রহস্যে ঘেরা একটি বটগাছ ও অন্যটি পাকুড় গাছ। বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, একটি জঙ্গল। দু’টি গাছের ডালপালায় সৃষ্টি হয়েছে এক বিরাট জঙ্গলের।
গাছ দুটি বর্তমানে অসংখ্য ডালের মাধ্যমে অসংখ্য শিকড় ছেড়ে দিয়ে ৫ বিঘা জমি দখল করে আছে। ঢাকার অতি কাছে অবস্থিত এই বটগাছ ও পাকুড় গাছ দেখার জন্য দর্শনার্থীরা সেখানে ভিড় জমায়।
ঢাকার ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ষাইট্টা। সেখানেই আছে বট-পাকুর গাছের বিশাল এক বাগান। সেখানকার স্থানীয় পরিবেশ খুবই সুন্দর।
কংক্রিংটের শহরে হাঁপিয়ে উঠলে, গ্রামীণ রূপবৈচিত্র দেখতে যেতে পারেন ঢাকার কাছাকাছি ষাইট্টা বটগাছে। সেখানে গেলে চোখে পড়বে- পিচ ঢালা পাকা রাস্তা। তার দু’পাশে চিরায়ত গ্রাম, ধান-গম-ভুট্টা-আখ প্রভৃতির ক্ষেত।
আছে প্রচুর লেবু ও কলার বাগান। স্থানটি ক্যাম্পিং করার জন্য বেশ উপযুক্ত। খাদ্য-পানির সংস্থান করা যাবে অনায়াসে। গোসলের জন্য আছে অনেক পুকুর, বট-পাকুড়ের সুশীতল ছায়ার নিরিবিলি পরিবেশে, পাখ-পাখালির ডাক শুনে অনেকটা সময় নিশ্চিন্তে পার করা যাবে।
রহস্যে ঘেরা বট-পাকুড় গাছ
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই গাছ দু’টিকে দেবতা মনে করেন। তারা এই গাছের নিচে কালি মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই গাছ দু’টি নিয়ে তাদের মনে বেশ কিছু বিশ্বাস আছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, পাকুড় গাছকে পুরুষ এবং বট গাছকে নারী বিবেচনা করে সনাতন ধর্মানুসারে, অতীতে গাছ দুইটির বিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের মতে, এই দু’টি গাছের ডাল-পালা যে কাটেন; তিনিই পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পূজা দেওয়া ছাড়া সে আর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হন না। তাই স্থানীয় ভয়ে এই গাছের পাতা পর্যন্তও ছেড়েন না। এ ছাড়াও রাতের বেলায় গাছটির আশেপাশে না-কি ভুতুড়ে ঘটনা ঘটে বলেও মত আছে গ্রামবাসীর।
গাছ নিয়ে মিথ
লোকমুখে জানা যায়, একবার এই বট-পাকুড়-গাছের নিচ দিয়ে ইট-ভর্তি একটি ট্রাক যাওয়ার সময় গাছের ডালের সঙ্গে আটকে যায়। এ সময় ওই ট্রাক-চালক বটগাছের ডালটি কাটলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে প্রবীণ ব্যক্তিদের পরামর্শে বটগাছের নিচে কয়েক কেজি বাতাসা আর মোমবাতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ট্রাক-চালক সুস্থ হন।
আরও জানা যায়, কার্তিক সরকার নামে এক কৃষকের জমিতে বটগাছের ডাল ছড়িয়ে পড়লে তিনি ডালটি কেটে দেন। তার সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ওই বটগাছের নিচে একটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি। সেখানে পূজা-অর্চনা করতে থাকেন। এ রকমই অনেক অলৌকিক ঘটনা আছে এই বট-পাকুড়-গাছ নিয়ে।
ইতিহাস
জানা যায়, ধানতারা গ্রামে দেবীদাস বংশের পূর্বপুরুষ তাদের জমির ওপর একটি বট ও একটি পাকুড় গাছ রোপণ করেছিলেন। সে সময় এরকম ধর্মীয় অনুভূতিতে দাস বংশের পূর্বপুরুষ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে।
বিবাহ উপকরণসহ ব্রাহ্মণ দ্বারা মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বট ও পাকুড় গাছের বিবাহ সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি অনেক মানুষের খাবারেরও আয়োজন করেছিলেন তারা। তাই স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয়রা এই দু’টি বৃক্ষকে স্বামী-স্ত্রী বলে অভিহিত করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বটগাছটির নিচে কালীমন্দির নির্মাণ করেছেন। সেখানে কালি, সরস্বতী, বুড়ির পূজা এবং দশমী ও বাসন্তী মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সময় গাছের নিচে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান।
কীভাবে যাবেন ষাইট্টা বটগাছে?
গাবতলীর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চড়ে মানিকগঞ্জগামী ঢুলিভিটা নামক স্থানে যেতে হবে। ৫০-৮০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া পড়বে। তারপর ঢুলিভিটা থেকে ৫ টাকা অটো ভাড়ায় যাবেন ধামরাই বাজারে।
সেখান থেকে যাদবপুর ইউনিয়নের ষাইট্টা গ্রামে যাওয়ার জন্য পেয়ে যাবেন অটোরিক্সা। রিজার্ভ নিলে ২৫০-৩০০ টাকা লাগবে।
এ ছাড়াও গাবতলী থেকে জনসেবা বা এসবি লিংক মিনিবাসে চড়ে মহিষাশী বাজারে যেতে জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৫০-৭০ টাকা। সেখান থেকে কুশরা যেতে লাগবে ৫ টাকা ভাড়া। কুশরা থেকে ষাইট্টা যেতে লাগবে ২০-২৫ টাকা।
গুলিস্তান থেকে যেতে চাইলে সরাসরি ধামরাই চলে যেতে পারেন বাসে চেপে। ধামরাই পৌঁছে রিকশা বা অটো ভাড়া করে চলে যেতে পারে ষাইট্টা বটগাছে।