ঢাকা ১১:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মজিবর

মানিকগঞ্জ সদর এলাকার চাঞ্চল্যকর নবু প্রামাণিক হত্যা মামলার দীর্ঘ ২৪ বছরের পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. মজিবরকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৪)।

সোমবার (২ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাবের একটি দল। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে র‍্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মাজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণের ভিত্তিতে মাজহারুল ইসলাম বলেন, মো. মজিবর ও ভিকটিম নবু প্রামাণিক উভয়ই মানিকগঞ্জ জেলার নারীকুলী গ্রামে বসবাস করতেন। সেই সুবাদে তাদের মধ্যকার সুসম্পর্ক ছিল। বিগত ১৯৯৮ সালের ১৬ নভেম্বর ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে নবু প্রামাণিকের ছেলে মো. বাদশার সঙ্গে মজিবরের চাচাতো শ্যালক মো. বরকতের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের  সূত্র ধরে নবু প্রামাণিকের স্ত্রী নুর নাহারের সঙ্গে মজিবরের স্ত্রী জুলেখার মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাগবিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে এই ঝগড়া থামানোর জন্য নবু প্রামাণিক চেষ্টা করে। কিন্তু এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত মো. মজিবর, ছমির, আলতাফ, লেবু, জামাল এবং আব্বাছ লাঠি-শাবলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভিকটিম নবু প্রামাণিকের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। মজিবরের হাতে থাকা নৌকার কাঠের বৈঠা দিয়ে নবু প্রামাণিককে আঘাত করলে নবু প্রামাণিকের মাথার মগজ বের হয়ে যায়।

এর পর নুর নাহার বাদী হয়ে মো. মজিবরসহ সর্বমোট ৭ জনকে আসামি করে একই দিন মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর মো. মজিবর ছাড়া বাকি এজাহারনামীয় সব আসামিকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই মজিবর আত্মগোপনে ছিলেন।

এদিকে মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামি মো. মজিবরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এছাড়া এজাহারনামীয় বাকি ৬ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলার পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে নবু প্রামাণিক হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. মজিবরকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। মো. মজিবর মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই গত ২৪ বছর পলাতক ছিলেন।

তিনি আরও বলেন,  ১৯৯৮ সালের পর থেকে মজিবর কোনোদিন মানিকগঞ্জে অবস্থান করেননি। গত ২৪ বছর ধরে আসামি মজিবর নাম পরিবর্তন করে মো. কালাম নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করতেন। প্রথমদিকে সে দিনমজুর, রিকশাচালক হিসেবে কাজ করেন। পরে সে মোহাম্মদপুরের আদাবর থানা এলাকায় মাছ ধরে আত্মগোপনে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

২৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মজিবর

আপডেট সময় ০৩:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৩

মানিকগঞ্জ সদর এলাকার চাঞ্চল্যকর নবু প্রামাণিক হত্যা মামলার দীর্ঘ ২৪ বছরের পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. মজিবরকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৪)।

সোমবার (২ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাবের একটি দল। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে র‍্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মাজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণের ভিত্তিতে মাজহারুল ইসলাম বলেন, মো. মজিবর ও ভিকটিম নবু প্রামাণিক উভয়ই মানিকগঞ্জ জেলার নারীকুলী গ্রামে বসবাস করতেন। সেই সুবাদে তাদের মধ্যকার সুসম্পর্ক ছিল। বিগত ১৯৯৮ সালের ১৬ নভেম্বর ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে নবু প্রামাণিকের ছেলে মো. বাদশার সঙ্গে মজিবরের চাচাতো শ্যালক মো. বরকতের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের  সূত্র ধরে নবু প্রামাণিকের স্ত্রী নুর নাহারের সঙ্গে মজিবরের স্ত্রী জুলেখার মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বাগবিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে এই ঝগড়া থামানোর জন্য নবু প্রামাণিক চেষ্টা করে। কিন্তু এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত মো. মজিবর, ছমির, আলতাফ, লেবু, জামাল এবং আব্বাছ লাঠি-শাবলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভিকটিম নবু প্রামাণিকের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। মজিবরের হাতে থাকা নৌকার কাঠের বৈঠা দিয়ে নবু প্রামাণিককে আঘাত করলে নবু প্রামাণিকের মাথার মগজ বের হয়ে যায়।

এর পর নুর নাহার বাদী হয়ে মো. মজিবরসহ সর্বমোট ৭ জনকে আসামি করে একই দিন মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর মো. মজিবর ছাড়া বাকি এজাহারনামীয় সব আসামিকে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই মজিবর আত্মগোপনে ছিলেন।

এদিকে মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামি মো. মজিবরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এছাড়া এজাহারনামীয় বাকি ৬ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলার পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে নবু প্রামাণিক হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মো. মজিবরকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। মো. মজিবর মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই গত ২৪ বছর পলাতক ছিলেন।

তিনি আরও বলেন,  ১৯৯৮ সালের পর থেকে মজিবর কোনোদিন মানিকগঞ্জে অবস্থান করেননি। গত ২৪ বছর ধরে আসামি মজিবর নাম পরিবর্তন করে মো. কালাম নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করতেন। প্রথমদিকে সে দিনমজুর, রিকশাচালক হিসেবে কাজ করেন। পরে সে মোহাম্মদপুরের আদাবর থানা এলাকায় মাছ ধরে আত্মগোপনে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।