ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রাঙামাটিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম, বাড়ছে ম্যালেরিয়া

রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির দুর্গম এলাকাগুলোতে দিনদিন ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি বছর বর্ষার শুরু থেকে দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।

জেলা সদরে এ রোগের প্রভাব নেই বললেই চলে। তবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থাকলেও এ জেলায় নেই ডেঙ্গুর প্রকোপ।

রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, গত ১০ দিনে জেলায় ১৯১ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে জুরাছড়ি উপজেলায়ই ৫৩ জন।

জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি উপজেলায় গত ছয় মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭৭৫ জন, বাঘাইছড়িতে ১৮৪, বরকলে ২৩৫ জন, বিলাইছড়িতে ২৪৩, কাপ্তাইয়ে ১২ জন, কাউখালীতে একজন, লংগদুতে ১৮ জন, নানিয়ারচরে একজন, রাজস্থলীতে ৩০ জন এবং জেলা সদরে সাতজন।

এসব উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পুরো জেলায় গত ছয় মাসে সর্বমোট ১৫২১ জন ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালে পুরো জেলায় ৩২১৯ জন ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা জুরাছড়িতে ১২১২ জন আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা বিলাইছড়িতে ৬০৬ জন, বাঘাইছড়িতে ৭০৮ জন, বরকলে ৩৫৮ জন এবং রাজস্থলী উপজেলায় ১৪৪ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল।

এছাড়াও ২০২১ সালে জেলায় ১৫৫৪ জন, ২০২০ সালে ১৩৯০ জন এবং ২০১৯ সালে ৬০০৩ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছিল।

এর মধ্যে ২০১৯ সালে জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। ২০২০ এবং ২০২১ সালে জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কম থাকলেও ২০২২ সালে এ রোগের প্রভাব কিছুটা বাড়ে এবং ২০২৩ সালে ম্যালেরিয়া আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে।

সূত্রটি বলছে, ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় পুরো জেলায় তিন লাখ মশারি বিতরণ করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ টিমের পাশাপাশি এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগিতায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া এ উপজেলায় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পুরো জেলায় বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের টিম এবং ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা ম্যালেরিয়া রোগের মোকাবিলায় কাজ করছে।

রাঙামাটি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবর বলেন, আমরা ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ যত্ন নিয়ে সেবা দিয়ে থাকি। রোগীরা অনেকে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, পুরো শহরে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে যাতে এসব রোগের প্রকোপ না বাড়ে।

রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বাংলানিউজকে বলেন, ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিভাগ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন, জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়ন এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেশি। যে কারণে এ রোগের মোকাবিলায় ওই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মশারি বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের টিমের পাশাপাশি ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরাও আমাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মঠবাড়িয়ায় স্কুল ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২

রাঙামাটিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম, বাড়ছে ম্যালেরিয়া

আপডেট সময় ১১:৩৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩

রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির দুর্গম এলাকাগুলোতে দিনদিন ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি বছর বর্ষার শুরু থেকে দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।

জেলা সদরে এ রোগের প্রভাব নেই বললেই চলে। তবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থাকলেও এ জেলায় নেই ডেঙ্গুর প্রকোপ।

রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, গত ১০ দিনে জেলায় ১৯১ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে জুরাছড়ি উপজেলায়ই ৫৩ জন।

জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি উপজেলায় গত ছয় মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭৭৫ জন, বাঘাইছড়িতে ১৮৪, বরকলে ২৩৫ জন, বিলাইছড়িতে ২৪৩, কাপ্তাইয়ে ১২ জন, কাউখালীতে একজন, লংগদুতে ১৮ জন, নানিয়ারচরে একজন, রাজস্থলীতে ৩০ জন এবং জেলা সদরে সাতজন।

এসব উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পুরো জেলায় গত ছয় মাসে সর্বমোট ১৫২১ জন ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালে পুরো জেলায় ৩২১৯ জন ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা জুরাছড়িতে ১২১২ জন আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা বিলাইছড়িতে ৬০৬ জন, বাঘাইছড়িতে ৭০৮ জন, বরকলে ৩৫৮ জন এবং রাজস্থলী উপজেলায় ১৪৪ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল।

এছাড়াও ২০২১ সালে জেলায় ১৫৫৪ জন, ২০২০ সালে ১৩৯০ জন এবং ২০১৯ সালে ৬০০৩ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছিল।

এর মধ্যে ২০১৯ সালে জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। ২০২০ এবং ২০২১ সালে জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কম থাকলেও ২০২২ সালে এ রোগের প্রভাব কিছুটা বাড়ে এবং ২০২৩ সালে ম্যালেরিয়া আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে।

সূত্রটি বলছে, ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় পুরো জেলায় তিন লাখ মশারি বিতরণ করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ টিমের পাশাপাশি এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগিতায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া এ উপজেলায় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পুরো জেলায় বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের টিম এবং ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা ম্যালেরিয়া রোগের মোকাবিলায় কাজ করছে।

রাঙামাটি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবর বলেন, আমরা ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ যত্ন নিয়ে সেবা দিয়ে থাকি। রোগীরা অনেকে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, পুরো শহরে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে যাতে এসব রোগের প্রকোপ না বাড়ে।

রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বাংলানিউজকে বলেন, ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিভাগ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন, জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়ন এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেশি। যে কারণে এ রোগের মোকাবিলায় ওই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মশারি বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের টিমের পাশাপাশি ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরাও আমাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে।