ঢাকা ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মুক্তি পাচ্ছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল : মির্জা ফখরুল আ.লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল : তারেক রহমান

আসামে বাংলাভাষী মুসলিমদের ‘মিঞাঁ মিউজিয়াম’ বন্ধ করে দিল সরকার

ভারতের আসামে বাংলাভাষী মুসলমানদের একটি সংগ্রহশালা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্যটির সরকার। মাত্র দু’দিন আগে খোলা হয়েছিল ‘মিঞাঁ মিউজিয়াম’ নামে ওই সংগ্রহশালাটি।

সরকার দাবি করেছে, সরকারি প্রকল্পে বাসস্থানের জন্য দেওয়া একটি বাড়িতে ওই মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছিল। আর তাই সংগ্রহশালাটি সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং তিনজন উদ্যোক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বাংলাভাষী মুসলমানরা বলছেন, তাদের জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে রাজনীতি করার জন্যই ওই মিউজিয়ামটি গড়া হয়েছিল।

আসামের মিঞাঁ কারা?
গোয়ালপাড়ার ‘মিঞাঁ মিউজিয়াম’ নিয়ে আসামের রাজনীতি এখন সরগরম। ডাপকারভিটা গ্রামের একতলা বাড়িটি মোহর আলির। সেখানেই চালু হয়েছিল ওই মিউজিয়ামটি। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর ইত্যাদি অঞ্চল থেকে যে বাংলাভাষী মুসলমান কৃষকরা আসামে বসতি গড়েছিলেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে, তাদের মিঞাঁ বলে ডাকে আসামের একটা বড় অংশের মানুষ।মিঞাঁ কবি ফারহাদ ভুঁইঞ্যা বলছেন, ‘মিঞাঁটা কোনো কমিউনিটি না। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাংলাভাষী মুসলমানদেরই তাচ্ছিল্য করে মিঞাঁ বলে আসামের মানুষ। বহু বছর ধরেই এটা চলে আসছে। তার ফলে আমাদের মধ্যেও একটা অংশ এখন নিজেদের মিঞাঁ বলে ভাবতে শুরু করেছে।’

কী কী ছিল ‘মিঞাঁ মিউজিয়ামে’?
ওই মিউজিয়ামে লাঙল, হাল, মাছ ধরার সরঞ্জাম, গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদি যেসব দ্রব্য মূলত বাংলাভাষী মুসলমান কৃষকরা ব্যবহার করেন, সেগুলোই প্রদর্শিত হয়েছিল। কিন্তু বাড়িটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস প্রকল্পের অধীনে দেওয়া হয়েছিল, তাই সেই বাড়ি বসবাস করা ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় না, এই যুক্তি দেখিয়ে সরকার মিউজিয়ামটি বন্ধ করে দিয়েছে।

এই কারণ উল্লেখ করে গোয়ালপাড়ার ডেপুটি কমিশনারের একটি লিখিত নির্দেশ মিউজিয়ামের দরজায় আটকিয়ে ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন।

কেন মিঞাঁ মিউজিয়াম: প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
তবে মিঞাঁ মিউজিয়ামটির আদৌ কি প্রয়োজন ছিল? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।

হিমন্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘লাঙ্গলটি শুধু মিঞাঁরা ব্যবহার করে? অসমীয়া মানুষও তো লাঙ্গল ব্যবহার করে। মাছ ধরার যে সরঞ্জামটা রাখা হয়েছে, সেটাও তো তপশীলী জাতির মানুষ ব্যবহার করে! গামুসাও ছিল দেখা গেছে – সেটা তো আসামের গামছা। শুধুমাত্র লুঙ্গিটাই ওরা ছাড়া আর কেউ ব্যবহার করে না।’

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘সরকারের কাছে তারা এটা প্রমাণ করুক যে লাঙল শুধুমাত্র মিঞাঁরাই ব্যবহার করে, অসমীয়ারা করে না। অসমীয়াদের ব্যবহার্য জিনিষপত্র নিয়ে গিয়ে মিঞাঁ মিউজিয়াম খুলেছে!’

এই মিউজিয়ামের অর্থায়ন কীভাবে হল, সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

লুঙ্গি নিয়েই মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচার করবে বিজেপি’
কবি ফারহাদ ভুঁইঞ্যা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে একমত নন। তিনি বলছেন, ‘যদি কেউ নিজেদের কমিউনিটির সামগ্রী সংরক্ষণ করতে চায়, তাকে আমি খারাপ মনে করি না। কিন্তু বিষয়টার রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে।’

‘কিছু রাজনীতিবিদ আমাদের এই বাংলাভাষী মুসলমানদের ব্যবহার করছে ব্যক্তিগত রাজনীতির স্বার্থে। কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমানরাই আসলে ভুক্তভোগী হচ্ছে আর লাভবান হবে বিজেপি।’

তার ব্যাখ্যা, বাংলাভাষী মুসলমানদের পরিধান লুঙ্গি ওই মিউজিয়ামে রাখা হয়েছিল। লুঙ্গির কথা বিশ্বশর্মাও বলেছেন। আর এই লুঙ্গির প্রসঙ্গ তুলেই বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে শুরু করেছে বিজেপি।

অবশ্য বিশ্বশর্মা মাঝে মাঝেই বাংলাভাষী মুসলমানদের নিয়ে মন্তব্য করে থাকেন।

মিঞাঁ কবিতা, স্কুলের পরে মিউজিয়াম
কয়েক বছর আগে মিঞাঁ কবিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় আসামে, আর বিশ্বশর্মা সেই কবিতাগুলো আর তাদের রচয়িতাদের কটাক্ষ করেছিলেন।

সেই প্রসঙ্গ তুলে এনে বিশ্বশর্মা এদিন বলেন, ‘আমি এর আগে যখন মিঞাঁ কবিতার প্রসঙ্গ তুলেছিলাম, তখন আসামের বুদ্ধিজীবীরা তার সমালোচনা করেছিলেন যে সেটা নাকি সাম্প্রদায়িক কথা ছিল। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে যে প্রথমে মিঞাঁ কবিতা, তারপরে মিঞাঁ স্কুল হলো, এখন মিঞাঁ মিউজিয়ামও হয়েছে!’

হিন্দুত্ববাদী এবং অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো বলে থাকে যে, বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে লাখ লাখ অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। যদিও সেই প্রমাণ কখনোই সামনে আসেনি

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

আসামে বাংলাভাষী মুসলিমদের ‘মিঞাঁ মিউজিয়াম’ বন্ধ করে দিল সরকার

আপডেট সময় ০২:৩৫:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২

ভারতের আসামে বাংলাভাষী মুসলমানদের একটি সংগ্রহশালা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্যটির সরকার। মাত্র দু’দিন আগে খোলা হয়েছিল ‘মিঞাঁ মিউজিয়াম’ নামে ওই সংগ্রহশালাটি।

সরকার দাবি করেছে, সরকারি প্রকল্পে বাসস্থানের জন্য দেওয়া একটি বাড়িতে ওই মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছিল। আর তাই সংগ্রহশালাটি সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং তিনজন উদ্যোক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বাংলাভাষী মুসলমানরা বলছেন, তাদের জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে রাজনীতি করার জন্যই ওই মিউজিয়ামটি গড়া হয়েছিল।

আসামের মিঞাঁ কারা?
গোয়ালপাড়ার ‘মিঞাঁ মিউজিয়াম’ নিয়ে আসামের রাজনীতি এখন সরগরম। ডাপকারভিটা গ্রামের একতলা বাড়িটি মোহর আলির। সেখানেই চালু হয়েছিল ওই মিউজিয়ামটি। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর ইত্যাদি অঞ্চল থেকে যে বাংলাভাষী মুসলমান কৃষকরা আসামে বসতি গড়েছিলেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে, তাদের মিঞাঁ বলে ডাকে আসামের একটা বড় অংশের মানুষ।মিঞাঁ কবি ফারহাদ ভুঁইঞ্যা বলছেন, ‘মিঞাঁটা কোনো কমিউনিটি না। পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাংলাভাষী মুসলমানদেরই তাচ্ছিল্য করে মিঞাঁ বলে আসামের মানুষ। বহু বছর ধরেই এটা চলে আসছে। তার ফলে আমাদের মধ্যেও একটা অংশ এখন নিজেদের মিঞাঁ বলে ভাবতে শুরু করেছে।’

কী কী ছিল ‘মিঞাঁ মিউজিয়ামে’?
ওই মিউজিয়ামে লাঙল, হাল, মাছ ধরার সরঞ্জাম, গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদি যেসব দ্রব্য মূলত বাংলাভাষী মুসলমান কৃষকরা ব্যবহার করেন, সেগুলোই প্রদর্শিত হয়েছিল। কিন্তু বাড়িটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস প্রকল্পের অধীনে দেওয়া হয়েছিল, তাই সেই বাড়ি বসবাস করা ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় না, এই যুক্তি দেখিয়ে সরকার মিউজিয়ামটি বন্ধ করে দিয়েছে।

এই কারণ উল্লেখ করে গোয়ালপাড়ার ডেপুটি কমিশনারের একটি লিখিত নির্দেশ মিউজিয়ামের দরজায় আটকিয়ে ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন।

কেন মিঞাঁ মিউজিয়াম: প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
তবে মিঞাঁ মিউজিয়ামটির আদৌ কি প্রয়োজন ছিল? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।

হিমন্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘লাঙ্গলটি শুধু মিঞাঁরা ব্যবহার করে? অসমীয়া মানুষও তো লাঙ্গল ব্যবহার করে। মাছ ধরার যে সরঞ্জামটা রাখা হয়েছে, সেটাও তো তপশীলী জাতির মানুষ ব্যবহার করে! গামুসাও ছিল দেখা গেছে – সেটা তো আসামের গামছা। শুধুমাত্র লুঙ্গিটাই ওরা ছাড়া আর কেউ ব্যবহার করে না।’

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘সরকারের কাছে তারা এটা প্রমাণ করুক যে লাঙল শুধুমাত্র মিঞাঁরাই ব্যবহার করে, অসমীয়ারা করে না। অসমীয়াদের ব্যবহার্য জিনিষপত্র নিয়ে গিয়ে মিঞাঁ মিউজিয়াম খুলেছে!’

এই মিউজিয়ামের অর্থায়ন কীভাবে হল, সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

লুঙ্গি নিয়েই মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচার করবে বিজেপি’
কবি ফারহাদ ভুঁইঞ্যা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে একমত নন। তিনি বলছেন, ‘যদি কেউ নিজেদের কমিউনিটির সামগ্রী সংরক্ষণ করতে চায়, তাকে আমি খারাপ মনে করি না। কিন্তু বিষয়টার রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে।’

‘কিছু রাজনীতিবিদ আমাদের এই বাংলাভাষী মুসলমানদের ব্যবহার করছে ব্যক্তিগত রাজনীতির স্বার্থে। কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমানরাই আসলে ভুক্তভোগী হচ্ছে আর লাভবান হবে বিজেপি।’

তার ব্যাখ্যা, বাংলাভাষী মুসলমানদের পরিধান লুঙ্গি ওই মিউজিয়ামে রাখা হয়েছিল। লুঙ্গির কথা বিশ্বশর্মাও বলেছেন। আর এই লুঙ্গির প্রসঙ্গ তুলেই বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে শুরু করেছে বিজেপি।

অবশ্য বিশ্বশর্মা মাঝে মাঝেই বাংলাভাষী মুসলমানদের নিয়ে মন্তব্য করে থাকেন।

মিঞাঁ কবিতা, স্কুলের পরে মিউজিয়াম
কয়েক বছর আগে মিঞাঁ কবিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় আসামে, আর বিশ্বশর্মা সেই কবিতাগুলো আর তাদের রচয়িতাদের কটাক্ষ করেছিলেন।

সেই প্রসঙ্গ তুলে এনে বিশ্বশর্মা এদিন বলেন, ‘আমি এর আগে যখন মিঞাঁ কবিতার প্রসঙ্গ তুলেছিলাম, তখন আসামের বুদ্ধিজীবীরা তার সমালোচনা করেছিলেন যে সেটা নাকি সাম্প্রদায়িক কথা ছিল। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে যে প্রথমে মিঞাঁ কবিতা, তারপরে মিঞাঁ স্কুল হলো, এখন মিঞাঁ মিউজিয়ামও হয়েছে!’

হিন্দুত্ববাদী এবং অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো বলে থাকে যে, বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে লাখ লাখ অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। যদিও সেই প্রমাণ কখনোই সামনে আসেনি