ঢাকা ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদক চোরা কারবারীদের নিরাপদ রুট তিস্তার চর

মহামারির মত ছড়িয়ে পড়ছে উত্তরের তিন জেলায়। প্রশাসনের ভয়ে প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। এক বছরে মামলা হয়েছে ৮১১৫ টি।

ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের শেষ প্রান্ত এলাকা তিস্তার চর পেরিয়ে আসছে,ভারতীয় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।বিশেষ করে ভারত থেকে মাদকদ্রব্য আনা-নেওয়ার নিরাপদ রুট হিসেবে এ চরাঞ্চলকে ব্যবহার করছে মাদক কারবারীরা।আর এ কারণে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনকারীর সংখ্যা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী,উত্তরের তিন জেলা কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের সীমান্ত দিয়ে বেশি আসছে মাদকদ্রব্য। গাঁজা,ফেনসিডিল,ইয়াবা, ইনজেকটিং মাদকদ্রব্য সীমান্তবর্তী এসব জেলা থেকে রংপুরসহ সারাদেশে সরবরাহ করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।প্রাইভেট গাড়িসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মাদক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে,এ শক্তিশালী সিন্ডিকেট ফলে তিস্তার চর তৈরি হয়েছে মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়,গত এক বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর,রংপুর রেঞ্জ পুলিশ,মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশ,বিজিবি ও RAB বিভিন্নভাবে অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭১১ পিস ইয়াবা,৩৯ কেজি হিরোইন,৭৭১৮ কেজি গাঁজা,১ লাখ ২৪ হাজার ৬৭০ বোতল ফেনসিডিল,১লাখ ৮৩ হাজার ৯৮পিস টাপেন্ডাডল,৩৭ হাজার ৬০৯অ্যাম্পুল ইনজেকশন ও ১০ গ্রাম আইস।এর মধ্যে কুড়িগ্রাম হয়ে বেশি আসে গাঁজা ও ফেনসিডিল এবং দিনাজপুর লালমনিরহাট দিয়ে আসে ফেনসিডিল ও ইনজেকটিং মাদকদ্রব্য।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইনে মামলা হয়েছে ৮১১৫টি।

ৎরংপুরের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,ইতোমধ্যে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হয়েছে।মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা আমাদের কাছে আছে। আমরা সেটা যাচাই করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করছি।অনেক মাদক ব্যবসায়ী এখনো বাইরে আছে উল্লেখ করে তারা জানান,অভিযানের ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে ব্যবসা করছে।অভিযানে ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ফিরে এসে আবারো তারা জড়িয়ে পড়ছে পুরনো ব্যবসায়।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়,সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্ত পথের ৫৪ কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই।জেলার ১১ টি সীমান্ত পথ দিয়ে অবাধে দেশে আসছে ভারতীয় মাদকদ্রব্য।অর্থের লোভে যুব সমাজের একটি বড় অংশ জড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত অপরাধে।বিজিবির ৩টি ব্যাটালিয়ন ইউনিট কাজ করলেও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদক চোরাচালান সহ সীমান্ত অপরাধ।লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার সীমান্তপথে গড়ে উঠেছে মাদক চোরা চালানের শক্তিশালী সিন্ডিকেট।এই সিন্ডিকেট তিস্তার চর পেরিয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া থেকে নোহালি পর্যন্ত প্রায় ১৯কিলোমিটার তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রংপুরের হারাগাছ,কাউনিয়া,বদরগঞ্জমিঠাপুকুরসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছে।

এসব মাদক সহজলভ্য হওয়ার কারণে মাদক সেবীরা খুব সহজে গ্রহণ করে আসছে। হারাগাছ উপজেলার একজন স্থায়ী বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান,বিকাল হলেই উঠতি বয়সী শতশত ছেলেরা বাইক দাবড়িয়ে ডাইল(ফেনসিডিল)খেতে আসে।তারা কাউকেই কিছু মনে করেনা।অনুরূপ দৃশ্য রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিনিয়ত দেখা যায়।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদক চোরা কারবারীদের নিরাপদ রুট তিস্তার চর

আপডেট সময় ০১:০৫:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩

মহামারির মত ছড়িয়ে পড়ছে উত্তরের তিন জেলায়। প্রশাসনের ভয়ে প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। এক বছরে মামলা হয়েছে ৮১১৫ টি।

ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের শেষ প্রান্ত এলাকা তিস্তার চর পেরিয়ে আসছে,ভারতীয় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।বিশেষ করে ভারত থেকে মাদকদ্রব্য আনা-নেওয়ার নিরাপদ রুট হিসেবে এ চরাঞ্চলকে ব্যবহার করছে মাদক কারবারীরা।আর এ কারণে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনকারীর সংখ্যা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী,উত্তরের তিন জেলা কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের সীমান্ত দিয়ে বেশি আসছে মাদকদ্রব্য। গাঁজা,ফেনসিডিল,ইয়াবা, ইনজেকটিং মাদকদ্রব্য সীমান্তবর্তী এসব জেলা থেকে রংপুরসহ সারাদেশে সরবরাহ করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।প্রাইভেট গাড়িসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মাদক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে,এ শক্তিশালী সিন্ডিকেট ফলে তিস্তার চর তৈরি হয়েছে মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়,গত এক বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর,রংপুর রেঞ্জ পুলিশ,মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশ,বিজিবি ও RAB বিভিন্নভাবে অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭১১ পিস ইয়াবা,৩৯ কেজি হিরোইন,৭৭১৮ কেজি গাঁজা,১ লাখ ২৪ হাজার ৬৭০ বোতল ফেনসিডিল,১লাখ ৮৩ হাজার ৯৮পিস টাপেন্ডাডল,৩৭ হাজার ৬০৯অ্যাম্পুল ইনজেকশন ও ১০ গ্রাম আইস।এর মধ্যে কুড়িগ্রাম হয়ে বেশি আসে গাঁজা ও ফেনসিডিল এবং দিনাজপুর লালমনিরহাট দিয়ে আসে ফেনসিডিল ও ইনজেকটিং মাদকদ্রব্য।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইনে মামলা হয়েছে ৮১১৫টি।

ৎরংপুরের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,ইতোমধ্যে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হয়েছে।মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা আমাদের কাছে আছে। আমরা সেটা যাচাই করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করছি।অনেক মাদক ব্যবসায়ী এখনো বাইরে আছে উল্লেখ করে তারা জানান,অভিযানের ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে ব্যবসা করছে।অভিযানে ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ফিরে এসে আবারো তারা জড়িয়ে পড়ছে পুরনো ব্যবসায়।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়,সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্ত পথের ৫৪ কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই।জেলার ১১ টি সীমান্ত পথ দিয়ে অবাধে দেশে আসছে ভারতীয় মাদকদ্রব্য।অর্থের লোভে যুব সমাজের একটি বড় অংশ জড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত অপরাধে।বিজিবির ৩টি ব্যাটালিয়ন ইউনিট কাজ করলেও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদক চোরাচালান সহ সীমান্ত অপরাধ।লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার সীমান্তপথে গড়ে উঠেছে মাদক চোরা চালানের শক্তিশালী সিন্ডিকেট।এই সিন্ডিকেট তিস্তার চর পেরিয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্ণেয়া থেকে নোহালি পর্যন্ত প্রায় ১৯কিলোমিটার তিস্তা প্রতিরক্ষা ডানতীর বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রংপুরের হারাগাছ,কাউনিয়া,বদরগঞ্জমিঠাপুকুরসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছে।

এসব মাদক সহজলভ্য হওয়ার কারণে মাদক সেবীরা খুব সহজে গ্রহণ করে আসছে। হারাগাছ উপজেলার একজন স্থায়ী বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান,বিকাল হলেই উঠতি বয়সী শতশত ছেলেরা বাইক দাবড়িয়ে ডাইল(ফেনসিডিল)খেতে আসে।তারা কাউকেই কিছু মনে করেনা।অনুরূপ দৃশ্য রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিনিয়ত দেখা যায়।