লক্ষ্মীপুরকে বলা হয় সুপারির রাজ্য। এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে সুপারিগাছ। এ ছাড়া পুকুর পাড়, পরিত্যক্ত জমি, ফসলের ক্ষেতের ধারেও রয়েছে অসংখ্য সুপারিগাছ। সুপারি বিক্রি করেই সংসার চলে অনেকের। তাই চলতি মৌসুমের শুরুতেই সুপারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাটবাজারে কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হাটে সুপারি বিক্রি করে সেই টাকায় দৈনন্দিন কেনাকাটা সারছেন কৃষকরা।
মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষীপুরের ‘লক্ষ্মী’ হিসেবে পরিচিত অর্থকরী ফসল সুপারির এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। চলিত মৌসুমে লক্ষীপুরে উৎপাদিত সুপারির বাজার মূল্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বলে কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে। অর্থকরী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। সুপারির বাজার মূল্য ভালো থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের।
জেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার প্রতিটি বাজারেই প্রচুর পরিমাণে সুপারি আসছে। আধুনিক সংরক্ষণাগার না থাকায় এখানকার সুপারির প্রায় ৭০ ভাগ নদী-খাল-ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউসে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। চলিত বছর মৌসুমের শুরুতেই সুপারি বিক্রির প্রধান মোকাম সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর শহর, দালাল বাজার, চর রুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, দত্তপাড়া, জকসিন, চন্দ্রগঞ্জ, রায়পুর উপজেলা শহর, হায়দরগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, খাসেরহাট, মোল্লারহাট, মীরগঞ্জ বাজার, রামগঞ্জ উপজেলা শহর, কাঞ্চনপুর বাজার, করপাড়া বাজারসহ জেলার প্রতিটি বাজারে সুপারিকে ঘিরে চলছে জমজমাট ব্যবসা।
বর্তমানে বাজারে চলছে সুপারির জমজমাট বিকিকিনি। সদর উপজেলার দালাল বাজার, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন, চন্দ্রগঞ্জ, রায়পুর বাজার, খাসের হাটসহ অন্তত শতাধিক স্থানে সুপারির দৈনিক ও সাপ্তাহিক হাট বসে। সংশ্নিষ্টরা জানান, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে। সুপারি পুরোপুরি পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। বর্তমানে চলছে সুপারির ভরা মৌসুম।
তবে এবার সময়ের আগেই আশ্বিন মাসের শুরুর দিকেই বাজারে নতুন সুপারি আসতে শুরু করে। সুপারি ব্যবসায়ী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মওসুমের শুরুতে প্রতি পোন (৮০টি) পাকা সুপারি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে কেনা হয়েছে। বর্তমানে ৯০ থেকে ১২০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। তবে কাঁচা সুপারি কেনা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি।
স্থানীয়রা জানান, উৎপাদিত সুপারির ৭০ ভাগ খাল, ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউসে ভিজিয়ে রাখেন ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারিবাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। সঠিক সময়ে সুপারি চাষিরা সঠিক পরিচর্যার কারণে এবার এ জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচাপাকা সুপারির দাম কিছুটা বেশি। এতে ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। এই জেলার সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়, বিদেশেও রপ্তানি হয়। আগামীতে এ জেলায় সুপারির চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।