ঢাকা ০১:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সকলে একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব: ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি শরীয়তপুরে ছেলের গাছের গোড়ার আঘাতে বাবা নিহত সেই ছেলে গ্রেফতার। ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক শিগগিরই ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা: শিবির সভাপতি চট্টগ্রাম নগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত, ২ নেতা বহিষ্কার সরকার পতনের পর এই প্রথম মুখ খুললেন সাদ্দাম-ইনান কিস্তির টাকা দিতে না পারায় গরু ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন এনজিও মাঠকর্মীরা রংপুরের মিঠাপুকুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ভোলায় শহীদ পরিবারদের কোটি টাকার সহায়তা দিল- জামায়াতে ইসলাম জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশন যোগ দিতে নিউইয়র্কে দৈনিক তরুণ কণ্ঠ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শান্ত

বিশ্বের শীতলতম শহরে জীবনযাপন যেভাবে

আমাদের দেশে শৈত্যপ্রবাহ হলেই জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়, নানা রকম দুর্ভোগ নেমে আসে। দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগ-বালাই। কিন্তু যে দেশে সারা বছরই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের (যে তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ গলে তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয়) নিচে থাকে তাদের জীবনযাত্রা কীভাবে চলে?, তারাও কি আমাদের মতো শীতে কাবু হয়ে পড়ে?

বিশ্বের শীতলতম শহর বলা হয় পূর্ব সাইবেরিয়ার ইয়াকুৎস্ককে, যা রাশিয়ার অধীন। বছরের বেশির ভাগ সময়েই সেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে।

সম্প্রতি ইয়াকুৎস্ক শহরে প্রবল ঠান্ডা পড়েছে। তাপমাত্রা পৌঁছেছে হিমাঙ্কের ৫০ ডিগ্রি নিচে। শেষ কবে এমন ‌ঠান্ডা পড়েছে, মনে করতে পারছেন না সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই।

dhakapost

সুমেরুবৃত্তের চেয়ে সাইবেরিয়ার এই শহরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে ইয়াকুৎস্ক। শহরের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত ইয়াকুৎস্ক শহরের তাপমাত্রার পারদ সবচেয়ে বেশি নেমে গিয়েছিল হিমাঙ্কের ৬৪ ডিগ্রি নিচে। এ বারেও সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় বাসিন্দারা।

dhakapost

হিমাঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রাতেই কীভাবে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিতে হয়, শীত কীভাবে সহ্য করতে হয়, জানেন ইয়াকুৎস্কের মানুষ। শীতকালে সেখানে প্রায়ই পারদ নেমে যায় হিমাঙ্কের ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি নিচে।

তবে এ বছরের শীতের তাপমাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। প্রবল শীতে জমে গিয়েছে গোটা শহর। নানা কৌশল অবলম্বনের পরেও হাড়কাঁপানো ঠান্ডাকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না।

dhakapost

তাপমাত্রা নিয়ে অবশ্য কোনও অভিযোগ, অনুযোগ বা হতাশা নেই ইয়াকুৎস্কের মানুষজনের। ঠান্ডায় তারা অভ্যস্ত। কী ভাবে দিন কাটান এই তাপমাত্রায়? জানিয়েছেন নিজেরাই।

রাশিয়ার একেবারে পূর্বে রাজধানী মস্কো থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইয়াকুৎস্ক। পৃথিবীর চিরহিমায়িত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে এই শহর।

২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ইয়াকুৎস্ক শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার। বাসিন্দাদের অধিকাংশ খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রাশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ইয়াকুৎস্ক।

dhakapost

ইয়াকুৎস্কের বাসিন্দা অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, ‘‘এই ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। হয় সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরতে হবে, নয়তো ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবে।’’

অন্তত দুটি মোটা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিলেন অ্যানাস্তেশিয়া। হাতে পরেছিলেন দুটি দস্তানা। সঙ্গে একাধিক টুপি ও সোয়েটারও ছিল তার পরনে।

কীভাবে ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা জোগান? অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, ‘‘এখানে ঠান্ডার অনুভূতিই হয় না অথবা, আমাদের মস্তিষ্কই ঠান্ডা সহ্য করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে।’’

ইয়াকুৎস্কের রাস্তাঘাটে হামেশাই বরফ জমে থাকে। তার ওপর দিয়েই চলাফেরা করেন সবাই। শহর ঠান্ডায় জমে গেলেও জীবনপ্রবাহ সচল।

বরফে ঢাকা রাস্তার ওপর বরফে জমে যাওয়া মাছ বিক্রি করতে বসেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মাছ তাজা রাখতে রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন হয় না। শীতলতম শহরে দিব্যি চলে শীতের বিকিকিনি।

গুচ্ছ গুচ্ছ গরম পোশাক পরাই ইয়াকুৎস্ক শহরে জীবন অতিবাহিত করার প্রধান এবং একমাত্র চাবিকাঠি, জানান স্থানীয়রা। তারা সবাইই ‘বাঁধাকপির মতো পোশাক’ পরেন।

বাঁধাকপিতে থাকে পাতার অজস্র স্তর। একটি একটি করে সেই স্তর খুলে ফেলা যায়। অনেক পাতা একত্রে জমাট বেঁধে বাঁধাকপি তৈরি হয়।

ইয়াকুৎস্ক শহরের বাসিন্দারাও রোজ এই বাঁধাকপির মতো পোশাকেই আরাম খুঁজে নেন। পুরু আস্তরণযুক্ত গরম উলের তৈরি একাধিক পোশাক গায়ে চাপান তারা। বরফের মধ্যে সে ভাবেই কাটিয়ে দেন দিন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সকলে একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব: ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি

বিশ্বের শীতলতম শহরে জীবনযাপন যেভাবে

আপডেট সময় ০২:২৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৩

আমাদের দেশে শৈত্যপ্রবাহ হলেই জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়, নানা রকম দুর্ভোগ নেমে আসে। দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের শীতজনিত রোগ-বালাই। কিন্তু যে দেশে সারা বছরই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের (যে তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ গলে তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয়) নিচে থাকে তাদের জীবনযাত্রা কীভাবে চলে?, তারাও কি আমাদের মতো শীতে কাবু হয়ে পড়ে?

বিশ্বের শীতলতম শহর বলা হয় পূর্ব সাইবেরিয়ার ইয়াকুৎস্ককে, যা রাশিয়ার অধীন। বছরের বেশির ভাগ সময়েই সেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে।

সম্প্রতি ইয়াকুৎস্ক শহরে প্রবল ঠান্ডা পড়েছে। তাপমাত্রা পৌঁছেছে হিমাঙ্কের ৫০ ডিগ্রি নিচে। শেষ কবে এমন ‌ঠান্ডা পড়েছে, মনে করতে পারছেন না সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই।

dhakapost

সুমেরুবৃত্তের চেয়ে সাইবেরিয়ার এই শহরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে ইয়াকুৎস্ক। শহরের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত ইয়াকুৎস্ক শহরের তাপমাত্রার পারদ সবচেয়ে বেশি নেমে গিয়েছিল হিমাঙ্কের ৬৪ ডিগ্রি নিচে। এ বারেও সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় বাসিন্দারা।

dhakapost

হিমাঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রাতেই কীভাবে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিতে হয়, শীত কীভাবে সহ্য করতে হয়, জানেন ইয়াকুৎস্কের মানুষ। শীতকালে সেখানে প্রায়ই পারদ নেমে যায় হিমাঙ্কের ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি নিচে।

তবে এ বছরের শীতের তাপমাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। প্রবল শীতে জমে গিয়েছে গোটা শহর। নানা কৌশল অবলম্বনের পরেও হাড়কাঁপানো ঠান্ডাকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না।

dhakapost

তাপমাত্রা নিয়ে অবশ্য কোনও অভিযোগ, অনুযোগ বা হতাশা নেই ইয়াকুৎস্কের মানুষজনের। ঠান্ডায় তারা অভ্যস্ত। কী ভাবে দিন কাটান এই তাপমাত্রায়? জানিয়েছেন নিজেরাই।

রাশিয়ার একেবারে পূর্বে রাজধানী মস্কো থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইয়াকুৎস্ক। পৃথিবীর চিরহিমায়িত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে এই শহর।

২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ইয়াকুৎস্ক শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার। বাসিন্দাদের অধিকাংশ খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রাশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ইয়াকুৎস্ক।

dhakapost

ইয়াকুৎস্কের বাসিন্দা অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, ‘‘এই ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। হয় সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরতে হবে, নয়তো ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবে।’’

অন্তত দুটি মোটা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিলেন অ্যানাস্তেশিয়া। হাতে পরেছিলেন দুটি দস্তানা। সঙ্গে একাধিক টুপি ও সোয়েটারও ছিল তার পরনে।

কীভাবে ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা জোগান? অ্যানাস্তেশিয়া বলেন, ‘‘এখানে ঠান্ডার অনুভূতিই হয় না অথবা, আমাদের মস্তিষ্কই ঠান্ডা সহ্য করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে।’’

ইয়াকুৎস্কের রাস্তাঘাটে হামেশাই বরফ জমে থাকে। তার ওপর দিয়েই চলাফেরা করেন সবাই। শহর ঠান্ডায় জমে গেলেও জীবনপ্রবাহ সচল।

বরফে ঢাকা রাস্তার ওপর বরফে জমে যাওয়া মাছ বিক্রি করতে বসেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মাছ তাজা রাখতে রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন হয় না। শীতলতম শহরে দিব্যি চলে শীতের বিকিকিনি।

গুচ্ছ গুচ্ছ গরম পোশাক পরাই ইয়াকুৎস্ক শহরে জীবন অতিবাহিত করার প্রধান এবং একমাত্র চাবিকাঠি, জানান স্থানীয়রা। তারা সবাইই ‘বাঁধাকপির মতো পোশাক’ পরেন।

বাঁধাকপিতে থাকে পাতার অজস্র স্তর। একটি একটি করে সেই স্তর খুলে ফেলা যায়। অনেক পাতা একত্রে জমাট বেঁধে বাঁধাকপি তৈরি হয়।

ইয়াকুৎস্ক শহরের বাসিন্দারাও রোজ এই বাঁধাকপির মতো পোশাকেই আরাম খুঁজে নেন। পুরু আস্তরণযুক্ত গরম উলের তৈরি একাধিক পোশাক গায়ে চাপান তারা। বরফের মধ্যে সে ভাবেই কাটিয়ে দেন দিন।