আরও একবার বিশ্বকাপে মুখোমুখি ভারত ও পাকিস্তান। আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো এবারও দল দুটো বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুটা করছে নিজেদের মুখোমুখি হয়ে। চলতি বছর এশিয়া কাপে অবশ্য আরও দুই ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছেন রোহিত শর্মা-বাবর আজমরা। সেই দুই ম্যাচে দুই দল লড়েছিল সেয়ানে সেয়ানে। আগামী ২৩ অক্টোবর যখন আবারও মুখোমুখি হবে দলদুটো, তখনো যে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না, তা বলাই বাহুল্য।
তবে সেই লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফল নির্ভর করবে বেশ কিছু ছোট ছোট লড়াই জেতার ওপর, ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলে ‘ম্যাচ আপ’। জিততে হলে এসব ‘ম্যাচ আপে’ হারা চলবে না মোটেও। ছোট ছোট সেসব লড়াই কার সঙ্গে কার, দেখে নেওয়া যাক-
শাহিন আফ্রিদি বনাম লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবশেষ যখন দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল, শাহিন শাহ আফ্রিদি ভারতীয় টপ অর্ডারের জন্য সাক্ষাৎ দুঃস্বপ্ন হয়েই যেন হাজির হয়েছিলেন। সাত বলের ব্যবধানে তুলে নিয়েছিলেন রোহিত ও রাহুলকে। সেই ধাক্কাটা ভারত আর পুরো ম্যাচে সামলে উঠতে পারেনি, দশ উইকেটে হেরেছিল বিরাট কোহলির দল।
সেই স্পেলটা মোটেও যে ঝড়ে-বকে নয়, তার প্রমাণ এর আগে পড়ে বহুবার দিয়েছেন শাহিন। পাওয়ারপ্লেতে তার পারফর্ম্যান্স অসামান্য! যে কারণে ভারত-পাকিস্তানের আসন্ন লড়াইয়েও নিয়ামক হয়ে যেতে পারে তার সঙ্গে ভারতীয় টপঅর্ডারের লড়াইটা।
মোহাম্মদ শামি বনাম আসিফ আলি
পাকিস্তান দলের ফিনিশার হিসেবে আসিফ আলির ভূমিকাটা নিয়ে শেষ কিছু দিনে আলোচনা হয়েছে বেশ। তবে তিনি যে ইনিংসের শেষ দিকে ভালোই বিপদে ফেলতে পারবেন প্রতিপক্ষকে, তা অন্তত ভারতের চেয়ে ভালো কেউ বোঝে না! দুই দলের সবশেষ লড়াইয়ে যে রোহিত শর্মার দল হেরেছে, তাতে দারুণ অবদান তো ফিনিশার আসিফেরও ছিল!
তাকে সবচেয়ে ভালো সামলাতে পারতেন যিনি, সেই যশপ্রীত বুমরাহ নেই এই বিশ্বকাপে। তার বদলে ভারতের ভরসা মোহাম্মদ শামি। ডেথ ওভারে তার ইয়র্কারের বিষের দেখা মিলেছে প্রস্তুতি ম্যাচে। সেটা যদি মূল ম্যাচেও দেখা যায়, তাহলেই ভারতের কল্যাণ।
তবে শামির ডেথ বোলিং কৌশলটা ইয়র্কার নির্ভর হওয়ায় ভুল করার সুযোগ থাকে খুব কম। আর সামনে যখন থাকেন আসিফ আলির মতো কেউ, তখন লড়াইটা আরও আকর্ষণীয় না হয়েই যায় না!
সূর্যকুমার যাদব বনাম শাদাব খান
সূর্যকুমার যাদব শেষ কিছুদিন ধরেই আছেন দারুণ ফর্মে। টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান নিয়ে বাবর-রিজওয়ানদের সঙ্গে তার লুকোচুরি খেলা চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। পেস-স্পিন দুই ধরনের আক্রমণেই মাঠের চার পাশে খেলতে পারার দক্ষতা বেশ তার। ভারতের মিডল অর্ডারও নির্ভর করছে তার ওপরই।
মাঝের ওভারগুলোয় ব্যাট করেন বলে স্পিনারদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি তার জন্য। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান চাইবে তাকে শাদাব খানের মাধ্যমে বশ করতে। পাকিস্তানের বোলিংয়ে মাঝের ওভারগুলো সামলানোর দায়িত্ব থাকে শাদাবের কাছে, ৭৩ ইনিংসে ১৮.৮ স্ট্রাইক রেটে ৮৭ উইকেট বলছে কাজটা নেহায়েত খারাপ করেন না তিনি। ৭.১ ইকনমিও প্রমাণ তার মিতব্যয়ী বোলিংয়ের। ভারত-পাকিস্তানের আসন্ন লড়াইয়ে নজরে রাখতে হবে এই লড়াইটাকেও।
বাবর-রিজওয়ান বনাম ভুবনেশ্বর কুমার
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের ওপেনিং জুটি। টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ তিনেও আছেন দুই পাক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান (১) ও বাবর আজম (৩)। বড় সময় ধরে এই জুটি টিকে গেলে প্রতিপক্ষের মাথাব্যথার কারণ যে হয়ে উঠতে পারেন দুইজন, সেটার প্রমাণ মিলছে দু’জনের রেকর্ডে। কিছুদিন আগেই দুই জন মিলে ২০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এর আগেও আরও ৪ বার ১৫০ রানের বেশি জুটি গড়ার কীর্তি গড়েছিলেন দুই ব্যাটার।
তাদের একজনকে বিদায় করে দিতে পারলেই পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের সুযোগটা যায় বেড়ে, বলছে পরিসংখ্যান। ভারতের পক্ষে এই কাজটা করার মতো আছেন ভুবনেশ্বর কুমার। শুরুর ওভারগুলোয় মুভমেন্ট আদায় করতে পারেন তিনি, যা শুরুতে বিপদে ফেলে দিতে পারবে পাকিস্তানকে।
এই লড়াইও গড়ে দিতে পারে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চূড়ান্ত ফলাফল।