ঢাকা ০৩:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগে তৃনমুলের প্রত্যাশীত প্রার্থীগণের তালিকা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার শেষ নেই। এ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সরকার বিরোধী দলগুলোর অভিযোগের অন্ত:নেই। তা সত্বেও থেমে নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোনয়ন প্রাপ্তির লবিং-তদবির। প্রতিটি নির্বাচন আসলেই এ দলের মধ্যে শুরু হয় মনোয়ন প্রাপ্তির জোর লড়াই ও তদবির। কেউ হয়ে ওঠেন ‘বড় আপা’ কেউ বা আবার ‘ছোট আপা’র ‘মাইম্যান’! এমন অবস্থায় যেমন আওয়ামী লীগকে পড়তে হয় নানা জটিলতায়, তেমনি বিভ্রান্ত হতে হয় তৃণমূল নেতাকর্মদের। এমনকি শুরু হয়ে যায় দলের মধ্যে বিদ্রোহ। বিদ্রোহীদের থামাতে গিয়ে চলে আসে বহিষ্কারাদেশ। যেমনটা ঘটে গেছে স্থানীয় সব কটি নির্বাচনে। সিলেট বিভাগের আওয়ামী নেতাদের মধ্যে এ প্রবনতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এ ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সিলেট ভিাগের সবকটি সংসদীয় আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় এখন থেকে পরিস্ফিুটিত হয়ে ওঠেছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট ১ আসন বহুল প্রত্যাশিত ও আলোচিত। কথিত আছে এ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে, সে দলই প্রতিবার দেশের মসনদে যায় এবং সরকার গঠন করে। বহুল প্রচলিত এ কথা কতটুকু সত্যি, সেটি নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এই গুরুত্ব পূর্ণ আসনে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিএনপির প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির।

সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের একক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও বিএনপির তাহসিনা লুনা, গণফোরামের মোকাব্বির খান। তবে বর্তমান এমপির উপর মানুষের আস্তা নেই।

সিলেট-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। আসনটির তিনবারের এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি গত উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানার আশির্বাদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন! নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এবারও মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেকজন হলেন ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। দেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। বর্তমান সরকারের আমলে চিকিৎসাক্ষেত্র ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে তাঁর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাঁর কর্মকে মূল্যায়ণ করেন। সরকারি চাকরির সুবাদে নির্বাচনে অংশ নেননি অতীতে এখন নির্বাচন করতে তাঁর আর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। হাইকমান্ডের সুনজরে থাকা ডা. দুলাল মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে তাঁকে দেখা যেতে পারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে! সেই স্বপ্নও দেখছেন সিলেট-৩ আসনের সচেতন ভোটাররা।

আরেকজন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ.স.ম মিসবাহ। এমপি হাবিবের মতো তিনিও রয়েছেন শেখ রেহানার সুনজরে। সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় কাজ করছেন। তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। তবে মনোনয়ন চাওয়া পাওয়ার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু স্ট্যাটাসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি! প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গ্রিন সিগনাল পেয়েছেন-এমন অসংখ্য স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেছেন মিসবাহ।

সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক বারের এমপি ও মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বর্তমানে এই আসনে পরিবর্তন আসতে পারে এমনটাই ধারণা তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তাই ৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান গোলাপ মিয়া। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় কাজ করছেন গোলাপ মিয়া। বিএনপির একমাত্র প্রার্থী আব্দুল হাকিম চৌধুরী বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেননি। দলের নির্দেশনাকে সম্মান জানিয়ে নির্বাচন থেকে তিনি সরে দাঁড়ান।

সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হাফিজ আহমেদ মজুমদার। তিনি ২০১৮ সালের এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।হাফিজ আহমেদ মজুমদার একজন শিক্ষাবিদ। বার্ধক্য জনিত কারণে যদি তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে সে খানে নতুন মুখ আসতে পারে।

সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মাঠে এমপি নাহিদের অবস্থা খুবই নাজুক। তবে মাঠে রয়েছেন কানাডা আওয়ামীলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন তিনিও মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় কাজ করছেন। বিএনপিতে ত্রিভুজ লড়াই রয়েছে এখনও কেউ এগিয়ে নেই।

সুনামগঞ্জ-১- আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে বর্তমান এমপি রতন নবম,দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আ:লীগের প্রার্থী হিসাবে ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এমপি রতন মনোনয়ন পাবেন। তৃনমুল আ.লীগের প্রত্যাশা তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় ৪৪টি আ.লীগের অফিস করে দিয়েছেন। এবং তৃণমূল আ.লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করেছেন। এলকার সকল সেক্টরে উন্নয়ন করার জন্য চেষ্টা করেছেন। এবং তিনি প্রতিটি গ্রাম,সহ প্রত্যেক নেতাকর্মীদেরকে উনি বাইনেমে চিনেন।এই কারনেই তৃনমুলেরও প্রত্যাশা তিনি আগামীতেও মনোনয়ন পাবেন।এবং একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি নির্বাচিত হলে উন্নয়নের দ্বারাকে অব্যাহত রাখতে হাওরবাসীর জন্য মন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা উপহার দিবেন।

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামীলীগের দূর্দিনের কান্ডারী বারবার নির্বাচিত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর থেকেই উনার সহধর্মিণী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তিনি বার্ধক্যজনিত কারনে নির্বাচনী এলাকায় অনুপস্থিত থাকেন।তাই উনাকে বাদ দিয়ে নতুন মুখ আসতে পারে। তবে উনার বড় ছেলে সওমেনগুপ্তও আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। আওয়ামীলীগ থেকে মাঠে আল-আমীন চৌধুরী ও বেরিষ্টার ডালটন সহ একাধিক নেতাই মনোনয়নের প্রত্যাশায় উৎসাহিত হয়ে মাঠে বিচরণ করছেন। বিএনপিতে সাবেক সংসদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী সহ আরো অনেকেই এই আসনে লড়বেন বলে জানা গেছে।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। কেন্দ্রীয় একাদিক সূত্রে জানা যায়, তিনি আবারও দলের মনোনয়ন পাবেন। তবে এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আজিজুস সামাদ ডন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। জমিয়তের সাবেক এমপি শাহিনুর পাশা চৌধুরী সহ অনেক নতুন নতুন প্রার্থী।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এনামুল কবীর ইমনসহ একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন মনোনয়নের আশায়। তবে এ আসনে জাপার প্রার্থী পীর ফজলুর রহমান তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মহিবুর রহমান মানিক। তিনি এ আসনের বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তবে মাঠে শামিম চৌধুরী সহ অনেকেই রয়েছেন নৌকার মনোনয়ন চাইবেন বলে। তবে নৌকায় এ আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে এমনটাই ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীদের। বিএনপি থেকে কলিম উদ্দীন মিলন ও মিজানুর রহমান মাঠে রয়েছেন।

হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী) একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হন। তবে এ আসনে ড. রেজা কিবরিয়া প্রর্থী হচ্ছেন। তাই এই আসনে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের অবস্তান সমানই বলা যায়।

হবিগঞ্জ-২ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ বর্তমান সংসদ সদস্য এড. মোঃ আব্দুল মজিদ খান। এলাকায় তার কোন তোলনাই নেই। তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন এগিয়ে রয়েছেন।

হবিগঞ্জ-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ২০০১ থেকে চারবার এই আসনে জয়ী হয়েছে নৌকা। বর্তমান এমপি আবু জাহিরের বিকল্প নেই। এই আসনে আরও মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা এমপি আবু জাহিরের বিকল্প নেই। তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়াতে মানুষজন তাকে আবারও এমপি হিসাবে দেখতে চায়। নৌকার মনোনয়ন পাবেন এমপি আবু জাহির।

হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে ২০১৪-১৮ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ক্লিন ইমেজের এ রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত মাওলানা আসাদ আলীর ছেলে অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তবে এবার এ আসন থেকে আরও অনেক নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরমধ্যে চমক দেখাতে পারেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

মৌলভীবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের বর্মতমান এমপি রয়েছেন শাহাবউদ্দীন। তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনও এই আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়নে লড়াইটা হবে মূলত প্রবীণ-নবীনের। তবে বর্তমান এসপি শাহাবুদ্দিন এর উপর তৃনমুল আওয়ামী লীগ ও স্হানীয়রা এখনো আস্থা হারাননি। এছাড়া এই আসনে বিএনপির দারাদ আহমদও নির্বাচন করবেন।

মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম, জাপার নবাব আলী আব্বাস, গণফোরামের সুলতান মনসুর, এম এম শাহীন, নবাব আলী ওয়ালিদে জনপ্রিয়।

মৌলভীবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ ও সায়রা মহসিন, মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ।

মৌলভীবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুস শহীদ। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল দ্বারিকা পাল মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক। এদিকে বিএনপির মুজিবুর রহমানও নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগে তৃনমুলের প্রত্যাশীত প্রার্থীগণের তালিকা

আপডেট সময় ০৬:০২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার শেষ নেই। এ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সরকার বিরোধী দলগুলোর অভিযোগের অন্ত:নেই। তা সত্বেও থেমে নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোনয়ন প্রাপ্তির লবিং-তদবির। প্রতিটি নির্বাচন আসলেই এ দলের মধ্যে শুরু হয় মনোয়ন প্রাপ্তির জোর লড়াই ও তদবির। কেউ হয়ে ওঠেন ‘বড় আপা’ কেউ বা আবার ‘ছোট আপা’র ‘মাইম্যান’! এমন অবস্থায় যেমন আওয়ামী লীগকে পড়তে হয় নানা জটিলতায়, তেমনি বিভ্রান্ত হতে হয় তৃণমূল নেতাকর্মদের। এমনকি শুরু হয়ে যায় দলের মধ্যে বিদ্রোহ। বিদ্রোহীদের থামাতে গিয়ে চলে আসে বহিষ্কারাদেশ। যেমনটা ঘটে গেছে স্থানীয় সব কটি নির্বাচনে। সিলেট বিভাগের আওয়ামী নেতাদের মধ্যে এ প্রবনতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এ ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সিলেট ভিাগের সবকটি সংসদীয় আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় এখন থেকে পরিস্ফিুটিত হয়ে ওঠেছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট ১ আসন বহুল প্রত্যাশিত ও আলোচিত। কথিত আছে এ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে, সে দলই প্রতিবার দেশের মসনদে যায় এবং সরকার গঠন করে। বহুল প্রচলিত এ কথা কতটুকু সত্যি, সেটি নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এই গুরুত্ব পূর্ণ আসনে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিএনপির প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির।

সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের একক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও বিএনপির তাহসিনা লুনা, গণফোরামের মোকাব্বির খান। তবে বর্তমান এমপির উপর মানুষের আস্তা নেই।

সিলেট-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। আসনটির তিনবারের এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি গত উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানার আশির্বাদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন! নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এবারও মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেকজন হলেন ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। দেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। বর্তমান সরকারের আমলে চিকিৎসাক্ষেত্র ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে তাঁর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাঁর কর্মকে মূল্যায়ণ করেন। সরকারি চাকরির সুবাদে নির্বাচনে অংশ নেননি অতীতে এখন নির্বাচন করতে তাঁর আর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। হাইকমান্ডের সুনজরে থাকা ডা. দুলাল মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে তাঁকে দেখা যেতে পারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে! সেই স্বপ্নও দেখছেন সিলেট-৩ আসনের সচেতন ভোটাররা।

আরেকজন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ.স.ম মিসবাহ। এমপি হাবিবের মতো তিনিও রয়েছেন শেখ রেহানার সুনজরে। সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় কাজ করছেন। তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। তবে মনোনয়ন চাওয়া পাওয়ার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু স্ট্যাটাসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন তিনি! প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গ্রিন সিগনাল পেয়েছেন-এমন অসংখ্য স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেছেন মিসবাহ।

সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক বারের এমপি ও মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বর্তমানে এই আসনে পরিবর্তন আসতে পারে এমনটাই ধারণা তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তাই ৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান গোলাপ মিয়া। তিনি চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় কাজ করছেন গোলাপ মিয়া। বিএনপির একমাত্র প্রার্থী আব্দুল হাকিম চৌধুরী বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেননি। দলের নির্দেশনাকে সম্মান জানিয়ে নির্বাচন থেকে তিনি সরে দাঁড়ান।

সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হাফিজ আহমেদ মজুমদার। তিনি ২০১৮ সালের এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।হাফিজ আহমেদ মজুমদার একজন শিক্ষাবিদ। বার্ধক্য জনিত কারণে যদি তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে সে খানে নতুন মুখ আসতে পারে।

সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মাঠে এমপি নাহিদের অবস্থা খুবই নাজুক। তবে মাঠে রয়েছেন কানাডা আওয়ামীলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন তিনিও মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় কাজ করছেন। বিএনপিতে ত্রিভুজ লড়াই রয়েছে এখনও কেউ এগিয়ে নেই।

সুনামগঞ্জ-১- আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে বর্তমান এমপি রতন নবম,দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আ:লীগের প্রার্থী হিসাবে ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এমপি রতন মনোনয়ন পাবেন। তৃনমুল আ.লীগের প্রত্যাশা তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় ৪৪টি আ.লীগের অফিস করে দিয়েছেন। এবং তৃণমূল আ.লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করেছেন। এলকার সকল সেক্টরে উন্নয়ন করার জন্য চেষ্টা করেছেন। এবং তিনি প্রতিটি গ্রাম,সহ প্রত্যেক নেতাকর্মীদেরকে উনি বাইনেমে চিনেন।এই কারনেই তৃনমুলেরও প্রত্যাশা তিনি আগামীতেও মনোনয়ন পাবেন।এবং একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি নির্বাচিত হলে উন্নয়নের দ্বারাকে অব্যাহত রাখতে হাওরবাসীর জন্য মন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা উপহার দিবেন।

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামীলীগের দূর্দিনের কান্ডারী বারবার নির্বাচিত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর থেকেই উনার সহধর্মিণী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তিনি বার্ধক্যজনিত কারনে নির্বাচনী এলাকায় অনুপস্থিত থাকেন।তাই উনাকে বাদ দিয়ে নতুন মুখ আসতে পারে। তবে উনার বড় ছেলে সওমেনগুপ্তও আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। আওয়ামীলীগ থেকে মাঠে আল-আমীন চৌধুরী ও বেরিষ্টার ডালটন সহ একাধিক নেতাই মনোনয়নের প্রত্যাশায় উৎসাহিত হয়ে মাঠে বিচরণ করছেন। বিএনপিতে সাবেক সংসদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী সহ আরো অনেকেই এই আসনে লড়বেন বলে জানা গেছে।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। কেন্দ্রীয় একাদিক সূত্রে জানা যায়, তিনি আবারও দলের মনোনয়ন পাবেন। তবে এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আজিজুস সামাদ ডন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। জমিয়তের সাবেক এমপি শাহিনুর পাশা চৌধুরী সহ অনেক নতুন নতুন প্রার্থী।

সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এনামুল কবীর ইমনসহ একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন মনোনয়নের আশায়। তবে এ আসনে জাপার প্রার্থী পীর ফজলুর রহমান তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মহিবুর রহমান মানিক। তিনি এ আসনের বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তবে মাঠে শামিম চৌধুরী সহ অনেকেই রয়েছেন নৌকার মনোনয়ন চাইবেন বলে। তবে নৌকায় এ আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে এমনটাই ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীদের। বিএনপি থেকে কলিম উদ্দীন মিলন ও মিজানুর রহমান মাঠে রয়েছেন।

হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী) একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিজয়ী হন। তবে এ আসনে ড. রেজা কিবরিয়া প্রর্থী হচ্ছেন। তাই এই আসনে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের অবস্তান সমানই বলা যায়।

হবিগঞ্জ-২ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ বর্তমান সংসদ সদস্য এড. মোঃ আব্দুল মজিদ খান। এলাকায় তার কোন তোলনাই নেই। তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন এগিয়ে রয়েছেন।

হবিগঞ্জ-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ২০০১ থেকে চারবার এই আসনে জয়ী হয়েছে নৌকা। বর্তমান এমপি আবু জাহিরের বিকল্প নেই। এই আসনে আরও মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা এমপি আবু জাহিরের বিকল্প নেই। তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়াতে মানুষজন তাকে আবারও এমপি হিসাবে দেখতে চায়। নৌকার মনোনয়ন পাবেন এমপি আবু জাহির।

হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে ২০১৪-১৮ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ক্লিন ইমেজের এ রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত মাওলানা আসাদ আলীর ছেলে অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তবে এবার এ আসন থেকে আরও অনেক নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরমধ্যে চমক দেখাতে পারেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

মৌলভীবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের বর্মতমান এমপি রয়েছেন শাহাবউদ্দীন। তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনও এই আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়নে লড়াইটা হবে মূলত প্রবীণ-নবীনের। তবে বর্তমান এসপি শাহাবুদ্দিন এর উপর তৃনমুল আওয়ামী লীগ ও স্হানীয়রা এখনো আস্থা হারাননি। এছাড়া এই আসনে বিএনপির দারাদ আহমদও নির্বাচন করবেন।

মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম, জাপার নবাব আলী আব্বাস, গণফোরামের সুলতান মনসুর, এম এম শাহীন, নবাব আলী ওয়ালিদে জনপ্রিয়।

মৌলভীবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ ও সায়রা মহসিন, মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ।

মৌলভীবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুস শহীদ। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল দ্বারিকা পাল মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক। এদিকে বিএনপির মুজিবুর রহমানও নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।