ঢাকা ০৫:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিকরগাছায় দরিদ্রতাকে জয় করে জিপিএ ৫ পেয়েছে যমজ দুই বোন হীরা-মুক্তা

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় যমজ দুই বোন অবন্তি মেহের মুক্তা এবং তাসনিয়া ফারিন হীরা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়ে অবস্থিত ঝিকরগাছার ঐতিহ্য বাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুল (বিএম) থেকে বিজ্ঞান বিভাগে তারা দুজনেই জিপিএ ৫ পায়। নিজেদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টায় শত বাধা পেরিয়ে দারিদ্রতাকে জয় করে এসএসসিতে তাদের এ অর্জিত সাফল্যে নিজের পরিবার ও এলাকায় বইছে আনন্দের জোয়ার।

হীরা-মুক্তা ঝিকরগাছা পৌরসভার কৃষ্ণনগর গ্রামের মন্ত্রীপাড়ার মনজুরুল ফয়েজ ও হাফিজা বেগম দম্পতির সন্তান। তাদের বাবা প্রতিবন্ধী, মা কাপড় সেলাই করে সংসারের খরচ বহন করেন।

বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, দরিদ্রতার সাথে বেড়ে ওঠা মুক্তা ও হীরার এমন সাফল্যে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তাদের দুই বোনের আচার-আচরণ, কথাবার্তা, চলাফেরা, ক্লাসে বসা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সবকিছু একই১ রকম। তাদের সবকিছুতে রয়েছে অদ্ভুত মিল। তারা দুজনই আমাদের স্কুলের গর্ব। দোয়া করি তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হোক।

তাদের মা হাফিজা বেগম বলেন, আমাদের সংসারে তিনটি মেয়ে, তারা আমার সংসারকে আলোকিত করে রেখেছে। আমার স্বামী একসময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেখানে বেতন না থাকায় তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। তারপর থেকে সে কোন কাজ না পেয়ে এখন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আমি ঘরে বসে দর্জির কাজ করে আমার মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। কখনও অর্ধাহারে কখনও অনাহারে আমার মেয়েরা মানুষ হওয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আমার হিরা ও মুক্তা ভালো ফলাফল করেছে। আর বড় মেয়ে সুরাইয়া আক্তার তন্নী যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে এমএ শেষ বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেবে। ভালো ফলাফল করলেও হীরা-মুক্তার কলেজে ভর্তি নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।

অবন্তি মেহের মুক্তা বলেন, আমার মা আমাকে ডাক্তার হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু আমার এ আশা বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতো। আদৌ পড়াশোনা করতে পারব কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

তাসনিয়া ফারিন হীরা জনান, আমার সপ্ন আমি একজন আইনজীবী হবো। যশোর সরকারি এম এম কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে; দেখা যাক মহান আল্লাহ পাকই এখন একমাত্র ভরসা। তারা দুই বোন আরও জানান, বিএম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদসহ স্কুলের সকল শিক্ষকের সহযোগিতা এবং আমার মায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা ভালো রেজাল্ট করতে সাহায্য করেছে।

সমাজের বিত্তবানরা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে হয়তো তাদের জমজ দুই বোনের সপ্ন পুরন হবে,  তা না হলে হয়তো তাদের সপ্ন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমাদের সবারই উচিৎ অসহায় মানুষকে সাহায্য করা। তাহলে সমাজ থেকে হিংসা বিদ্বেষ বিদায় নিবে, আমরা পাবো একটি সুন্দর সোনার বাংলাদেশ।
Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝিকরগাছায় দরিদ্রতাকে জয় করে জিপিএ ৫ পেয়েছে যমজ দুই বোন হীরা-মুক্তা

আপডেট সময় ০২:৩৮:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০২৩

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় যমজ দুই বোন অবন্তি মেহের মুক্তা এবং তাসনিয়া ফারিন হীরা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়ে অবস্থিত ঝিকরগাছার ঐতিহ্য বাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুল (বিএম) থেকে বিজ্ঞান বিভাগে তারা দুজনেই জিপিএ ৫ পায়। নিজেদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টায় শত বাধা পেরিয়ে দারিদ্রতাকে জয় করে এসএসসিতে তাদের এ অর্জিত সাফল্যে নিজের পরিবার ও এলাকায় বইছে আনন্দের জোয়ার।

হীরা-মুক্তা ঝিকরগাছা পৌরসভার কৃষ্ণনগর গ্রামের মন্ত্রীপাড়ার মনজুরুল ফয়েজ ও হাফিজা বেগম দম্পতির সন্তান। তাদের বাবা প্রতিবন্ধী, মা কাপড় সেলাই করে সংসারের খরচ বহন করেন।

বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, দরিদ্রতার সাথে বেড়ে ওঠা মুক্তা ও হীরার এমন সাফল্যে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তাদের দুই বোনের আচার-আচরণ, কথাবার্তা, চলাফেরা, ক্লাসে বসা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সবকিছু একই১ রকম। তাদের সবকিছুতে রয়েছে অদ্ভুত মিল। তারা দুজনই আমাদের স্কুলের গর্ব। দোয়া করি তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হোক।

তাদের মা হাফিজা বেগম বলেন, আমাদের সংসারে তিনটি মেয়ে, তারা আমার সংসারকে আলোকিত করে রেখেছে। আমার স্বামী একসময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেখানে বেতন না থাকায় তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। তারপর থেকে সে কোন কাজ না পেয়ে এখন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আমি ঘরে বসে দর্জির কাজ করে আমার মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। কখনও অর্ধাহারে কখনও অনাহারে আমার মেয়েরা মানুষ হওয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আমার হিরা ও মুক্তা ভালো ফলাফল করেছে। আর বড় মেয়ে সুরাইয়া আক্তার তন্নী যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে এমএ শেষ বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেবে। ভালো ফলাফল করলেও হীরা-মুক্তার কলেজে ভর্তি নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।

অবন্তি মেহের মুক্তা বলেন, আমার মা আমাকে ডাক্তার হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু আমার এ আশা বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতো। আদৌ পড়াশোনা করতে পারব কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

তাসনিয়া ফারিন হীরা জনান, আমার সপ্ন আমি একজন আইনজীবী হবো। যশোর সরকারি এম এম কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে; দেখা যাক মহান আল্লাহ পাকই এখন একমাত্র ভরসা। তারা দুই বোন আরও জানান, বিএম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদসহ স্কুলের সকল শিক্ষকের সহযোগিতা এবং আমার মায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা ভালো রেজাল্ট করতে সাহায্য করেছে।

সমাজের বিত্তবানরা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে হয়তো তাদের জমজ দুই বোনের সপ্ন পুরন হবে,  তা না হলে হয়তো তাদের সপ্ন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমাদের সবারই উচিৎ অসহায় মানুষকে সাহায্য করা। তাহলে সমাজ থেকে হিংসা বিদ্বেষ বিদায় নিবে, আমরা পাবো একটি সুন্দর সোনার বাংলাদেশ।