কাতারের সেরা ক্লাব তো বটেই, এশিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব আল সাদ। কাতারের একমাত্র ক্লাব হিসেবে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে সাদেরই। এশিয়ার সেরা হওয়ার পেছনে অনেক বাংলাদেশির শ্রম-ঘামও রয়েছে।
আল সাদ ক্লাবে ত্রিশ জনের বেশি বাংলাদেশি কাজ করেন। বাংলাদেশিরা ক্লাবের সকল বিভাগের (টিম অ্যাটেনডেন্ট, ইকুইপমেন্ট, গ্রাউন্ডস ম্যানেজম্যান্ট, ট্রান্সপোর্ট, ডাইনিং) কাজের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। বর্তমানে কর্মরতের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র মো. জাফর।
তিন দশকের বেশি সময় কাজ করা জাফর এই ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার গল্পটা বললেন এভাবে, ‘আমার বাড়ি চট্টগ্রামে। আমার এলাকার পরিচিত একজন ছিলেন এই ক্লাবে। তার মাধ্যমেই এখানে আসা। এরপর আমার মাধ্যমেও অনেকে এসেছে। একজন এসে আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠদেরও এনেছে। প্রথম দিকে বাংলাদেশের সংখ্যা এত ছিল না। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা আজকের অবস্থায় এসেছে।’
অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ কাতারের জনসংখ্যা খুব কম। প্রবাসীদের সংখ্যা কাতারির চেয়ে অনেক বেশি। কাতারের অনেক কাজই প্রবাসীরাই করেন। সাদ ক্লাবেও কর্মরত রয়েছেন বাংলাদেশ, মিশর, ভারত সহ নানা দেশের লোক। এদের মধ্যে বাংলাদেশিদেরই সবচেয়ে এগিয়ে রাখলেন ক্লাবটি স্পোর্টস ডিরেক্টর মোহাম্মদ গোলাম, ‘এই ক্লাবে অনেক দেশের লোকই কাজ করে। বাংলাদেশিরা কাজের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক এবং ক্লাবকে নিজের ভেবেই কাজ করে। কাজের দিক থেকে আমার কাছে বাংলাদেশিরা এক নম্বর অবস্থানে থাকবে।’
বড় ক্লাবগুলোতে স্পোর্টস ডিরেক্টর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। খেলোয়াড় দলে নেয়া, ছেড়ে দেয়া সহ ক্লাবের অনেক সিদ্ধান্তই নিতে হয় স্পোর্টস ডিরেক্টরকে। মোহাম্মদ গোলাম আগে এই ক্লাবের খেলোয়াড় ছিলেন। খেলোয়াড় থেকে এখন স্পোর্টস ডিরেক্টর হয়েছেন। খেলোয়াড় ও ডিরেক্টর উভয় ভূমিকা থেকেই বাংলাদেশিদের খুব কাছ থেকে দেখছেন তিনি, ‘বাংলাদেশিরা এই ক্লাবের অন্যতম প্রাণ। যখন খেলোয়াড় ছিলাম তখনও তাদের যেমন দেখেছি এখন ডিরেক্টর হয়েও তাদের সেই আন্তরিকতাই পাই।’
কাতারে বাংলাদেশের অনেকে অনেক কাজ করেন। অধিকাংশ কাজই শ্রমিক পর্যায়ের। কাতারের শীর্ষ ক্লাবে কাজ সংযুক্ত থাকতে পেরে খুশি ফটিকছড়ির হাসান, ‘কাতারে আমাদের বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক। সবাই কষ্ট করে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করছে। ক্লাবের সঙ্গে থাকায় আমাদের পরিচিতি একটু বেশি। অনেকেই চেনে আমাদের।’
হাসানের সঙ্গে একমত হয়ে ইমরান বলেন, ‘সম্মানীর দিক থেকে হয়তো অন্য কাজের চেয়ে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তবে সম্মানের দিকে কিছুটা এগিয়ে। আমরা ছোট ও মাঝারি পর্যায়ে থাকলেও ক্লাব কর্তারা যথেষ্ট সম্মান দেয় এবং অনেক সময় দলের সঙ্গে অন্য দেশেও ভ্রমণ করি। যেটা অনেক বড় গর্বের।’
বাংলাদেশের ক্লাবগুলো এএফসি কাপ পর্যায়ে খেলে। এশিয়ার ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পায় না। বাংলাদেশের ক্লাব না খেললেও এশিয়ার সেরা ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বাংলাদেশিদের।