ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

দেশে অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা আনিছসহ পাঁচজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত এ চক্রের অন্যতম মূল হোতা টাঙ্গাইল জেলার ফজলুল হকের পুত্র মোঃ আনিছুর রহমান (২৯), পিরোজপুর জেলার মৃত সাইদুর রহমানের পুত্র মোঃ আরিফুল ইসলাম ওরফে রাজিব (৩৩), চাঁদপুর জেলার বিল্লাল হোসেনের পুত্র মোঃ সালাউদ্দিন তুহিন (২৭), একই জেলার আবুল খায়েরের পুত্র মোঃ এনামুল হোসেন পারভেজ (ডোনার) (৩৫) ও একই জেলার মোঃ আনিসুল হকের পুত্র মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩২)।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর মেজর মো: নাভীদ কায়সার ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো: পারভেজ রানাসহ র‌্যাবের অন্যান্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্হিত ছিলেন।

মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকায় গতকাল বুধবার বিকেল ৪ টা থেকে অভিযান শুরু হয়ে দিবাগত রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে। এসময় বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা মোঃ আনিছুর রহমান (২৯)সহ ৫ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব।

তিনি আরো জানান, এসময় তাদের কাছ থেকে ১ টি সিপিইউ, ১ টি হার্ডডিক্স, ১ পাতা ভিকটিম এর সাথে চুক্তির এফিডেভিট ফটোকপি, ১ টি পাসপোর্ট (মুলকপি), ১৪টি পাসপোর্ট এর ফটোকপি, ১২ টি ভিসার ফটোকপি, ১ পাতা ফ্যামিলি ফ্রেম, নগদ ৭ হাজার টাকা, ভারতীয় ৪৮০ রুপী, ৫ পাতা বিভিন্ন ব্যাংকের জমা স্লীপ, ৪ টি বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ৫ পাতা হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিন শর্ট, ২ পাতা অঙ্গীকারনামা, ৩ টি এটিএম কার্ড এবং ৭ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব বলছে, এ চক্রটি বিদেশে অবস্থানরত একএকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাচাতে ৪৫-৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি ক্রয় করেন। এই টাকার মাত্র ৪-৫ লাখ টাকা পায় গরীব প্রতারিত ডোনার। ৫-১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মাঝে।

বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচার সিন্ডিকেট। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দরিদ্র সীমার নীচের অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনও তারা বলে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই, কখনও মিথ্যা আশ্বাস দেয় যে চিকিৎসার খরচ তারা বহণ করবে। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মন্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরে অসহায় মানুষগুলো।

র‌্যাব-১ এর (অধিনায়ক) জানান, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে সর্বহারা হচ্ছে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এহেন কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগত তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা গ্রহন করা হয়েছে।
Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানীতে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

আপডেট সময় ০৩:৪১:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩

দেশে অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা আনিছসহ পাঁচজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত এ চক্রের অন্যতম মূল হোতা টাঙ্গাইল জেলার ফজলুল হকের পুত্র মোঃ আনিছুর রহমান (২৯), পিরোজপুর জেলার মৃত সাইদুর রহমানের পুত্র মোঃ আরিফুল ইসলাম ওরফে রাজিব (৩৩), চাঁদপুর জেলার বিল্লাল হোসেনের পুত্র মোঃ সালাউদ্দিন তুহিন (২৭), একই জেলার আবুল খায়েরের পুত্র মোঃ এনামুল হোসেন পারভেজ (ডোনার) (৩৫) ও একই জেলার মোঃ আনিসুল হকের পুত্র মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩২)।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর মেজর মো: নাভীদ কায়সার ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো: পারভেজ রানাসহ র‌্যাবের অন্যান্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্হিত ছিলেন।

মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকায় গতকাল বুধবার বিকেল ৪ টা থেকে অভিযান শুরু হয়ে দিবাগত রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে। এসময় বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা মোঃ আনিছুর রহমান (২৯)সহ ৫ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব।

তিনি আরো জানান, এসময় তাদের কাছ থেকে ১ টি সিপিইউ, ১ টি হার্ডডিক্স, ১ পাতা ভিকটিম এর সাথে চুক্তির এফিডেভিট ফটোকপি, ১ টি পাসপোর্ট (মুলকপি), ১৪টি পাসপোর্ট এর ফটোকপি, ১২ টি ভিসার ফটোকপি, ১ পাতা ফ্যামিলি ফ্রেম, নগদ ৭ হাজার টাকা, ভারতীয় ৪৮০ রুপী, ৫ পাতা বিভিন্ন ব্যাংকের জমা স্লীপ, ৪ টি বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ৫ পাতা হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিন শর্ট, ২ পাতা অঙ্গীকারনামা, ৩ টি এটিএম কার্ড এবং ৭ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব বলছে, এ চক্রটি বিদেশে অবস্থানরত একএকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাচাতে ৪৫-৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি ক্রয় করেন। এই টাকার মাত্র ৪-৫ লাখ টাকা পায় গরীব প্রতারিত ডোনার। ৫-১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মাঝে।

বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচার সিন্ডিকেট। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দরিদ্র সীমার নীচের অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনও তারা বলে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই, কখনও মিথ্যা আশ্বাস দেয় যে চিকিৎসার খরচ তারা বহণ করবে। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মন্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরে অসহায় মানুষগুলো।

র‌্যাব-১ এর (অধিনায়ক) জানান, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সাথে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে সর্বহারা হচ্ছে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের এহেন কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেল ভার্চুয়াল জগত তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা গ্রহন করা হয়েছে।