রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দুটি মামলার তথ্য হলফনামায় গোপন করেছেন। তবে এই মামলা আগেই আদালতে খারিজ হয়ে গেছে বলে প্রার্থী দাবি করেছেন।
এই প্রার্থীর নাম মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। তিনি নগরীর ২৩ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরও তিনি। মাহাতাব হোসেন চৌধুরী রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো এই সংগঠনসংক্রান্ত।
মাহাতাবের হলফনামা ঘেঁেট দেখা গেছে, তিনি হলফনামায় মোট চারটি মামলার তথ্য দিয়েছেন। এরমধ্যে শ্রম আইন-২০০৬ এর ২১৩ ধারায় রাজশাহী শ্রম আদালতে বিচারাধীন তিনটি মামলার তথ্য রয়েছে। মামলাগুলো হলো- ১৭/২২, ১৮/২২ এবং ১৯/২২। এছাড়া মারামারির আরেকটি মামলায় ২০১৮ সালে তিনি খালাস পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে, মাহাতাব তাঁর হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করেছেন। অভিযোগপত্রের সঙ্গে দুটি মামলার কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়েছে। এর একটির মামলা নম্বর ২৯২/২০১৭। এটি বিভাগীয় শ্রম আদালতে করা হয়েছিল। অন্যটি রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা হয়। এই মামলার নম্বর ৮৮৮ সি/২০২২ (বোয়ালিয়া)। যদিও এসব মামলা খারিজ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রার্থী মাহাতাব।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, মাহাতাবের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল ইসলাম। মামলার আরজিতে তিনি বলেছেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাহাতাব হোসেন চৌধুরী প্রথম মেয়াদে যখন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন সংগঠনের মোট ১ কোটি ৮১ লাখ ৭ হাজার ৪৬৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অন্য আরেকটি মামলার বাদী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য মিজানুর রহমান মেরাজ। তিনি সংগঠনের প্রাপ্য টাকা সদস্যদের না দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগ করেছেন মাহাতাবের বিরুদ্ধে। গত ১ জুন মিজানুর রহমান মেরাজ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। ডাকযোগে অভিযোগের কপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জহুরুল ইসলাম জনি নামের আরেক ব্যক্তি মাহাতাবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারীরা মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর প্রার্থীতা বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন।
মামলার তথ্য গোপনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, টাকা আত্মসাতের যে মামলার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আদালতে খারিজ হয়ে গেছে। তাই এটি হলফনামায় দেওয়ার দরকার নেই। শ্রম আদালতে অন্য যে তিনটি মামলা চলছে, সেগুলোর তথ্য হলফনামায় দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সংক্ষুব্ধ পক্ষ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু অভিযোগ করার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অভিযোগটি এসেছে। এখন এটি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কিছু নেই। এখন বিষয়টি নিয়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষ উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। আদালতই তাহলে সিদ্ধান্ত দেবেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এই মাহাতাবের বিরুদ্ধে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের নির্যাতন, সংগঠনের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত করে কয়েকটি বাড়ি-গাড়ি করাসহ নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন শ্রমিকরা। একসময় মাহাতাব বাসচালকের সহযোগী ছিলেন। কিন্তু মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। ঘুরেন দামি গাড়িতে।