা চেষ্টা করছি কোনোভাবে শেল্টার করার। শেল্টার না থাকায় অসহায় কুকুরের রাস্তায় চিকিৎসা করতে হচ্ছে। কুকুর আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। মানুষ যেখানে অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে ওরাও সেখানে বাঁচতে পারবে। মানুষ ওদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমরা চায় না। আবার ওরা মানুষের দ্বারা আঘাত প্রান্ত হোক তাও চায় না।

তিনি আরও বলেন, অসহায় প্রাণী প্রায় সব জায়গায় থাকে। আমরা প্রথমে দেখে আসি কোনো একটি কুকুর-বিড়াল অসুস্থ পরে আছে। পরে তার ড্রেসিং করা, খাবার সংগ্রহ করে মুখে খাওয়ানো, ইনজেকশন ম্যানেজ করা এসব কাজ ভলেনটিয়াররা করে থাকে। এছাড়া তারা কুকুর ও বিড়াল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে থাকেন। অনেক সময় পঙ্গু কুকুর থাকে খুলনায় যাদের রেখে চিকিৎসা করার মতো কোনো জায়গা নেই। আমাদের জানানো হলে আমরা যেকোনো উপায়ে নিশ্চিত করে থাকি প্রাণীটির চিকিৎসা করা।

সাহিত্য আকনের বন্ধু ও জিডিসির অ্যাডমিন শেখ সাগর বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে সৃষ্টিকর্তার সব সৃষ্টিকে ভালোবাসার। শুধু কুকুর ও বিড়াল নয়, প্রত্যেক প্রাণীর একটা অদ্ভুত অনুভূতি রয়েছে যা ওদেরকে ভালো না বাসলে, প্রাণীদের সঙ্গে না মিশলে কারোর উপলব্ধি করার সামর্থ্য নেই। বিশেষ করে প্রাণীরা অথবা বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালগুলো যেন অত্যন্ত অবহেলিত। রাস্তায় মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা হলে আমরা মানুষ যেভাবে এগিয়ে আসি, কিন্তু বেওয়ারিশ প্রাণীগুলোর কিছু হলে দেখার কেউ থাকে না, ধুকে ধুকে নির্মমভাবে মারা যায় যা অত্যন্ত অমানবিক। একটু সেবা, আদর ভালোবাসা পেলে এরাও সুস্থ হতে পারে, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। প্রাণীরা বেশ আদর প্রিয় এবং মনিব ভক্ত হয়, কৃতজ্ঞতা বোধ রয়েছে তাদের মধ্যে। এসব বিবেচনা করলে ভালোবাসার দায় এড়িয়ে যাওয়া সত্যি কঠিন।

কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীদের সঙ্গে যারা নৃশংস আচরণ করছে তাদের প্রতি কী আহ্বান জানাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাণীদেরও আপনার আমার মতো জীবন রয়েছে, অনুভূতি শক্তি রয়েছে, তাদেরও ইমোশন কাজ করে। আমাদের মতো তারাও পরিবার তৈরি করে। মানুষের মতো প্রাণীদের বাচ্চারাও তাদের মায়ের পরম ভালোবাসা নিয়ে বড় হয়। এরাও ব্যথা পায় আঘাত পেলে কিন্তু আপনার আমার মতো প্রকাশ করেন পারে না, নীরবে কাঁদে সবার চক্ষুর আড়ালে। আহ্বান জানাই, দয়া করে এদের মারবেন না, বেওয়ারিশ প্রাণীগুলোকে ভালোবেসে দেখুন তারা আপনাকে দশগুণ ভালোবাসা ফেরত দেবে। নিশ্চই সৃষ্টিকর্তা ভালোবাসার প্রতিদান দেবেন।

পশু-পাখিদের নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে শেখ সাগর বলেন, অবশ্যই বড় পরিসরে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি। গার্ডিয়ান অব পোস অ্যান্ড ক্লোস জিপিসির পরিকল্পনা রয়েছে। খুলনায় একদিন বড় পরিসরে প্রাণীদের সেবা করার লক্ষ্যে একটি ক্লিনিক চালু করা। যেখানে শুধু পথ প্রাণী বা বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিবন্ধী, পঙ্গু প্রাণীদের বিশেষ করে যে প্রাণীরা সাহায্য ছাড়া খেতে পারে না, চলতে পারে না, যাদের সাহায্য ছাড়া বাঁচানো যাবে না, তাদের জন্য একটা স্থায়ী ও নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে একটা শেল্টার তৈরি করা। যেখানে কুকুর ও বিড়ালের নিরাপদ এবং সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা থাকবে।