সুস্থতা-অসুস্থতা উভয়টিই আল্লাহর নেয়ামত। সুস্থ হলে মানুষ বেশি করে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। শোকর আদায় করে কৃতজ্ঞ হতে পারে। আর অসুস্থ হলে আল্লাহ তায়ালা মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, গুনাহ ক্ষমা করেন।
মানুষ নানা রকম ও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়। কেউ ছোট রোগে, আর কেউ বড় কোনো দুরারোগ্যে। তবু অসুস্থ হলে মানুষ দুশ্চিন্তিত হয়। আল্লাহর কাছে আরোগ্য কামনা করে।
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এমন কোনও রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বুখারী, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৮৪৮, হাদীস নং-৫২৭৬; তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড-১০ম, পৃষ্ঠা-২৩৫)
রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসা নেওয়া আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। চিকিৎসার পাশাপাশি দোয়াও পড়েন মুসলমানরা। হাদিসে রোগ মুক্তির বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত হয়েছে। কোরআনের আয়াতের ওপর আমল করেও রোগ থেকে মুক্তি লাভ হয়।
তফসীরবিদ ইমাম বায়হাকী (রহ.) বলেন, পবিত্র কোরআনে যেমন আত্মার যাবতীয় রোগ এবং মন্দ প্রবণতার চিকিৎসা রয়েছে, তেমনি দেহের যাবতীয় রোগ-ব্যাধিরও চিকিৎসা রয়েছে।
তাফসিরে কুরতুবিতে লেখা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোরআনের মাধ্যমে আরোগ্য তালাশ করে না, তার কোন শেফা নেই। (তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড-১০ম, পৃষ্ঠা-২৩৫)
এখানে কোরআনের এমন ছয়টি আয়াত তুলে ধরা হল যার ওপর আমল করলে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব-
১. সুরা তাওবার ১৪ নম্বর আয়াত।
وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ
উচ্চারণ- ওয়া ইয়াশফি ছুদু-রা ক্বাওমিম মু’মিনি-ন।
অর্থ : এবং আল্লাহ মু’মিনদের (মুসলমানদের) অন্তরসমূহ শান্ত করে দেন।
২. সুরা ইউনূসের ৫৭ নম্বর আয়াত।
وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
উচ্চারণ : ওয়া শিফাউ’ল লিমা- ফিচ্ছুদু-রি ওয়া হুদাও ওয়া রাহমাতুল লিল মু’মিনি-ন।
অর্থ : এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।
৩. ছুরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াত।
يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ
উচ্চারণ : ইয়াখরুঝু মিমবুতু-নিহা- শারা-বুম মুখতালিফুন, আলওয়ানুহু- ফি-হি শিফা-উ লিন্না-সি।
অর্থ : তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার।
৪. সুরা বনী ইসরাইলের ৮২ নম্বর আয়াত।
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
উচ্চারণ : ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল ক্বুরআ’নি মা হুয়া শিফাউও ওয়া রাহমাতিুল লিলমু’মিনি-ন।
অর্থ : আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।
৫. সুরা আশ-শেফা ৮০ নম্বর আয়াত।
– وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
উচ্চারণ : ওয়া ইজা মারিদতু ফা হুয়া ইয়াশফি-নি।
অর্থ : এবং (যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন)
৬. সুরা হা-মীম এর ৪৪ নম্বর আয়াত।
قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ উচ্চারণ: কুল হুওয়া লিল্লাযীনা আ-মানূ হুদাওঁ ওয়া শিফাউন।
অর্থ : (বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার)
প্রত্যেকটি আয়াতেই কোরআনে মুমিনদের জন্য ‘শেফা’, ‘রহমত’ প্রভৃতির কথা উল্লেখিত হয়েছে। বুজুর্গ, সৎ-নিষ্ঠাবান আলেমরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলে থাকেন, কোনও একটি পানিভর্তি পাত্র হাতে নিয়ে মুখের সামনে রেখে আয়াতগুলো পড়ে দম করে পানি পান করলে আল্লাহ তায়ালা সহজেই রোগ থেকে মুক্তি দেবেন।