ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে রাতে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার করার কারণে কোনও রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচন বয়কট করবে না। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে আসবে। কেননা, ইভিএম নিয়ে দলগুলোর অন্তরে বিশ্বাস আছে, মুখে নেই। হয়তো সেটা তাদের কৌশল হতে পারে।’
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে। এগুলো নিয়ে অনেকেই অপপ্রচার করছেন। হয়তো জীবনে কোনও দিন দেখেননি, তারা টিভিতে কথা বলছেন। যারা পক্ষে বলছেন, তারাও ভুল বলছেন। সব মিলে ইভিএম নিয়ে ভুল তথ্য যাচ্ছে। তাই এটা নিয়ে আমরা ম্যাসিভ প্রচারণা চালাবো। কীভাবে প্রচার হবে, সেই বিষয়ে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ইসির সভায় আলোচনা হবে।
মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা মনে করছি, প্রশ্ন-উত্তর আকারে ভিডিও তৈরি করা হবে এবং তা প্রচার করা হবে।’ এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘ইভিএমে ওভাররাইট করার সুযোগ নেই। এখানে ওভাররাইটের বিষয়ও নেই। কারও আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রথমে সংশ্লিষ্ট ভোটারের এনআইডি নম্বর মিলিয়ে দেখেন। পরে তাকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেন। অথচ টকশোতে বলা হচ্ছে—ওভাররাইট করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এটাকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারেন। কিন্তু আপনারা এসে দেখেন, যে ইভিএম চাইবেন আপনাদের সেটাই পরীক্ষা করতে দেবো, দেশ-বিদেশের এক্সপার্ট নিয়ে আসেন, দেখেন। আবার বলা হয়, মামলা হলে কীসের ভিত্তিতে হবে। ইভিএমে তো ভিভিপ্যাট নেই। আমাদের ইভিএমে এর চেয়ে উন্নত ব্যবস্থা আছে। ডিজিটালি থাকে সেটা। নির্বাচনের পর মামলা করার সময় (এক বছর) পর্যন্ত তা সিলগালা অবস্থায় থাকবে। যে কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করেন, তবে আদালতে সেই সিলগালা করা বস্তা নিয়ে হাজির হবেন সংশ্লিষ্টরা। আদালতের সামনে তা খোলা হবে। তখন প্রিন্ট দিলেই দেখা যাবে কোন মার্কায়, কখন, কত ভোট পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএমে বিশ্বাস কিন্তু ভোটাররা করেন। কোথাও দেখেছেন এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে, মিছিল করতে? যারা লিখছেন তারা তো ইভিএম দেখেননি, শুনেননি। তারপরও লিখে ফেলছেন।’ মো. আলমগীর বলেন, ‘ইভিএমটা আসলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করছি। আমরা পারলে ৩০০ আসনেই করতাম। ওই তো বললাম, টাকা নাই। আবার ট্রেনিং সম্পন্ন করতে পারবো না। আমরা যদি আরও দুই বছর আগে দায়িত্বে আসতাম, তাহলে ৩০০ আসনে করতাম।’
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের টার্গেট সুষ্ঠু নির্বাচন করা। ইভিএমে ব্যালট ছিনতাই, জালভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। কোনও মাস্তানি করার সুযোগ নেই। তাই যেখানে ইভিএমে ভোট হবে, ওখানে দুষ্টু লোকেরা যাবে না। যাবে ওখানে, যেখানে ব্যালট পেপারে ভোট হবে। আমরা সেজন্যই ব্যালটে যেখানে হবে, সেখানে ফোর্স বেশি মোতায়েন করবো। আমাদের ওই ফোর্স এখানে দিতে হতো, সেগুলো ইভিএমের আসনগুলোতে অত লাগবে না, তাই সেগুলো আমরা ব্যালটের ওখানে দেবো।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তো কথা বলতে পারি না। একটি বড় দল, তার সঙ্গে আরও চারটি দল সরাসরি ইভিএম চেয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে আরও সব মিলিয়ে ১৭টি দল চাচ্ছে। তবু বলা হচ্ছে—ইভিএম নিয়ে মতামত পাল্টে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা লিখলেন তারা কি প্রমাণ করতে পেরেছেন? কে সত্য, কে মিথ্যা বলছে তা বলবো না। ইভিএম নিয়ে আমরা যেটা বলছি তা সত্য। ইভিএমে ভোট ডাকাতির সুযোগ নেই। রাতে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই।’
মো. আলমগীর বলেন, ‘ইভিএমে প্রাথমিক ব্যয় বেশি। একটা ব্যালট কিন্তু ছাপাতে হয়, ক্যারি করতে হয়, প্রচুর খরচ আছে। ইভিএমে একবার খরচ হয়। এরপর এটা কিন্তু আমরা নানা নির্বাচনে ব্যবহার করি। ওই মামলা করার জন্য যে সময় থাকে, ওই সময় পর্যন্ত আমরা ওই ইভিএমটা রেখে দিই। সেই সময় শেষ হলেই কেবল আরেকটা নির্বাচনে ওই ইভিএমটা ব্যবহার করি। ইভিএমের লাইফ টাইম ১০-১৫ বছর পর্যন্ত আছে। এটা তো কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও ব্যবহার করছি। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেছি। এই কমিশন আসার পর একটা নির্বাচনও ব্যালটে করিনি।’
ইভিএম নিয়ে দলগুলোর আস্থাহীনতার বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘১২ কোটি ভোটারের পরিপূর্ণ আস্থা আছে। হয়তো দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল আছে। তবে তাদেরও অন্তরে বিশ্বাস আছে, মুখে (বাইরে) নেই। কারণ, অনেক দলই বিপক্ষে কথা বলছে, কিন্তু আমাদের কাছে যখন আনঅফিসিয়ালি আসেন, তখন পক্ষে বলেন। একটি দলের একজন সংসদ সদস্য আমাদের কাছে এসে লিখিত দরখাস্ত করেছেন তার এলাকায় ইভিএম দেওয়ার জন্য। কাজেই এটা অন্তরে আছে, তারা ইভিএম বিশ্বাস করেন।’
ইভিএমের ভোটে সবাই নির্বাচনে আসবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, তাতে সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী। ৩৯টি দল আছে, তারা সকলেই আসবে বলে আশা করি। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি মনে করেন, অন্য দলের সঙ্গে নির্বাচন করবে; অথবা অন্য একটি দলকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করবেন না, এমনটাও তো হতে পারে। আমরা অবশ্যই ভোটের পরিবেশ তৈরি করবো। আমাদের ভেতরে ও বাইরে এক। আলাদা নেই কিছু। রোডম্যাপে আমাদের চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলার কথা উল্লেখ করেছি। কোনও কমিশনই কি এর আগে তা করেছে? আমরা কনফিডেন্ট এজন্য যে এই রোডম্যাপ আমরা বাস্তবায়ন করবো। বাস্তবায়ন করলে সবাই আসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহারের কারণে কোনও দল নির্বাচন বয়কট করবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি, করবে না বলে মনে করি।’ জেলা পরিষদ নির্বাচনে জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো এবং প্রার্থীর প্রস্তাবক-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে মনোনয়নপত্রে সই না দেওয়ার বিষয় স্বীকার করানো হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে দেখবো। প্রমাণ হলে নির্বাচন হওয়ার পরেও ব্যবস্থা নিতে পারবো। প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তথ্য তাৎক্ষণিক জানাতে আমরা একটি অ্যাপ তৈরির চিন্তা করছি। এটা তৈরি হলে ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিক এই অ্যাপে দেখতে পাবেন।’