চারিদিকে যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যেই জন্ম হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মো. ইসহাক আলীর প্রথম সন্তানের। মেয়ের নাম রাখা হয় আছিয়া। পরে কেতাবি নাম পায় মোছা. ইসমত আরা বেগম। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিলের ঘটনা এটি। এই আনন্দঘন মুহূর্ত দেখে যেতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলী। মেয়ের জন্মের ঠিক দুই দিন আগে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন এই বীরযোদ্ধা।
শহীদ বাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্প্রতি ইসমত আরা এসব তথ্য জানান। বড় হয়ে মা ও স্বজনদের কাছ থেকে শুনেছেন তিনি এই ঘটনা।
বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন ইসমত আরা। নিজেকে সামলে নিয়ে মায়ের কাছ থেকে শোনা ঘটনা উল্লেখ করে আবার বলেন, যুদ্ধে যাওয়ার সময় বাবা তাঁর মাকে বলেছিলেন, ফিরে এসে তাঁকে (ইসমত) নিয়ে ছবি তুলবেন। কিন্তু তা আর হয়নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলী ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রথম শহীদ। উপজেলার বীরহলি গ্রামের এই বীরযোদ্ধার একমাত্র মেয়ে ইসমত আরা।
বাবার সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে ইসমত আরা জানান, যুদ্ধে যাওয়ার আগে পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে লন্ড্রির দোকান চালাতেন তাঁর বাবা। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ দিনাজপুরে তৎকালীন ইপিআর (ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) ক্যাম্প আক্রমণ করতে গিয়ে বাবাসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। স্থানীয়রা তাঁর মরদেহ নিয়ে এসে পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও পাকা সড়কের পশ্চিমে পীরগঞ্জের পীরডাঙ্গী কবরস্থানে দাফন করেন। পরে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর সমাধি সংরক্ষণ করা হয়।
পরিবারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ইসমত আরা জানান, অভাবের সংসারে উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর পড়তে পারেননি তিনি। মায়ের সঙ্গে একটি ছাপরাঘরে তিনি থাকেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী শহরে ছোটখাটো কাজ করেন। বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাই এখন তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।