আদালতের আদেশে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা এলাকায় শতাধিক ঘর-বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের শিকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, উচ্ছেদের সময় বাদিপক্ষ দুই শতাধিক লোকজন নিয়ে বাড়িঘরে প্রবেশ করে নদগ টাকা, স্বর্নালঙ্কারসহ দামিও আসবাবপত্র লুটপাট করেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাদিপক্ষ জানিয়েছেন, উচ্ছেদ করার ক্ষোভে তাদের বিরুদ্ধে লুটপাটের এমন মিথ্যে অভিযোগ করেছে দখলকারিরা।
মামলা সুত্রে জানা যায়, বরগুনা সদরের গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা মৌজায় এসএ রেকর্ডের মালিক ইয়াসিন ঘরামীর ২একর ৭০ শতাংশ জমির মালিক। ওয়ারিশ সূত্রে আফেজ উদ্দীন গং জমি ভোগদখল করে আসছিল। ১৯৮৬ সালে একই এলাকার আসমত আলী গং দলিল ফের ওই জমির মালিকানা দাবি করলে আফেজের ছেলে মন্নান গং ওই দলিল ভুয়া ও তা বাতিল চেয়ে বরগুনা আদালতে মামলা করেন। মামলায় ওই বছরই দলিল বাতিল করে মান্নান গংয়ের পক্ষে ডিক্রি জারি করে আদালত। ১৯৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর আসমত আলী গং রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে একই বছর ডিসেম্বর মাসে আদালত আপিলকারির পক্ষে রায় দিয়ে ডিক্রি জারি করে। ডিক্রির বিরুদ্ধে ১৬ অক্টোবর ১৯৯০ সালে মন্নান গং নিম্ম আদালতের রায় পুনবিবেচনার জন্য উচ্চাদালতে আপিল করেন। ১৯৯৫ সালের ৩ডিসেম্বর আদালত ডিক্রি বাতিল করে মান্নান গংয়ের পক্ষে রায় দেন। বিবাদী আসমত আলী গং এ রায় নিয়ে ১৯৯৬ সালে সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করলেও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে সুপ্রীম কোর্ট। সবশেষ সুপ্রীম কোর্টের আদেশের পর জমি-জমা বিক্রি করেন মন্নান গং জমি বিক্রি শুরু করেন এবং সেখানে শতাধিক ব্যক্তি জমি কিনে ক্রয় সূত্রে মালিকানায় ঘর-বাড়ি তৈরী করে ১৫ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। দির্ঘ ২৫ বছর পর ২০২১ সালে মুল মালিক মন্নান গংয়ের ৩০ জন অশিংদারের মধ্যে তিনজনকে ম্যানেজ করে ও ভাড়াটিয়া ৫জনসহ মোট আটজনকে বিবাদী করে মামলা করেন আসমত আলী গং। মুল বিবাদি ও জমির মালিক মন্নান গংকে মামলায় বিবাদী না করে তথ্য গোপন রেখে কৌশলে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে আদালত আসমত আলী গংয়ের পক্ষে রায় দেন। এর গতকাল ৭ মার্চ আদালতে জমি দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ আদেশ চেয়ে আবেদন করলে আদালত উচ্ছেদের আদেশ দেয়। আদেশ পাওয়ার সকাল ৯.৩০ টার দিকে পর নাজির ফারুক হোসেন পুলিশ নিয়ে গিয়ে লাল নিশান পুঁতে বেকু দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এসময় প্রায় শতাধিক বসতি উচ্ছেদ করা হয়। মন্নান গংয়ের কাছ থেকে জমি কিনে সেখানে শতাধিক ব্যক্তি কাঠ, সেমি পাকা ও পাকা ভবন তৈরী করে বসবাস করে আসছিলেন। জমির ক্রেতার শতাধিক ব্যক্তির বাড়িঘর উচ্ছেদের আওতায় গুড়িয়ে দেয়া হয়।
মনি আক্তার নামের এক নারী বলেন, উচ্ছেদের সময় আসমত আলী গংয়ের পক্ষের নাজমুল আহসান কুদ্দুসের তিন ছেলে সোহাগ, সাগর সুমন এবং কুদ্দুসের ভাতিজা হাবিব ও নাসিরের নেতৃত্বে প্রায় দুইশতাধিক ব্যক্তি লাঠিসোটা রামদা শাবল নিয়ে বাড়ি ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। এসময় তার ঘর থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা ও দুই ভরি সোনার গহনা লুট করা হয়েছে। সোহেল নামের আরেকজন বলেন, তিন ঘন্টার উচ্ছেদ অভিযানে শতাধিক বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। যার মধ্যে দোতালা ও একতলা পাকা ভবন, সেমিপাকা টিনশেড ঘর ও কাঠের ঘর ছিল। এছাড়াও আসবাবপত্রসহ ঘরে যা কিছু সব নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। রাশিদা বেগম নামের একজন বলেন, হঠাত করেই বেকু নিয়ে এসে কোনো সময় না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানোয় তাদের কেউ ঘরের কোনোকিছুই রক্ষা করতে পারেননি। সবকিছু গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং একই সাথে লুটপাট করে সব নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে শতাধিক পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আসমত আলী গংয়ের পক্ষে নাজমুল আহসান সোহাগ বলেন, আদালতের আদেশে পুলিশ ও নাজিরের উপস্থিতিতে নিয়মানুসারে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। লুটপাটের অভিযোগ মিথ্যে ও বানোয়াট। আমি বা আমরা কেউ কারো ঘরে প্রবেশ করিনি। বরগুনা যুগ্ম জেলা জজ আদালতের নাজির মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, মহামান্য আদালতের আদেশ নিয়মানুসারে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা আদালতের রায় অনুসারে সার্ভেয়ার নিয়ে গিয়ে জমি চিহ্নিত করে লাল নিশান পুঁতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখানে কোনোরকম পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়নি।