পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে কর্পোরেট গভর্নেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রধান করেছে ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে স্বচ্ছ কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বীকৃতি হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
এ বছর ১২টি ক্যাটাগরিতে ডিএসই ও সিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইসিএসবির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ, কর্পোরেট গভর্নেন্স কমিটির চেয়ারম্যান এম নুরুল আলম, কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এসিএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে কোম্পানিগুলোকে পুরস্কার দেওয়া হয়। আইসিএসবির নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী ২০২১ সালে কোম্পানিগুলোর সাফল্যের ভিত্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রমোটিং গভর্নিং এক্সিলেন্স’।
পুরস্কার পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টরে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড; মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড সিলভার এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ইসলামিক ব্যাংকিং ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি; আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড সিলভার এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে সিলভার এবং সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড; ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড সিলভার এবং সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড; স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড সিলভার এবং ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
টেক্সটাইল ও আরএমজি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পিএলসি; মতিন স্পিনিং মিলস পিএলসি সিলভার এবং স্কয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ফুড ও অ্যালায়েড ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড; গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিলভার এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি; সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড সিলভার এবং রানার অটোমোবাইলস পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশ লিমিটেড ও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং যৌথভাবে সিলভার অর্জন করেছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসি।
ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড; সামিট পাওয়ার লিমিটেড সিলভার এবং ডোরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে; সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড; ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি সিলভার এবং ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানে সালমান ফজলুর রহমান বলেন, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রগুলো স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময়। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ ধরনের বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্রগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলোকে একটি সাধারণ কাঠামোর মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছে। দেশের সব তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্পোরেট গভর্ন্যান্স-এ তাদের কর্মক্ষমতা যাচাই করার জন্য আইসিএসবি একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম। আমি আইসিএসবির সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করছি যাতে করে আইসিএসবি ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নের জন্য আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি সরকার কর্পোরেট খাতে পেশাগত উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আইসিএসবির প্রস্তাবগুলো আন্তরিকভাবে বিবেচনায় নেবেন।
বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের কর্পোরেট পেশাজীবীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আইসিএসবির এ উদ্যোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কর্পোরেট ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। এর ফলে বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ, কমপ্লায়েন্স বজায় রাখা এবং কর্পোরেট নির্দেশিকা অনুসরণ করার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে যাতে তারা এই পুরস্কার অর্জন করতে পারে।
আইসিএসবির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস বলেন, বেসরকারি খাতকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সমৃদ্ধ ও বিকশিত করার লক্ষ্যে আইসিএসবি পেশাকে বিকশিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। যাতে এখান থেকে গড়ে ওঠা পেশাজীবীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে অবদান রাখতে পারেন।