ঢাকা ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিকিট কেলেঙ্কারি: জেদ্দা রুটে ১৫ মিনিটে বিমানের ক্ষতি ৪৪ লাখ

সম্প্রতি ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট বিক্রিতে অনিয়মের কারণে ১৫ মিনিটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৪৩ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪৪ লাখ টাকা) আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটির শীর্ষ বিপণন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট বিক্রির ঘোষণার ১৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা-জেদ্দা রুটের ফ্লাইটের সমস্ত টিকিট বুক করে ফেলে।

তবে, ২৬৮টি আসনের বিপরীতে ৮০০টি বুকিং থাকলেও গত ১৯ সেপ্টেম্বর ৪৩টি আসন খালি নিয়েই ওই ফ্লাইটটি যাত্রা করে।

পরে বিজি১৮০২ ফ্লাইটটি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ভিআইপি যাত্রীদের বহনের জন্য জেদ্দা থেকে লন্ডন এবং সেখান থেকে নিউইয়র্কে যায়।

বিমানের বিপণন বিভাগের তথ্যানুসারে, ঢাকা-জেদ্দা রুটে রুটের প্রতিটি টিকিটের মূল্য ছিল এক হাজার ডলার।

এই অনিয়মের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে মৌখিকভাবে জানতে চাইলে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

৮০০টির বেশি বুকিং বাতিলের কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

এছাড়া, বিক্রি শুরুর ১৫ মিনিট পরও কেনো এজেন্সিগুলো কোনো টিকিট নেয়নি, সে বিষয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ঢাকা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিমানের একজন সাবেক বিপণন কর্মকর্তা জানান, বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক টিকিট কারসাজিতে জড়িত না থাকলে খালি সিট নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করার সুযোগ নেই।

তিনি উল্লেখ করেন, জেদ্দা এবং মদিনা সবসময়ই বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয় রুট এবং এই রুটে যাত্রীদের বিপুল চাহিদা রয়েছে।

এদিকে, বিমানের অনুমোদিত যেসব ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট পায়নি, তাদের অভিযোগ, আটটি টিকিট এজেন্সি বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক এবং তার ঘনিষ্ঠ ছয়জন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ১৫ মিনিটের মধ্যে সমস্ত টিকিট বুক করে রাখে।

ওই টিকিট সংস্থাগুলো নির্ধারিত সময়সীমার পরেও জাল বুকিং অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ তাদের।

তবে, শেষ পর্যন্ত বুকিং নিশ্চিত করা যায়নি বলে ওই ফ্লাইটের ৪৩টি আসন খালি থেকে যায়।

অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে- খান ট্রাভেল, রয়্যাল ট্রাভেল, খাজা এয়ার লাইনার এবং গাল্ফ ট্রাভেল।

কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দিতে আঞ্চলিক অফিসে চিঠি

টিকিট কেলেঙ্কারির এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার আসার পর বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তাদের অনিয়ম ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে একটি চিঠিতে ওই রুটে অগ্রিম যাত্রী থাকার কথা জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিমানের আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের দোষারোপ করেন।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “তাদের জেদ্দা রুটে যাত্রী সরবরাহ করার কথা ছিল।”

তবে চিঠির জবাবে আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমানের প্রধান কার্যালয় বা বিপণন বিভাগ তাদের এ ধরনের কোনো আগাম নির্দেশনা দেয়নি।

যোগাযোগ করা হলে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) দিলীপ কুমার চৌধুরী জানান, টিকিট সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটি উপ-মহাব্যবস্থাপক (মূল্য এবং আরএমএস) মোহাম্মদ আলী ওসমান নূর পর্যবেক্ষণ করেন।

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মোহাম্মদ আলী ওসমান নূর।

সমাধান কী?

ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানান, এ ধরনের ঘটনায় বিমান আর্থিক এবং পরিষেবার সুনাম দুইদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিমান বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিমানের অদক্ষ ও অসাধু বিপণন কর্মকর্তারা তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য এ ধরনের কাজ করে আসছে “

অন্যদিকে, এয়ারলাইন্সগুলো বিভিন্ন রুটে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং অন্যান্য পরিষেবার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, “সমস্ত অনুমোদিত সংস্থাগুলোকে টিকিট বিক্রির স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের কোনো হয়রানির এবং অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া টিকিট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

এদিকে, টিকিট কারসাজির বিমানের জন্য বিপণন বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ।

কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের কেলেঙ্কারি কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ট্রাভেল এজেন্সি ও বিমানের কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।

এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিও জানান তারা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

টিকিট কেলেঙ্কারি: জেদ্দা রুটে ১৫ মিনিটে বিমানের ক্ষতি ৪৪ লাখ

আপডেট সময় ০৬:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২

সম্প্রতি ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট বিক্রিতে অনিয়মের কারণে ১৫ মিনিটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৪৩ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪৪ লাখ টাকা) আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটির শীর্ষ বিপণন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট বিক্রির ঘোষণার ১৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা-জেদ্দা রুটের ফ্লাইটের সমস্ত টিকিট বুক করে ফেলে।

তবে, ২৬৮টি আসনের বিপরীতে ৮০০টি বুকিং থাকলেও গত ১৯ সেপ্টেম্বর ৪৩টি আসন খালি নিয়েই ওই ফ্লাইটটি যাত্রা করে।

পরে বিজি১৮০২ ফ্লাইটটি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ভিআইপি যাত্রীদের বহনের জন্য জেদ্দা থেকে লন্ডন এবং সেখান থেকে নিউইয়র্কে যায়।

বিমানের বিপণন বিভাগের তথ্যানুসারে, ঢাকা-জেদ্দা রুটে রুটের প্রতিটি টিকিটের মূল্য ছিল এক হাজার ডলার।

এই অনিয়মের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে মৌখিকভাবে জানতে চাইলে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

৮০০টির বেশি বুকিং বাতিলের কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

এছাড়া, বিক্রি শুরুর ১৫ মিনিট পরও কেনো এজেন্সিগুলো কোনো টিকিট নেয়নি, সে বিষয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ঢাকা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিমানের একজন সাবেক বিপণন কর্মকর্তা জানান, বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক টিকিট কারসাজিতে জড়িত না থাকলে খালি সিট নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করার সুযোগ নেই।

তিনি উল্লেখ করেন, জেদ্দা এবং মদিনা সবসময়ই বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয় রুট এবং এই রুটে যাত্রীদের বিপুল চাহিদা রয়েছে।

এদিকে, বিমানের অনুমোদিত যেসব ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট পায়নি, তাদের অভিযোগ, আটটি টিকিট এজেন্সি বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক এবং তার ঘনিষ্ঠ ছয়জন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ১৫ মিনিটের মধ্যে সমস্ত টিকিট বুক করে রাখে।

ওই টিকিট সংস্থাগুলো নির্ধারিত সময়সীমার পরেও জাল বুকিং অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ তাদের।

তবে, শেষ পর্যন্ত বুকিং নিশ্চিত করা যায়নি বলে ওই ফ্লাইটের ৪৩টি আসন খালি থেকে যায়।

অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে- খান ট্রাভেল, রয়্যাল ট্রাভেল, খাজা এয়ার লাইনার এবং গাল্ফ ট্রাভেল।

কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দিতে আঞ্চলিক অফিসে চিঠি

টিকিট কেলেঙ্কারির এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার আসার পর বিমানের বিপণন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তাদের অনিয়ম ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে একটি চিঠিতে ওই রুটে অগ্রিম যাত্রী থাকার কথা জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিমানের আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের দোষারোপ করেন।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “তাদের জেদ্দা রুটে যাত্রী সরবরাহ করার কথা ছিল।”

তবে চিঠির জবাবে আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমানের প্রধান কার্যালয় বা বিপণন বিভাগ তাদের এ ধরনের কোনো আগাম নির্দেশনা দেয়নি।

যোগাযোগ করা হলে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) দিলীপ কুমার চৌধুরী জানান, টিকিট সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটি উপ-মহাব্যবস্থাপক (মূল্য এবং আরএমএস) মোহাম্মদ আলী ওসমান নূর পর্যবেক্ষণ করেন।

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মোহাম্মদ আলী ওসমান নূর।

সমাধান কী?

ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানান, এ ধরনের ঘটনায় বিমান আর্থিক এবং পরিষেবার সুনাম দুইদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিমান বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিমানের অদক্ষ ও অসাধু বিপণন কর্মকর্তারা তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য এ ধরনের কাজ করে আসছে “

অন্যদিকে, এয়ারলাইন্সগুলো বিভিন্ন রুটে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং অন্যান্য পরিষেবার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও তিনি জানান।

তিনি বলেন, “সমস্ত অনুমোদিত সংস্থাগুলোকে টিকিট বিক্রির স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের কোনো হয়রানির এবং অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া টিকিট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

এদিকে, টিকিট কারসাজির বিমানের জন্য বিপণন বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ।

কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের কেলেঙ্কারি কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ট্রাভেল এজেন্সি ও বিমানের কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।

এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিও জানান তারা।