রাজশাহীতে বিএনপির জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতা আবু সাইদ চাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই ক্ষোভের সূত্র ধরে রাজশাহী জেলা ও উপজেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসঠন। তারা অবিলস্বে চাদবেক গ্রেফতারে দাবি জানিয়েছে।
সোমবার বিকেলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করা হয়েছে। একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর রাণিবাজার থেকে শুরু হয়ে সাহেববাজার জিরেপয়েন্টে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব ও সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাসিকের সদ্য সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মিছিল থেকে আবু সাইদ চাঁদের কুশপত্তলিকা দাহ করা হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা খোলস ছেড়ে আসল রুপ দেখাতে শুরু করেছে। বিএনপির নেতারা অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমার রাজনীতি করে। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির নিন্দা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপির রাজনীতি আমরা রাজপাথে মোবাবেলা করতে প্রস্তুত। যেখানে তারা সভা সমাবেশ করবে আমরা সেখানে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। রাজশাহীর মাটিতে বিএনপির কোনো অপতৎপরতা অপরাজনীতি মেনে নেয়া হবে না। অতিদ্রুত বিএনপি নেতা চাঁদকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়।
এরআগে দুপুরে রাসিক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিতকদের প্রশ্নে উত্তর দেন সদ্য সাবেক মেয়র লিটন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার যে হুমকি দিয়েছে তা রাজপথে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে। চাঁদ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া পৃথকভাবে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও চাদের কুশ পুতুল দাহ করা হয়েছে। বিকেলে পুঠিয়ার বানেশ্বরে বিশাল বিক্ষোভ করে জেলা আওয়ামী লীগ। এসময় বক্তব্য রাখেন রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন। এছাড়া জেলার বাগমারায় এমপি এনামুলের নেতৃত্বে বিশাল ব্েিক্ষাভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের নেতৃত্বে নগরীর লক্ষীপুর মোডে বিক্ষোভ সমাবেশ ও আবু সাঈদ চাদের কুশ পুতুল দাহ করা হয়।
নগরীতে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জননেতা এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য বেগম আখতার জাহান। প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল এঁর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক, সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেনী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক আহ্সানুল হক পিন্টু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জননেতা এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ এর পিতা রাজাকার ছিলেন। বিএনপিতে তারাই নেতৃত্ব দিবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাদের জন্মদাতা জিয়াউর রহমান নামে মুক্তিযোদ্ধা হলেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার নেপথ্যে সব ধরনের কলকাঠি নাড়েন। সামনে ছিলেন শিখন্ডী খন্দকার মোস্তাক। যাকে কাঠের পুতুলের মতো ব্যবহার করা হয়।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ যে কথাটি বলেছে সেটি বিচ্ছিন্ন কোন কথা নয়। সেটা তারেক জিয়ার কথা। সেটা লন্ডন থেকে এসে চাঁদের মাথায় কীভাবে ঢুকেছে। এর পরিণতি কতটা ভয়ানক হবে, সে এখনো ভাবতে পারছে না।
আবু সাঈদ চাঁদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক-এটি আমরা চাই। ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। আরো মামলা হবে। শুধু মামলা দিয়ে নয়, সে রাজশাহী শহরে এলে তাকে গণধোলাই দেওয়া হবে। রাজশাহীতে আমরা এরআগেও চাঁদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি, আবারো অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপি নামক দলটি বাংলাদেশের জন্য ক্যান্সার। এই ক্যান্সারকে বাংলাদেশ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া দরকার। তা না হলে বাংলাদেশ স্বস্তি পাচ্ছে না। খুনি তারেক জিয়া যেমন কুসন্তান, তেমনি তারেক রহমান কুলাঙ্গার। কুলাঙ্গার তারেক জিয়া লন্ডনে বসে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। স্বাধীনতার পর হত্যা, খুন ও গুমের রাজনীতি শুরু করে বিএনপি। আবারো সেই রাজনীতি করে তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। তাদের মানুষ জ্বালাও-পোড়াও এর চিন্তা এখনও যায়নি। সুযোগ পেলে তারা আবারো জ্বালাও-পোড়াও করতে চায়।
তিনি আরো বলেন, রেজা কিবরিয়ার মতো লোক আমেরিকাকে বলে ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’ ভাইয়েরা, এটি কি মেনে নেওয়ার কথা? কখনোই না। ছাত্রলীগ মানে বাংলাদেশের ইতিহাস, ছাত্রলীগ মানে নতুন দেশ গড়ার কারিগর। সেই ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলার সাহস রেজা কিবরিয়া বা কতিপয় সুশীল কোথা থেকে পায়?
সদ্য সাবেক রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সোজা পথে নির্বাচনে এলে জনগণ ভোট দিবে না জেনে বিএনপি নানা রকম পাঁয়তারা করছে। কখনো বলে কেয়ারটেকার সরকার দিতেই হবে। কখনো বলে শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। কখনো বলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এই কথাতেই উস্কাানির আভাস পাওয়া যায়।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমরা স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ, আমরা সহজ-সরল মানুষ। আমরা দেশের উন্নয়ন করতে চাই। দেশ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে-এমন কোন পদক্ষেপ আমরা নিতে চাই না, কখনো নেয়ওনি।