ঢাকা ০১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জবই বিলের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে নান্দনিক ভাস্কর্য ‘জবই বিল মাছ চত্বর’

নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার। এখানকার ‘জবই বিল’ দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জলাশয়টি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। ঈদ ও বিভিন্ন ছুটিতে প্রাকৃতিক এ জলাভূমিতে ভিড় করে হাজারো দর্শনার্থী। জবই বিলে পাখি, মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের নিরাপদ আবাসস্থল। বর্ষাকালের বিশাল জলরাশি ও পরিযায়ী পাখির কলতান না থাকলেও বিস্তীর্ণ সবুজ ও সোনালি ধান ক্ষেত আছে। বিল পাড়ের মুক্ত হাওয়া ও উন্মুক্ত দৃশ্যপট দর্শনার্থীর প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ বিল ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। উপজেলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে দক্ষিণে পুনর্ভবা নদীতে মিলিত হয়েছে। বিলটির প্রকৃত নাম ‘দামুর মাহিল’। জবই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পরবর্তীতে মুখে মুখে নামকরণ হয় ‘জবই বিল’। ডুমরই, মাহিল, কালিন্দার ও বোরা মির্জাপুর এই চারটি বিলের সমন্বয়ে জবই বিল।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। বিলটি শিরন্টি, গোয়ালা, আইহাই ও পাতাড়ী এ চারটি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আইহাই ইউনিয়নের পাহাড়ীপুকুর, মংরইল ও মাইলডাঙ্গা গ্রামের মধ্যে বিলটির মুল কেন্দ্রবিন্দু। বিলের দক্ষিণ পাশে পাহাড়ীপুকুর, পশ্চিমে মংরইল ও পূর্বে মাইলডাঙ্গা গ্রাম।

বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক মাছে ভরা থাকে জলাশয়টি। প্রায় সারা বছর প্রাণ-প্রকৃতিতে মুখরিত থাকলেও শীতকালে বদলে যায় বিলের পরিবেশ। নানা প্রজাতির পাখ-পাখালির ডাকে ভিন্ন প্রাণের সঞ্চার হয় বিলটিতে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী এ বিলের আয়তন প্রায় ১ হাজার একর। কিন্তু বর্ষাকালে দুকুল ছাপিয়ে এর আয়তন বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার একর।

সাপাহার উপজেলা প্রশাসন জবই বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি নিমার্ন করেছেন নান্দনিক ভাস্কর্য ‘জবই বিল মাছ চত্বর’। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের নির্মিত মৎস্য সম্পদের প্রতীক চারটি মাছের সমন্বিত নান্দনিক ভাস্কর্য ‘জবই বিল মাছ চত্বর’। ভাস্কর্যটি ঈদুল ফিতরের ঠিক আগের দিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া বিলের মধ্যদিয়ে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে লাল, হলুদ, সাদা রঙে সুসজ্জিত সারি সারি পিলার, প্রবেশমুখে ‘জবই বিল’ লেখা সেলফি পয়েন্ট, রাস্তার দুধারে দৃষ্টিনন্দন বসার ১২টি বেঞ্চ, জবই ব্রিজের পশ্চিম পাশে নির্মিত ‘বিল বিলাস’ নামক দুটি ভিউ পয়েন্ট দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে বিল এলাকায় বসানো হয়েছে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র।

এক পর্যটক বলেন, গত এক বছরে ঐতিহ্যবাহী বিলের দৃশ্যপটটি পরিবর্তন হয়েছে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করা হয়েছে। বিলটি মৎস্য সম্পদে ভরপুর। আর এ বিষয়টি বিবেচনা করে জবই বিল মাছ চত্বর একটি নান্দনিক, শৈল্পিক ও আইকনিক স্থাপনা।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী জবই বিল দেশীয় প্রজাতির মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং পরিযায়ী ও দেশি পাখির জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর এ বিলটিকে সারা দেশে একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে স্থানীয় সকলের সহযোগিতায় আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জবই বিলের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে নান্দনিক ভাস্কর্য ‘জবই বিল মাছ চত্বর’

আপডেট সময় ০৫:১৫:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩

নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার। এখানকার ‘জবই বিল’ দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জলাশয়টি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। ঈদ ও বিভিন্ন ছুটিতে প্রাকৃতিক এ জলাভূমিতে ভিড় করে হাজারো দর্শনার্থী। জবই বিলে পাখি, মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের নিরাপদ আবাসস্থল। বর্ষাকালের বিশাল জলরাশি ও পরিযায়ী পাখির কলতান না থাকলেও বিস্তীর্ণ সবুজ ও সোনালি ধান ক্ষেত আছে। বিল পাড়ের মুক্ত হাওয়া ও উন্মুক্ত দৃশ্যপট দর্শনার্থীর প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ বিল ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। উপজেলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে দক্ষিণে পুনর্ভবা নদীতে মিলিত হয়েছে। বিলটির প্রকৃত নাম ‘দামুর মাহিল’। জবই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পরবর্তীতে মুখে মুখে নামকরণ হয় ‘জবই বিল’। ডুমরই, মাহিল, কালিন্দার ও বোরা মির্জাপুর এই চারটি বিলের সমন্বয়ে জবই বিল।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। বিলটি শিরন্টি, গোয়ালা, আইহাই ও পাতাড়ী এ চারটি ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আইহাই ইউনিয়নের পাহাড়ীপুকুর, মংরইল ও মাইলডাঙ্গা গ্রামের মধ্যে বিলটির মুল কেন্দ্রবিন্দু। বিলের দক্ষিণ পাশে পাহাড়ীপুকুর, পশ্চিমে মংরইল ও পূর্বে মাইলডাঙ্গা গ্রাম।

বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক মাছে ভরা থাকে জলাশয়টি। প্রায় সারা বছর প্রাণ-প্রকৃতিতে মুখরিত থাকলেও শীতকালে বদলে যায় বিলের পরিবেশ। নানা প্রজাতির পাখ-পাখালির ডাকে ভিন্ন প্রাণের সঞ্চার হয় বিলটিতে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী এ বিলের আয়তন প্রায় ১ হাজার একর। কিন্তু বর্ষাকালে দুকুল ছাপিয়ে এর আয়তন বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার একর।

সাপাহার উপজেলা প্রশাসন জবই বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি নিমার্ন করেছেন নান্দনিক ভাস্কর্য ‘জবই বিল মাছ চত্বর’। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের নির্মিত মৎস্য সম্পদের প্রতীক চারটি মাছের সমন্বিত নান্দনিক ভাস্কর্য ‘জবই বিল মাছ চত্বর’। ভাস্কর্যটি ঈদুল ফিতরের ঠিক আগের দিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া বিলের মধ্যদিয়ে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে লাল, হলুদ, সাদা রঙে সুসজ্জিত সারি সারি পিলার, প্রবেশমুখে ‘জবই বিল’ লেখা সেলফি পয়েন্ট, রাস্তার দুধারে দৃষ্টিনন্দন বসার ১২টি বেঞ্চ, জবই ব্রিজের পশ্চিম পাশে নির্মিত ‘বিল বিলাস’ নামক দুটি ভিউ পয়েন্ট দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে বিল এলাকায় বসানো হয়েছে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র।

এক পর্যটক বলেন, গত এক বছরে ঐতিহ্যবাহী বিলের দৃশ্যপটটি পরিবর্তন হয়েছে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করা হয়েছে। বিলটি মৎস্য সম্পদে ভরপুর। আর এ বিষয়টি বিবেচনা করে জবই বিল মাছ চত্বর একটি নান্দনিক, শৈল্পিক ও আইকনিক স্থাপনা।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী জবই বিল দেশীয় প্রজাতির মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং পরিযায়ী ও দেশি পাখির জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর এ বিলটিকে সারা দেশে একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে স্থানীয় সকলের সহযোগিতায় আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।