ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সকলে একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব: ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি শরীয়তপুরে ছেলের গাছের গোড়ার আঘাতে বাবা নিহত সেই ছেলে গ্রেফতার। ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক শিগগিরই ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা: শিবির সভাপতি চট্টগ্রাম নগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত, ২ নেতা বহিষ্কার সরকার পতনের পর এই প্রথম মুখ খুললেন সাদ্দাম-ইনান কিস্তির টাকা দিতে না পারায় গরু ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন এনজিও মাঠকর্মীরা রংপুরের মিঠাপুকুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ভোলায় শহীদ পরিবারদের কোটি টাকার সহায়তা দিল- জামায়াতে ইসলাম জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশন যোগ দিতে নিউইয়র্কে দৈনিক তরুণ কণ্ঠ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শান্ত

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেফতার ৩

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব পরিচয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুর ১২ টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের দেওয়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। কনস্টেবল নিয়োগে ৬ লক্ষ টাকার প্রতারণার করায় এ এ অভিযোগে এ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার লুন্দী এলাকার মৃত শাহাদাত হোসেনের ছেলে মেরাজুল ইসলাম ওরফে লায়ন মেরাজ (৪৬), একই এলাকার সুলতান খন্দকারের ছেলে জামান খন্দকার (৩৭), একই জেলার রায়েরকান্দি এলাকার সারোয়ার ফকিরের ছেলে মোহাম্মদ রিপন ফকির (৪৩)।

জেলা পুলিশ সুপার বলেন, গত ১১ ই ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলায় কনস্টেবল (টিআরসি) পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর জেলার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ একালার মরিময় বেগম ও তার স্বামী শরিফুল ইসলাম কামাল তাদের নাতি ফাহিমকে উক্ত পদের জন্য আবেদন করতে বলেন।

ফাহিম ডিগ্রী ১ম বর্ষের ছাত্র। সে ও উক্ত পদে নিয়োগের ইচ্ছা পোষন করে অনলাইনে আবেদন করেন। এরই মধ্যে শরিফুল তার অফিসের সহকর্মী আনোয়ারের মাধ্যমে জানতে পারে, লায়ন মেরাজ নামের একজন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আছেন।

যে তদবীর করলে বাদীনির নাতির পুলিশের চাকুরী হয়ে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বাদীনির স্বামী শরিফ তার সহকর্মী আনোয়ারের কাছ থেকে লায়ন মেরাজের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী তারিখে পুলিশের চাকরীর বিষয়ে কথা বলে এবং মেরাজের ব্যবহৃত হোয়াটঅ্যাপ-এ মরিময়ের নাতির পরীক্ষার প্রবেশ পত্রসহ যাবতীয় কাগজপত্র পাঠায়।

তাছাড়া চাকরী পেতে হলে ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ প্রদান করতে হবে বলে লায়ন মেরাজ জানালে বাদীনির স্বামী রাজি হয়। পবর্তীতে গত ১০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার পরিচয়ে (গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জামান খন্দকার ওরফে আলীমুজ্জামান) এক ব্যক্তি মরিময়ের স্বামীকে ফোন করে জানায়, আপানার নাতি ফাহিমের বিষয়ে তদবীর আছে। ৩ লক্ষ টাকায় হবে না, ৫ লক্ষ টাকা লাগবে। মরিময়ের স্বামী এতে রাজি হলে আসামীরা কয়েকটি বিকাশ ও নগদ নাম্বার দেয়।

উক্ত বিকাশ ও নগদ নাম্বারে মরিময় বেগম গত ১১ ফেব্রুয়ারী হতে ১৯ ফেব্রুয়ারী তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ৬ লক্ষ টাকা প্রদান করে। কিন্তু গত ২৭ ফেব্রুয়ারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দিলে উক্ত ফলাফলে নাতির নাম না থাকলে মরিময় বেগমের সন্দেহ হয়। তখন তিনি কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপারের সরকারী মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে উক্ত নাম্বারে যোগাযোগ করলে পুলিশ সুপার, এই বিষয়ে কিছু জানেনা বলে সরাসরি অফিসে আসতে বলেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারনার শিকার হয়েছেন।

উক্ত ঘটনায় বাদীনির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুরাদনগর থানায় প্রতারণা মামলা করে। পরে জেলা ডিবি পুলিশের সহযোগিতা ডিএমপি ঢাকা ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূল আসামী প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব পরিচয় প্রদানকারী গ্রেফতারকৃত আসামী মেরাজুল ইসলাম (লায়ন মেরাজ) এবং কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার পরিচয় দানকারী আসামী মোঃ জামান খন্দকার (আলীমুজ্জামান) সহ তাদের সহযোগী আসামী মোঃ রিপন ফকির’কে গ্রেফতার করে।

আসামীদের নিকট হতে আত্মসাৎকৃত টাকা এবং প্রতারনায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়েছে। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ হ্যালো পার্টির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের অফিসারদের নাম/পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছে। আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যালোচনায়ও উক্ত বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়। আসামীরা স্থানীয়ভাবে ‘হ্যালো টিম’ নামে পরিচিত।

এসময় তিনি আরো বলেন, এই প্রতারণার শিকার হবার মূল কারণ হচ্ছে লোভ। লোভের বশীভূত হয়ে প্রতারণার শিকার হবেন না। এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার আশফাকুজ্জামান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাজেশ বড়ুয়াসহ কর্মকর্তাবৃন্দ। গ্রেফতারকৃত আসামীরদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সকলে একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব: ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেফতার ৩

আপডেট সময় ০৪:০২:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব পরিচয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুর ১২ টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের দেওয়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। কনস্টেবল নিয়োগে ৬ লক্ষ টাকার প্রতারণার করায় এ এ অভিযোগে এ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার লুন্দী এলাকার মৃত শাহাদাত হোসেনের ছেলে মেরাজুল ইসলাম ওরফে লায়ন মেরাজ (৪৬), একই এলাকার সুলতান খন্দকারের ছেলে জামান খন্দকার (৩৭), একই জেলার রায়েরকান্দি এলাকার সারোয়ার ফকিরের ছেলে মোহাম্মদ রিপন ফকির (৪৩)।

জেলা পুলিশ সুপার বলেন, গত ১১ ই ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলায় কনস্টেবল (টিআরসি) পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর জেলার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ একালার মরিময় বেগম ও তার স্বামী শরিফুল ইসলাম কামাল তাদের নাতি ফাহিমকে উক্ত পদের জন্য আবেদন করতে বলেন।

ফাহিম ডিগ্রী ১ম বর্ষের ছাত্র। সে ও উক্ত পদে নিয়োগের ইচ্ছা পোষন করে অনলাইনে আবেদন করেন। এরই মধ্যে শরিফুল তার অফিসের সহকর্মী আনোয়ারের মাধ্যমে জানতে পারে, লায়ন মেরাজ নামের একজন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আছেন।

যে তদবীর করলে বাদীনির নাতির পুলিশের চাকুরী হয়ে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বাদীনির স্বামী শরিফ তার সহকর্মী আনোয়ারের কাছ থেকে লায়ন মেরাজের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী তারিখে পুলিশের চাকরীর বিষয়ে কথা বলে এবং মেরাজের ব্যবহৃত হোয়াটঅ্যাপ-এ মরিময়ের নাতির পরীক্ষার প্রবেশ পত্রসহ যাবতীয় কাগজপত্র পাঠায়।

তাছাড়া চাকরী পেতে হলে ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ প্রদান করতে হবে বলে লায়ন মেরাজ জানালে বাদীনির স্বামী রাজি হয়। পবর্তীতে গত ১০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার পরিচয়ে (গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জামান খন্দকার ওরফে আলীমুজ্জামান) এক ব্যক্তি মরিময়ের স্বামীকে ফোন করে জানায়, আপানার নাতি ফাহিমের বিষয়ে তদবীর আছে। ৩ লক্ষ টাকায় হবে না, ৫ লক্ষ টাকা লাগবে। মরিময়ের স্বামী এতে রাজি হলে আসামীরা কয়েকটি বিকাশ ও নগদ নাম্বার দেয়।

উক্ত বিকাশ ও নগদ নাম্বারে মরিময় বেগম গত ১১ ফেব্রুয়ারী হতে ১৯ ফেব্রুয়ারী তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ৬ লক্ষ টাকা প্রদান করে। কিন্তু গত ২৭ ফেব্রুয়ারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দিলে উক্ত ফলাফলে নাতির নাম না থাকলে মরিময় বেগমের সন্দেহ হয়। তখন তিনি কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপারের সরকারী মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে উক্ত নাম্বারে যোগাযোগ করলে পুলিশ সুপার, এই বিষয়ে কিছু জানেনা বলে সরাসরি অফিসে আসতে বলেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারনার শিকার হয়েছেন।

উক্ত ঘটনায় বাদীনির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুরাদনগর থানায় প্রতারণা মামলা করে। পরে জেলা ডিবি পুলিশের সহযোগিতা ডিএমপি ঢাকা ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূল আসামী প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব পরিচয় প্রদানকারী গ্রেফতারকৃত আসামী মেরাজুল ইসলাম (লায়ন মেরাজ) এবং কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার পরিচয় দানকারী আসামী মোঃ জামান খন্দকার (আলীমুজ্জামান) সহ তাদের সহযোগী আসামী মোঃ রিপন ফকির’কে গ্রেফতার করে।

আসামীদের নিকট হতে আত্মসাৎকৃত টাকা এবং প্রতারনায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়েছে। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ হ্যালো পার্টির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের অফিসারদের নাম/পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছে। আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যালোচনায়ও উক্ত বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়। আসামীরা স্থানীয়ভাবে ‘হ্যালো টিম’ নামে পরিচিত।

এসময় তিনি আরো বলেন, এই প্রতারণার শিকার হবার মূল কারণ হচ্ছে লোভ। লোভের বশীভূত হয়ে প্রতারণার শিকার হবেন না। এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার আশফাকুজ্জামান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাজেশ বড়ুয়াসহ কর্মকর্তাবৃন্দ। গ্রেফতারকৃত আসামীরদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।