ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জাসদ একত্রিত করতে মাঠে আসছেন জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ খান

সংগ্রহীত ব্যারিস্টার ফারহা খানের টাইমলাইন হতে।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিরোধী দল জাসদের বিভক্ত অংশ গুলোকে নিয়ে একত্রিত ১৯৭২ সালের জাসদের পুনরাবৃত্তি করতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে রাজনীতির মাঠে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ খান। তিনি তার নিজস্ব ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোষ্টে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন। তিনি তার আইডিতে লিখেছেন – আজ অক্টোবর মাসের প্রথম দিন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনীতিতে আমার আগমনের পর থেকেই প্রতি বছর রাত ১২টা থেকে মানে এই দিনটির প্রথম প্রহর থেকেই নিজের ভিতর আমি প্রচন্ড আনন্দ ও তৃপ্তি অনুভব করি। কিন্তু এই বছর সেই তৃপ্তির সাথে যোগ হয়েছে অত্যন্ত খারাপ লাগা ও কষ্ট কারণ গত বছর আমার প্রাণপ্রিয় মেজকাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জন্মদাতা এই দলের প্রাণ পুরুষ এই দলের প্রতিটি কর্মীর শ্রদ্ধার ব্যক্তি সিরাজুল আলম খান দাদা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তবু তাঁর দেখানো, শেখানো পথে চলতে গিয়ে এবং যেই কারণে আমার এই ‘জাসদীয়’ রাজনীতিতে আসা সেই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে বিরামহীন কাজ করার কারণে আজ এই দলের অনেক বড় নেতা/নেত্রী থেকে শুরু করে দল ও দলের বাইরে আমার শত্রুর অভাব নেই। তাই আগেই বলে রাখছি কোন নেতা বা অন্য কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য নয় বরং আমার আজকের এই লেখাটি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনীতি করতে এসে সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব উপলব্ধি থেকে লেখা। ভালো না লাগলে লেখাটি এড়িয়ে যেতে পারেন। দলকে ভালবেসে যে কোন গঠন মূলক কথা বলতে পারেন তবে কোন বাজে মন্তব্য করলে যে নিজের পারিবারিক পরিচয় দেবেন এবং নির্দিষ্ট নেতা/নেত্রীর চামচা শিখেবে গণ্য হবেন সেটা ভুলে যাবেন না।

যাইহোক এখন মূল কথায় আসি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ/জেএসডি/বাংলাদেশ জাসদ) যে নামেই ডাকি না কেন, একদিকে যেমন তাহের কে যারা ধোকা দিয়ে হত্যা করেছে তাদের কে আমাদের কখনো ক্ষমা করা উচিত নয়, তেমনি রক্ষীবাহিনী যারা সৃষ্টি করেছে এবং তাদের দ্বারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের হত্যাকারিদেরও কখনো ক্ষমা করা উচিত নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তাহেরের হত্যাকারি এবং রক্ষীবাহিনী সৃষ্টিকারি তারা সবাই এক ও অভিন্ন আমাদের বেলায়। তারা একে অপরের যত বড় শত্রু হোক না কেন, তারা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ‘বন্ধু’ অতীতে কখনো ছিলনা ভবিষ্যতেও কখনো হবে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয় স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে এবং আমাদের জন্মের ৫২ বছরে তারা তাদের মিষ্টি কথা দিয়ে নিজেদের স্বার্থে আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের কারণে। আর নিজ স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, প্রতারনা করেছে, আমাদের পিঠে শত্রুর মতো ছুরি বসিয়েছে।

আমরা দেখেছি আমাদের দলের বহু নেতা অন্য দলে চলে গিয়েছে, অন্য দলের রাজনীতি করেছে এবং করছে। কিন্তু আমরা এও দেখেছি একবার যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল করেছে তার নামের পাশে সারা জীবন জাসদ/জেএসডির নাম লেগে যায়। উদাহরণ স্বরুপ আমি আমাদের দুজন নেতার নাম লিখছি এখানে।

আমরা দেখেছি বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত ও বর্ষিয়ান একজন নেতা- যার নামেই তার পরিচয়, বাংলাদেশের ইতিহাস তাকে ছাড়া অপূর্ণ, তিনি আমাদের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক- শাহজাহান সিরাজ। তিনি জন্মলগ্ন থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে ছিলেন এবং পরে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০২০ সালে তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি বিএনপি করেছেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের থেকে বেশি সময় ধরে তিনি বিএনপি করেছেন। বিএনপির থেকে তিনি এমপি হয়েছেন মন্ত্রী হয়েছেন এবং সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু তবু, আমরা নিশ্চয় ভুলে যাইনি তার মৃত্যুর পর অগনিত মানুষ বলেছে, নিউজপেপার ও টিভির ক্যাপশনে লেখা এসেছে “জাসদের শাহজাহান সিরাজ”…

অন্যদিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে শুরুর দিকে ওৎপ্রোত ভাবে জড়িত আরেক নেতার শাহজাহান খান। তিনি গত ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামীলীগ থেকে তিনি বহুবার এমপি হয়েছেন মন্ত্রী হয়েছেন। তবু, দু/তিন বছর আগে আমরা দেখেছি ও শুনেছি খোদ আওয়ামীলীগের সভাপতি ততকালীন প্রধানমন্ত্রী দলের অন্য দুই নেতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাহজাহান খানের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- “তিনি তো জাসদের। আপনাকে আমি জাসদ থেকে এনে এমপি করেছি মন্ত্রী করেছি প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছি তবু দলে ঝামেলা করেন, আওয়ামীলীগ করতে হলে আগে মন থেকে আওয়ামীলীগ হতে হবে…” ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মানে এত বছর আওয়ামীলীগের জন্য এত কাজ করেও, দলের এত বড় বড় পদে থেকেও শাহজাহান খান “আওয়ামীলীগ” হতে পারেননি বরং তিনি এখনো ‘জাসদের শাহজাহান খান’ই রয়ে গেছেন! এমন আরো বহু বহু নেতা আছে আমাদের যারা অন্য দলের বিভিন্ন পদে বহু বছর দায়িত্বে থাকা সত্তেও এখনো ‘জাসদের ওমুক,, জাসদের তমুক’ নামে পরিচিত।আরো হাজারটা উদাহরণ আমি দিতে পারবো কিন্তু লেখাটি বড় হয়ে যাচ্ছে তাই আর লিখলাম না।

শুধু তাই নয়, আমি বিনয়ের সাথে এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই ১৬ বছর আওয়ামীলীগের সাথে ক্ষমতার অংশ হিসেবে থেকে আমাদের জাসদের এক অংশের কি হয়েছে তা আমরা দেখেছি। ঠিক তেমনি আমি হলফ করে বলতে পারি আজ জাসদের আরেক অংশ বিএনপির সাথে ক্ষমতার ভাগ পাবার জন্য এক সাথে রাজপথে আন্দোলন করছে বহু বছর। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, বিশ্বাস করুন আওয়ামীলীগের সাথে থেকে জাসদের এক অংশের আজ যেই অবস্থা হয়েছে, বিএনপির সাথে ক্ষমতায় গেলে অন্য অংশ গুলোর একই অবস্থা হবে। তাই আমি বিনীত অনুরোধ করতে চাই আমাদের জাসদের সকল ভাগের নেতৃবৃন্দের প্রতি- আপনারা প্লিজ অন্যের হাত কে শক্তিশালী না করে বরং সকল জাসদ এক সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের হাত কে শক্তিশালী করুন। পাশাপাশি আমি দৃঢ় চিত্তে এটাও বলতে চাই- আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতারা যদি ক্ষমতায় যাবার লোভে লেজুড়বৃত্তি ও আপোষকামিতা না ছাড়ে তবে আমরা জাসদের সকল ভাগের কর্মীরা একে অপরের হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেরাই নিজেদের কে শক্তিশালী করবোই করবো। বলা বাহুল্য, আমি জানি এই মহান কাজটি শুরু করলে আমি সফলতা না আসা পর্যন্ত এখান থেকে নড়তে পারবো না তাই আমি আজ থেকে ১৫-১৬ দিনের জন্য পারিবারিক কারণে লন্ডন এবং কানাডা থাকবো। এবং এই মাসের শেষে দেশে ফিরে এসে সারা বাংলাদেশে ঐক্য জাসদের কাজ শুরু করবো। সেই লক্ষে আমি ব্যারিস্টার ফারাহ খান- সিরাজুল আলম খান দাদার ভাতিজী সারা বাংলাদেশে কাজ করবো কথা দিলাম জাসদের যেই নেতা-কর্মীরা ঐক্য চান সেই সক্রিয় নিষ্ক্রিয় সকল নেতা-কর্মীকে। আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন কারণ জাসদীয় এই রাজনীতিটি করার জন্যই আপনাদের শ্রদ্ধেয় সিরাজুল আলম খান দাদা আমাকে তাঁর জীবদ্দশায় এই রাজনীতিতে এনেছেন এবং সেই সাথে আমিও আমার লন্ডনের জীবন আমার পেশা আমার সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ সব কিছু ছেড়ে আপনাদের মাঝে এই জাসদের রাজনীতিতে এসেছি। আমি আমার প্রাণপ্রিয় মেজকাকা কে একটি প্রতিজ্ঞা করেছি এবং আমি আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাবো।

পরিশেষে আবারো বলতে চাই, আজ অক্টোবর মাসের প্রথম দিন আর এই অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আমরা আমাদের দলের বায়ান্ন বছরে পা দিচ্ছি। আমাদের দল যত ভাগে বিভক্তি হোক না কেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জন্ম নেওয়া আমরাই শতভাগ মুক্তিযোদ্ধার দল এবং প্রথম ও সবচেয়ে পুরনো দল। তাই আজ অক্টোবর মাসের প্রথম দিনে আমি বলতে চাই-

অক্টোবর মাস জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে আষ্ঠে পৃষ্ঠে লেগে আছে। এই মাসটি আমাদের ভালবাসার মাস আমাদের গর্বের মাস। আমরা আর লেজুড়বৃত্তি ও আপোষকামিতা করতে চাই না।
জয় বাংলা (আমাদের স্বাধীনতার স্লোগান) ব্যারিস্টার ফারাহ খান

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বোরহানউদ্দিনে খাল পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতার অভিযানের উদ্বোধন

জাসদ একত্রিত করতে মাঠে আসছেন জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ খান

আপডেট সময় ১২:২৬:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

সংগ্রহীত ব্যারিস্টার ফারহা খানের টাইমলাইন হতে।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিরোধী দল জাসদের বিভক্ত অংশ গুলোকে নিয়ে একত্রিত ১৯৭২ সালের জাসদের পুনরাবৃত্তি করতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে রাজনীতির মাঠে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ খান। তিনি তার নিজস্ব ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোষ্টে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন। তিনি তার আইডিতে লিখেছেন – আজ অক্টোবর মাসের প্রথম দিন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনীতিতে আমার আগমনের পর থেকেই প্রতি বছর রাত ১২টা থেকে মানে এই দিনটির প্রথম প্রহর থেকেই নিজের ভিতর আমি প্রচন্ড আনন্দ ও তৃপ্তি অনুভব করি। কিন্তু এই বছর সেই তৃপ্তির সাথে যোগ হয়েছে অত্যন্ত খারাপ লাগা ও কষ্ট কারণ গত বছর আমার প্রাণপ্রিয় মেজকাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জন্মদাতা এই দলের প্রাণ পুরুষ এই দলের প্রতিটি কর্মীর শ্রদ্ধার ব্যক্তি সিরাজুল আলম খান দাদা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তবু তাঁর দেখানো, শেখানো পথে চলতে গিয়ে এবং যেই কারণে আমার এই ‘জাসদীয়’ রাজনীতিতে আসা সেই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে বিরামহীন কাজ করার কারণে আজ এই দলের অনেক বড় নেতা/নেত্রী থেকে শুরু করে দল ও দলের বাইরে আমার শত্রুর অভাব নেই। তাই আগেই বলে রাখছি কোন নেতা বা অন্য কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য নয় বরং আমার আজকের এই লেখাটি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনীতি করতে এসে সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব উপলব্ধি থেকে লেখা। ভালো না লাগলে লেখাটি এড়িয়ে যেতে পারেন। দলকে ভালবেসে যে কোন গঠন মূলক কথা বলতে পারেন তবে কোন বাজে মন্তব্য করলে যে নিজের পারিবারিক পরিচয় দেবেন এবং নির্দিষ্ট নেতা/নেত্রীর চামচা শিখেবে গণ্য হবেন সেটা ভুলে যাবেন না।

যাইহোক এখন মূল কথায় আসি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ/জেএসডি/বাংলাদেশ জাসদ) যে নামেই ডাকি না কেন, একদিকে যেমন তাহের কে যারা ধোকা দিয়ে হত্যা করেছে তাদের কে আমাদের কখনো ক্ষমা করা উচিত নয়, তেমনি রক্ষীবাহিনী যারা সৃষ্টি করেছে এবং তাদের দ্বারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের হত্যাকারিদেরও কখনো ক্ষমা করা উচিত নয়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তাহেরের হত্যাকারি এবং রক্ষীবাহিনী সৃষ্টিকারি তারা সবাই এক ও অভিন্ন আমাদের বেলায়। তারা একে অপরের যত বড় শত্রু হোক না কেন, তারা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ‘বন্ধু’ অতীতে কখনো ছিলনা ভবিষ্যতেও কখনো হবে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয় স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে এবং আমাদের জন্মের ৫২ বছরে তারা তাদের মিষ্টি কথা দিয়ে নিজেদের স্বার্থে আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের কারণে। আর নিজ স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, প্রতারনা করেছে, আমাদের পিঠে শত্রুর মতো ছুরি বসিয়েছে।

আমরা দেখেছি আমাদের দলের বহু নেতা অন্য দলে চলে গিয়েছে, অন্য দলের রাজনীতি করেছে এবং করছে। কিন্তু আমরা এও দেখেছি একবার যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল করেছে তার নামের পাশে সারা জীবন জাসদ/জেএসডির নাম লেগে যায়। উদাহরণ স্বরুপ আমি আমাদের দুজন নেতার নাম লিখছি এখানে।

আমরা দেখেছি বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত ও বর্ষিয়ান একজন নেতা- যার নামেই তার পরিচয়, বাংলাদেশের ইতিহাস তাকে ছাড়া অপূর্ণ, তিনি আমাদের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক- শাহজাহান সিরাজ। তিনি জন্মলগ্ন থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে ছিলেন এবং পরে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০২০ সালে তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি বিএনপি করেছেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের থেকে বেশি সময় ধরে তিনি বিএনপি করেছেন। বিএনপির থেকে তিনি এমপি হয়েছেন মন্ত্রী হয়েছেন এবং সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু তবু, আমরা নিশ্চয় ভুলে যাইনি তার মৃত্যুর পর অগনিত মানুষ বলেছে, নিউজপেপার ও টিভির ক্যাপশনে লেখা এসেছে “জাসদের শাহজাহান সিরাজ”…

অন্যদিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে শুরুর দিকে ওৎপ্রোত ভাবে জড়িত আরেক নেতার শাহজাহান খান। তিনি গত ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামীলীগ থেকে তিনি বহুবার এমপি হয়েছেন মন্ত্রী হয়েছেন। তবু, দু/তিন বছর আগে আমরা দেখেছি ও শুনেছি খোদ আওয়ামীলীগের সভাপতি ততকালীন প্রধানমন্ত্রী দলের অন্য দুই নেতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাহজাহান খানের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- “তিনি তো জাসদের। আপনাকে আমি জাসদ থেকে এনে এমপি করেছি মন্ত্রী করেছি প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছি তবু দলে ঝামেলা করেন, আওয়ামীলীগ করতে হলে আগে মন থেকে আওয়ামীলীগ হতে হবে…” ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মানে এত বছর আওয়ামীলীগের জন্য এত কাজ করেও, দলের এত বড় বড় পদে থেকেও শাহজাহান খান “আওয়ামীলীগ” হতে পারেননি বরং তিনি এখনো ‘জাসদের শাহজাহান খান’ই রয়ে গেছেন! এমন আরো বহু বহু নেতা আছে আমাদের যারা অন্য দলের বিভিন্ন পদে বহু বছর দায়িত্বে থাকা সত্তেও এখনো ‘জাসদের ওমুক,, জাসদের তমুক’ নামে পরিচিত।আরো হাজারটা উদাহরণ আমি দিতে পারবো কিন্তু লেখাটি বড় হয়ে যাচ্ছে তাই আর লিখলাম না।

শুধু তাই নয়, আমি বিনয়ের সাথে এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই ১৬ বছর আওয়ামীলীগের সাথে ক্ষমতার অংশ হিসেবে থেকে আমাদের জাসদের এক অংশের কি হয়েছে তা আমরা দেখেছি। ঠিক তেমনি আমি হলফ করে বলতে পারি আজ জাসদের আরেক অংশ বিএনপির সাথে ক্ষমতার ভাগ পাবার জন্য এক সাথে রাজপথে আন্দোলন করছে বহু বছর। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, বিশ্বাস করুন আওয়ামীলীগের সাথে থেকে জাসদের এক অংশের আজ যেই অবস্থা হয়েছে, বিএনপির সাথে ক্ষমতায় গেলে অন্য অংশ গুলোর একই অবস্থা হবে। তাই আমি বিনীত অনুরোধ করতে চাই আমাদের জাসদের সকল ভাগের নেতৃবৃন্দের প্রতি- আপনারা প্লিজ অন্যের হাত কে শক্তিশালী না করে বরং সকল জাসদ এক সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের হাত কে শক্তিশালী করুন। পাশাপাশি আমি দৃঢ় চিত্তে এটাও বলতে চাই- আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতারা যদি ক্ষমতায় যাবার লোভে লেজুড়বৃত্তি ও আপোষকামিতা না ছাড়ে তবে আমরা জাসদের সকল ভাগের কর্মীরা একে অপরের হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেরাই নিজেদের কে শক্তিশালী করবোই করবো। বলা বাহুল্য, আমি জানি এই মহান কাজটি শুরু করলে আমি সফলতা না আসা পর্যন্ত এখান থেকে নড়তে পারবো না তাই আমি আজ থেকে ১৫-১৬ দিনের জন্য পারিবারিক কারণে লন্ডন এবং কানাডা থাকবো। এবং এই মাসের শেষে দেশে ফিরে এসে সারা বাংলাদেশে ঐক্য জাসদের কাজ শুরু করবো। সেই লক্ষে আমি ব্যারিস্টার ফারাহ খান- সিরাজুল আলম খান দাদার ভাতিজী সারা বাংলাদেশে কাজ করবো কথা দিলাম জাসদের যেই নেতা-কর্মীরা ঐক্য চান সেই সক্রিয় নিষ্ক্রিয় সকল নেতা-কর্মীকে। আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন কারণ জাসদীয় এই রাজনীতিটি করার জন্যই আপনাদের শ্রদ্ধেয় সিরাজুল আলম খান দাদা আমাকে তাঁর জীবদ্দশায় এই রাজনীতিতে এনেছেন এবং সেই সাথে আমিও আমার লন্ডনের জীবন আমার পেশা আমার সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ সব কিছু ছেড়ে আপনাদের মাঝে এই জাসদের রাজনীতিতে এসেছি। আমি আমার প্রাণপ্রিয় মেজকাকা কে একটি প্রতিজ্ঞা করেছি এবং আমি আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাবো।

পরিশেষে আবারো বলতে চাই, আজ অক্টোবর মাসের প্রথম দিন আর এই অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আমরা আমাদের দলের বায়ান্ন বছরে পা দিচ্ছি। আমাদের দল যত ভাগে বিভক্তি হোক না কেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জন্ম নেওয়া আমরাই শতভাগ মুক্তিযোদ্ধার দল এবং প্রথম ও সবচেয়ে পুরনো দল। তাই আজ অক্টোবর মাসের প্রথম দিনে আমি বলতে চাই-

অক্টোবর মাস জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে আষ্ঠে পৃষ্ঠে লেগে আছে। এই মাসটি আমাদের ভালবাসার মাস আমাদের গর্বের মাস। আমরা আর লেজুড়বৃত্তি ও আপোষকামিতা করতে চাই না।
জয় বাংলা (আমাদের স্বাধীনতার স্লোগান) ব্যারিস্টার ফারাহ খান