রাষ্ট্রপতির ৭৬ নং আদেশে ১৯৭২ সালে গঠিত হয়েছিল অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের নেতৃত্বে দেওয়া সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দীর্ঘ পথচলায় ৫০ বছরে এসে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ১৪০০ গুন। যার ওপর ভর করে ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীলতা পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। সেই আত্মনির্ভরশীলতায় নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর দীর্ঘ ৫০ বছর পেরিয়ে অবশেষে নিজের বাড়িতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বারবার সময় পরিবর্তনের পর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ১২ তলা বিশিষ্ট রাজস্ব ভবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে রাজস্ব সম্মেলন।
নতুন আধুনিক জাতীয় রাজস্ব ভবনটি ২০ তলা ফাউন্ডেশনে নির্মিত হলেও বর্তমানে ১২ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হয়েছে। ভবনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধা-সংবলিত। ভবনের মোট আয়তন ছয় লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা ১৩ ফুট। বেজমেন্টের আয়তন ৬৬ হাজার বর্গফুট। নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট করে। পঞ্চম থেকে বাকি সব তলার আয়তন ৪৬ হাজার বর্গফুট।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের সব অফিসের পাশাপাশি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিইসি), কর জরিপ দপ্তর, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-কর), বৃহৎ করদাতা ইউনিটসহ (এলটিইউ-ভ্যাট), কর আপিলাতসহ কয়েকটি কর অঞ্চলের কার্যালয় আগারগাঁওয়ের নতুন ভবনে চলে যাবে।
নতুন আধুনিক জাতীয় রাজস্ব ভবনটি ২০ তলা ফাউন্ডেশনে নির্মিত হলেও বর্তমানে ১২ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হয়েছে। ভবনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধা-সংবলিত। ভবনের মোট আয়তন ছয় লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা ১৩ ফুট। বেজমেন্টের আয়তন ৬৬ হাজার বর্গফুট। নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট করে। পঞ্চম থেকে বাকি সব তলার আয়তন ৪৬ হাজার বর্গফুট।
নতুন রাজস্ব ভবনে যেসব সুবিধা থাকছে
ভবনের সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। আটটি লিফট রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি সাধারণ ও দুটি ফায়ার লিফট। রয়েছে ৫১০ আসনের মাল্টিপারপাস হল, রেভিনিউ আর্কাইভ, লাইব্রেরি, রেকর্ডরুম, সেন্ট্রাল ডেটা প্রসেসিং সেন্টার ও সার্ভার স্পেস। কম্পিউটার ল্যাব, ট্রেনিং সেন্টার, কমার্শিয়াল ব্যাংক শাখা, এটিএম, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, স্টেশনারি শপ, বার লাউঞ্জ, প্রতি তলায় গ্রিন স্পেস ও স্মোকিং জোন থাকবে। সুবিধার মধ্যে আরও রয়েছে সার্বক্ষণিক জেনারেটর সুবিধা, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিকিউরিটি সিস্টেম, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনদের প্রবেশ, নির্গমন ও চলাচলের ব্যবস্থা, জরুরি অবস্থায় প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, ক্যাফেটেরিয়া, কল সেন্টার, ডে-কেয়ার সেন্টার, মিডিয়া সেন্টার, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, প্রতি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক টয়লেট জোন প্রভৃতি।
ষষ্ঠ তলায় বোর্ড প্রশাসন, সব প্রথম সচিব ও কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় সচিবের দপ্তর থাকবে। সপ্তম তলাজুড়ে থাকবে দ্বিতীয় সচিবদের দপ্তর। অষ্টম তলায় কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ও এনবিআরের আইসিটি শাখা থাকবে। নবম তলায় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও ভ্যাট) থাকবে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় থাকবে সেবাকেন্দ্র, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, কল সেন্টার, বার লাউঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, রেকর্ডরুম ও স্টেশনারি শপ। দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য থাকবে চলন্ত সিঁড়ি। তৃতীয় তলায় থাকবে মাল্টিপারপাস হল, এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান শাখা, ডে-কেয়ার সেন্টার, লাইব্রেরি ও রেভিনিউ আর্কাইভ।
চতুর্থ তলায় অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর চেম্বার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এবং এনবিআরের ছয় সদস্যের দপ্তর থাকবে। পঞ্চম তলায় থাকছে চেয়ারম্যান ও ১২ সদস্যের দপ্তর।
ষষ্ঠ তলায় বোর্ড প্রশাসন, সব প্রথম সচিব ও কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় সচিবের দপ্তর থাকবে। সপ্তম তলাজুড়ে থাকবে দ্বিতীয় সচিবদের দপ্তর। অষ্টম তলায় কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ও এনবিআরের আইসিটি শাখা থাকবে। নবম তলায় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও ভ্যাট) থাকবে।
১০ম তলায় আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, ১১তম তলায় ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল থাকবে। ১২তম তলায় আয়কর ও ভ্যাট আপিল দপ্তর থাকবে। দুটি বেইজমেন্টে ২৪৬টি কার ও ১৭২টি মোটরসাইকেল পার্কিং সুবিধা রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও কর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরো ভবনের কাজ শেষ। করোনা আর লকডাউনের সময় কাজের গতি কিছুটা কম ছিল। আমাদের দিক থেকে ভবনটি বুঝিয়ে দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইতোমধ্যে কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল তাদের অফিস স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউলও পাওয়া গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে এনবিআর নিজের বাড়িতে যাচ্ছে।
২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি হলে অবশেষে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হলে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। নকশা পরিবর্তনে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করছে রাজস্ব ভবন।
ভবন নির্মাণের গল্প
১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য কর বিভাগের অনুকূলে দুই একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। নানা জটিলতায় সেখানে কাজ শুরু করতে পারেনি এনবিআর। পরে সেই জমি বরাদ্দ পায় বর্তমান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। প্রায় ১০ বছরের চেষ্টায় ২০০১ সালে বর্তমান জায়গায় দুই একরের প্লটটি বরাদ্দ পায় এনবিআর। সেখানেও বিপত্তি বাধে। ষাটের দশকে আগারগাঁও এলাকায় সব সরকারি কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানে যেখানে রাজস্ব ভবন হচ্ছে, সেই প্লটের আদি মালিক উত্তরাধিকারীরা আশির দশকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করে। সেই মামলা চলতে থাকে দশকের পর দশক। যে কারণে ২০০১ সালে প্লট বরাদ্দ পেলেও এনবিআর জমি বুঝে পায়নি। মামলা নিষ্পত্তি হলে অবশেষে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হয়ে যায়। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়।
এর মধ্যে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে ভেতরে ব্যবহারযোগ্য জায়গা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি হলে অবশেষে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হলে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। নকশা পরিবর্তনে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করছে রাজস্ব ভবন।