ঢাকা ১০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঁজিবাজার সুস্থ হওয়ার আগে ফ্লোর প্রাইস উঠবে না

আস্থা ও তারল্য সংকটে থাকা পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনের লক্ষ্যে ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিএসইসির আগারগাঁওয়ের হল রুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সবার কথা শুনেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এ সময় তিনি উপস্থিত সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন যে, পুঁজিবাজার হেলদি কিংবা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস তুলবেন না।

 

সবার বক্তব্য শুনে সমাপনী বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এই মুহূর্তে দুর্বল আছি। সুস্থ হলে তারপর ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেব।এ বিষয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বৈঠকে বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে ব্যাংকের এক্সপোজারে বাহিরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি এগুলো নিয়ে চেষ্টা করব। এছাড়াও কয়েকজন ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আলোচনা করেন। আমি সবার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা এই মুহূর্তে দুর্বল আছি। সুস্থ হওয়ার আগে এগুলো নিয়ে চিন্তা করছি না। আগে সুস্থ হব তারপর উঠিয়ে দেব। এটা সবাইকে বলে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ না, তারপরও কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করতেছি মার্কেটকে ঠিক করতে। ব্যাংক, ব্রোকার হাউজ ও ব্যক্তি বড় বড় বিনিয়োগকারীদের অনেককে অনুরোধ করে মার্কেটে ফান্ড বাড়াচ্ছি। কারণ এখানে এলে মিসিং কিছু নেই, এখানে শুধু মুমেন্টাম আনার দরকার।

আজকে সবাইকে ডেকে বললাম আমরা চেষ্টা করতেছি, আপনারাও যার যা অবস্থান থেকে যতটুকু পারেন করেন। আমাদের কিছু না, মার্কেটে যদি একটু গতি নিয়ে আসতে পারি তবে সব ঠিক হয়ে যাবে। এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা ঠিক করার মতো। যদি ঠিক করার মতো সমস্যা থাকতো  তা হলে আমরা ঠিক করে ফেলতাম। জাস্ট আমরা যারা সাইড লাইনে বসে আছি, ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সবাইকে রিকুয়েস্ট করলাম আসুন সবাই মিলে এটাকে একটু একটু করে ঠিক করি। সবাইকে বুঝাতে চেয়েছি।

যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অর্থনীতিক সমস্যার কারণে মানুষ এখন বিনিয়োগমুখী না। তবে এবছর আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। এই জন্য মানুষের মন মানসিকতা পরিবর্ত করে মুমেন্টাম আনার চেষ্টা করছি। এটাই হলো কাজ। গত দুদিন কিছু কাজ হয়েছে, সূচকও বাড়ছে। দেড়শ থেকে দুই’শ আজকে (বুধবার) ৩’শ কোটি টাকা হয়েছে। আমরা এটাতে দু একদিনের মধ্যে ৫ থেকে ৬’শ কোটিতে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। এটার জন্য সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে ডিএসই ও সিএসই চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি ও সংস্থাটির সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ, ব্রোকারেজ হাউজের মালিকদের সংগঠন ডিবিএ, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদেরও বৈঠকে ডাকা হয় এতে। ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবি, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদেরও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

গত ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্থনীতি নিয়ে যে উদ্বেগ, তার প্রভাব পুঁজিবাজারে স্পষ্ট। ২৮ জুলাই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর বিএসইসি দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়। এরপর মাস ‍দুয়েক উত্থান ও ব্যাপক লেনদেন হলেও অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় ভাটার টান। ডিসেম্বরে দেখা দেয় লেনদেনের খরা। একপর্যায়ে লেনদেন নেমে আসে দুইশ কোটি টাকার ঘরে। চাঙা পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানিতেই এর চেয়ে বেশি লেনদেন দেখা গেছে।

এর মধ্যে ডিসেম্বরের শেষে বিএসইসি ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর তুলে দিয়ে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ ঠিক করে দেয়। কিন্তু এতে লাভ হয়নি, উল্টো হয় বুমেরাং। কেউ কেউ মনে করতে থাকে বাকি কোম্পানিরও ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে এভাবে। এতে শেয়ার কেনায় আগ্রহ আরও কমে যায়। নতুন বছরের প্রথম তিন কর্মদিবস লেনদেন নেমে আসে দুইশ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে এই বৈঠকটি ডাকা হয়। বৈঠকের দিনও পুঁজিবাজারে সূচক ১৭ পয়েন্ট এবং লেনদেন বেড়েছে একশ কোটি টাকার মতো, তবে এখনও তা তিনশ কোটি টাকার কম।

লেনদেন তলানিতে নামার কারণে মূলত ভালো নেই কোনো পক্ষ। কমিশন প্রায় শূন্যে নামায় কর্মীদের বেতন পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় ব্রোকারেজ হাউজ। ডিএসই ও সিএসই এবং সরকারের রাজস্বও যাচ্ছে কমে। যারা মার্জিন ঋণ দেয়, তাদের অবস্থাও ভালো নয়। কারণ, নতুন করে কেউ ঋণ নিতে চাইছে না, শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় আগের ঋণও পরিশোধ হচ্ছে না।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, সবাইকে সবার জায়গা থেকে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক রোল প্লে করার কথা বলা হয়েছে। আর দেশের পুঁজিবাজার ভালো করার জন্য সব পক্ষ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কমিশন সব পরামর্শের নোট নিয়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুঁজিবাজার সুস্থ হওয়ার আগে ফ্লোর প্রাইস উঠবে না

আপডেট সময় ১২:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

আস্থা ও তারল্য সংকটে থাকা পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনের লক্ষ্যে ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিএসইসির আগারগাঁওয়ের হল রুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সবার কথা শুনেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এ সময় তিনি উপস্থিত সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন যে, পুঁজিবাজার হেলদি কিংবা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস তুলবেন না।

 

সবার বক্তব্য শুনে সমাপনী বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এই মুহূর্তে দুর্বল আছি। সুস্থ হলে তারপর ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেব।এ বিষয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বৈঠকে বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে ব্যাংকের এক্সপোজারে বাহিরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি এগুলো নিয়ে চেষ্টা করব। এছাড়াও কয়েকজন ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আলোচনা করেন। আমি সবার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা এই মুহূর্তে দুর্বল আছি। সুস্থ হওয়ার আগে এগুলো নিয়ে চিন্তা করছি না। আগে সুস্থ হব তারপর উঠিয়ে দেব। এটা সবাইকে বলে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ না, তারপরও কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করতেছি মার্কেটকে ঠিক করতে। ব্যাংক, ব্রোকার হাউজ ও ব্যক্তি বড় বড় বিনিয়োগকারীদের অনেককে অনুরোধ করে মার্কেটে ফান্ড বাড়াচ্ছি। কারণ এখানে এলে মিসিং কিছু নেই, এখানে শুধু মুমেন্টাম আনার দরকার।

আজকে সবাইকে ডেকে বললাম আমরা চেষ্টা করতেছি, আপনারাও যার যা অবস্থান থেকে যতটুকু পারেন করেন। আমাদের কিছু না, মার্কেটে যদি একটু গতি নিয়ে আসতে পারি তবে সব ঠিক হয়ে যাবে। এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা ঠিক করার মতো। যদি ঠিক করার মতো সমস্যা থাকতো  তা হলে আমরা ঠিক করে ফেলতাম। জাস্ট আমরা যারা সাইড লাইনে বসে আছি, ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সবাইকে রিকুয়েস্ট করলাম আসুন সবাই মিলে এটাকে একটু একটু করে ঠিক করি। সবাইকে বুঝাতে চেয়েছি।

যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অর্থনীতিক সমস্যার কারণে মানুষ এখন বিনিয়োগমুখী না। তবে এবছর আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। এই জন্য মানুষের মন মানসিকতা পরিবর্ত করে মুমেন্টাম আনার চেষ্টা করছি। এটাই হলো কাজ। গত দুদিন কিছু কাজ হয়েছে, সূচকও বাড়ছে। দেড়শ থেকে দুই’শ আজকে (বুধবার) ৩’শ কোটি টাকা হয়েছে। আমরা এটাতে দু একদিনের মধ্যে ৫ থেকে ৬’শ কোটিতে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। এটার জন্য সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে ডিএসই ও সিএসই চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি ও সংস্থাটির সব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ, ব্রোকারেজ হাউজের মালিকদের সংগঠন ডিবিএ, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদেরও বৈঠকে ডাকা হয় এতে। ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবি, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদেরও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

গত ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্থনীতি নিয়ে যে উদ্বেগ, তার প্রভাব পুঁজিবাজারে স্পষ্ট। ২৮ জুলাই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর বিএসইসি দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দিয়ে সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়। এরপর মাস ‍দুয়েক উত্থান ও ব্যাপক লেনদেন হলেও অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় ভাটার টান। ডিসেম্বরে দেখা দেয় লেনদেনের খরা। একপর্যায়ে লেনদেন নেমে আসে দুইশ কোটি টাকার ঘরে। চাঙা পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানিতেই এর চেয়ে বেশি লেনদেন দেখা গেছে।

এর মধ্যে ডিসেম্বরের শেষে বিএসইসি ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর তুলে দিয়ে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ ঠিক করে দেয়। কিন্তু এতে লাভ হয়নি, উল্টো হয় বুমেরাং। কেউ কেউ মনে করতে থাকে বাকি কোম্পানিরও ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে এভাবে। এতে শেয়ার কেনায় আগ্রহ আরও কমে যায়। নতুন বছরের প্রথম তিন কর্মদিবস লেনদেন নেমে আসে দুইশ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে এই বৈঠকটি ডাকা হয়। বৈঠকের দিনও পুঁজিবাজারে সূচক ১৭ পয়েন্ট এবং লেনদেন বেড়েছে একশ কোটি টাকার মতো, তবে এখনও তা তিনশ কোটি টাকার কম।

লেনদেন তলানিতে নামার কারণে মূলত ভালো নেই কোনো পক্ষ। কমিশন প্রায় শূন্যে নামায় কর্মীদের বেতন পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় ব্রোকারেজ হাউজ। ডিএসই ও সিএসই এবং সরকারের রাজস্বও যাচ্ছে কমে। যারা মার্জিন ঋণ দেয়, তাদের অবস্থাও ভালো নয়। কারণ, নতুন করে কেউ ঋণ নিতে চাইছে না, শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় আগের ঋণও পরিশোধ হচ্ছে না।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, সবাইকে সবার জায়গা থেকে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক রোল প্লে করার কথা বলা হয়েছে। আর দেশের পুঁজিবাজার ভালো করার জন্য সব পক্ষ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কমিশন সব পরামর্শের নোট নিয়েছে।