ঢাকা ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা পাড়ের পানিবন্দি মানুষের

ছবিঃ রাসেল ইসলাম

দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর ডালিয়া ব্যারেজে পানি প্রবাহ কমলেও বেড়েছে ১৫ হাজার পানিবন্ধি পরিবারের দুর্ভোগ।
গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৩ টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় তিস্তা নদীঃ ডালিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ৫২.২২ মিটার (বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৭ সে.মি উপরে। কাউনিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ২৮.৬৪ মিটার, (বিপদসীমা =২৮.৭৫ মিটার) যা বিপদসীমার ১১ সেঃমিঃ নিচে। ধরলা নদীঃ শিমুলবাড়ি পয়েন্ট-পানি সমতল ৩১.২৯ মিটার, (বিপদসীমা = ৩১.০৯ মিটার) যা বিপদসীমার ২০ সেঃমিঃ উপরে। পাটগ্রাম পয়েন্ট-পানি সমতল ৫৯.৩৫ মিটার (বিপদসীমা = ৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমার ১০০ সেঃমি নিচে।
নদী পারের পানিবন্ধি পরিবার গুলোর বেড়েছে দুর্ভোগ। সেই সাথে চরম বিপাকে পড়েছে গবাদি পশু-পাখি আর মৎস্য খামারিরাও। পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী ও লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে এবং নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
লালমনিরহাটের ৫ টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার। পানিবন্ধি পরিবার গুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদীপাড়ের অধিকাংশ পরিবারের সুপেয় পানির টিউবয়েল পানির নিচে ডুবে গেছে। মাচাং বানিয়ে তাতে রান্না করছেন নারীরা। এক বেলা রান্না করে চালিয়ে নিচ্ছেন ২/৩ বেলা। মাচাংয়ের ওপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিস্তা পাড়ের পানিবন্দি পরিবারগুলো।
মাচাংয়ের ওপর চুলা বসিয়ে দিন রাতের রান্না এক সঙ্গে করছেন ফাতেমা নেছা (৫৫) বলেন, বন্যা হলে কষ্ট বাড়ে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে মাচাংয়ে রান্না করতে হয়। পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে নানান রোগ হয়। তবুও বাঁচতে হলে খাইতে হবে। দিন ও রাতের খাবার একবারে রান্না করতেছি। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এখন পর্যন্ত পাইনি।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার পানি বন্ধি রিয়াজুল ও বাদল বলেন, গতরাত থেকে পানি বাড়ছে। আজ বিকাল থেকে পানি কিছুটা কমলেও বিপদে পড়েছি গৃহপালিত পশু নিয়ে। গবাদি পশুপাখি আর শিশু বৃদ্ধদের নিয়ে উঁচু স্থানে এসেছি। রাত হলে আবার মাচাংয়ের ওপরে বসে বসে রাত কাটাতে হবে। সাপের ভয়ে আর ছোট বাচ্চারা পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে রাত জেগে থাকতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার সুকুমার ও রাজপুর এলাকার এন্তাজুল ইসলাম বলেন, নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেক পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। পুকুরের মাছ রক্ষায় চারদিকে নেট জাল দিয়ে রক্ষা করতে পারি নাই। পুকুরের মাছ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ মৎস্য চাষি।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম‌্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ‌্যামল ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম‌্যান মজিবুল আলম সাহাদাত জানান, তাদের ইউনিয়নের অসংখ‌্য পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
লালমনিরহাট ত্রাণ শাখা জানান, তিস্তা নদীর পানিবন্ধি পরিবার গুলোর জন্য সরকারি ভাবে ৪৫০ টন চাল ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য উপরে চিঠি পাঠিয়েছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যা বলেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার ৫ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সরকারি ভাবে ৪৫০ টন চাল ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা পানিবন্ধি পরিবারের জন্য দেওয়া হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে। আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের মাধ্যমে সকল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মঠবাড়িয়ায় স্কুল ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২

নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা পাড়ের পানিবন্দি মানুষের

আপডেট সময় ০১:২৪:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩
দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর ডালিয়া ব্যারেজে পানি প্রবাহ কমলেও বেড়েছে ১৫ হাজার পানিবন্ধি পরিবারের দুর্ভোগ।
গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৩ টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় তিস্তা নদীঃ ডালিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ৫২.২২ মিটার (বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৭ সে.মি উপরে। কাউনিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ২৮.৬৪ মিটার, (বিপদসীমা =২৮.৭৫ মিটার) যা বিপদসীমার ১১ সেঃমিঃ নিচে। ধরলা নদীঃ শিমুলবাড়ি পয়েন্ট-পানি সমতল ৩১.২৯ মিটার, (বিপদসীমা = ৩১.০৯ মিটার) যা বিপদসীমার ২০ সেঃমিঃ উপরে। পাটগ্রাম পয়েন্ট-পানি সমতল ৫৯.৩৫ মিটার (বিপদসীমা = ৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমার ১০০ সেঃমি নিচে।
নদী পারের পানিবন্ধি পরিবার গুলোর বেড়েছে দুর্ভোগ। সেই সাথে চরম বিপাকে পড়েছে গবাদি পশু-পাখি আর মৎস্য খামারিরাও। পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী ও লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে এবং নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
লালমনিরহাটের ৫ টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার। পানিবন্ধি পরিবার গুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদীপাড়ের অধিকাংশ পরিবারের সুপেয় পানির টিউবয়েল পানির নিচে ডুবে গেছে। মাচাং বানিয়ে তাতে রান্না করছেন নারীরা। এক বেলা রান্না করে চালিয়ে নিচ্ছেন ২/৩ বেলা। মাচাংয়ের ওপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিস্তা পাড়ের পানিবন্দি পরিবারগুলো।
মাচাংয়ের ওপর চুলা বসিয়ে দিন রাতের রান্না এক সঙ্গে করছেন ফাতেমা নেছা (৫৫) বলেন, বন্যা হলে কষ্ট বাড়ে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে মাচাংয়ে রান্না করতে হয়। পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে নানান রোগ হয়। তবুও বাঁচতে হলে খাইতে হবে। দিন ও রাতের খাবার একবারে রান্না করতেছি। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এখন পর্যন্ত পাইনি।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার পানি বন্ধি রিয়াজুল ও বাদল বলেন, গতরাত থেকে পানি বাড়ছে। আজ বিকাল থেকে পানি কিছুটা কমলেও বিপদে পড়েছি গৃহপালিত পশু নিয়ে। গবাদি পশুপাখি আর শিশু বৃদ্ধদের নিয়ে উঁচু স্থানে এসেছি। রাত হলে আবার মাচাংয়ের ওপরে বসে বসে রাত কাটাতে হবে। সাপের ভয়ে আর ছোট বাচ্চারা পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে রাত জেগে থাকতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার সুকুমার ও রাজপুর এলাকার এন্তাজুল ইসলাম বলেন, নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেক পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। পুকুরের মাছ রক্ষায় চারদিকে নেট জাল দিয়ে রক্ষা করতে পারি নাই। পুকুরের মাছ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ মৎস্য চাষি।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম‌্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ‌্যামল ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম‌্যান মজিবুল আলম সাহাদাত জানান, তাদের ইউনিয়নের অসংখ‌্য পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
লালমনিরহাট ত্রাণ শাখা জানান, তিস্তা নদীর পানিবন্ধি পরিবার গুলোর জন্য সরকারি ভাবে ৪৫০ টন চাল ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য উপরে চিঠি পাঠিয়েছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যা বলেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার ৫ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সরকারি ভাবে ৪৫০ টন চাল ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা পানিবন্ধি পরিবারের জন্য দেওয়া হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে। আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের মাধ্যমে সকল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।