রংপুরের মিঠাপুকুরে এক নারী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে স্বামী সন্তান রেখে যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বিয়ের দাবিতে অনশন এবং সন্তানের স্বীকৃতি চেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এমনকি পালিয়ে যাওয়ার সময় ওই নারী নিজের বাবার বাড়ি থেকে সাত লক্ষ টাকা নিয়ে পালানোর ঘটনায় নিজের বাবার বাড়ি সহ আত্মীয় স্বজনদের কাছে আশ্রয় না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনা জানাজানির পর থেকে অভিযুক্ত যুবককে তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রেখে পুরা বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯-জানুয়ারি) এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় ওই নারী বাদী হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মিঠাপুকুর থানার (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ওই নারীর অভিযোগের উপর ভিত্তি করে পুলিশ বেশ কয়েক দিন থেকে অভিযুক্ত যুবক এবং তার পরিবারের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা চালায়। যেহেতু ভিকটিম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তাই বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। কিন্তু শেষে কোনভাবেই সমাধান না হওয়ায় বিয়ের প্রলোভণে ধর্ষণের অভিযোগে ভিকটিম একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
ওই নারীর অভিযোগ, পাশ্ববর্তী পীরগন্জ উপজেলায় ১০ বছর পূর্বে তার পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয়। সেখানে তার ৯ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রায় দু’বছর পূর্বে একটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে মিঠাপুকুর উপজেলার ১০ নং বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বুজরুক সন্তোষপুর ইউনিয়নের (চাঁদ পাড়া) গ্রামের আব্দুর রউফের পুত্র শামিনুর রহমান (২৭) এর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শামিনুরের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তার সাবেক স্বামী জেনে যাওয়ায় শামিনুর ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভণে গত বছরের ১৫ জুলাই পালিয়ে নিয়ে এসে একটি বাড়িতে রেখে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ওই নারী পালিয়ে আসার সময় তার বাবার গচ্ছিত ৭ লক্ষ টাকা এবং স্বর্ণলংকার সহ শামিনুরের কাছে পালিয়ে আসেন।
পালিয়ে আসার পর শামিনুর ওই নারীর টাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন করে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে সংসার পাতেন। এরমধ্যে একটা সময় ওই নারী আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গর্ভধারনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ওই নারী শামিনুরকে কাবিন এবং বিয়ের জন্য চাপ দিলে শামিনুর তালবাহানা করে সময় কালক্ষেপণ করে আসছিলেন। একটা সময়ে ওই নারীর টাকা ফুরিয়ে গেলে এবং নারী ৬ মাসের অধিক অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে শামিনুর তাঁকে রংপুর পার্কের মোড়স্থ একটি ভাড়া বাসায় রেখে আত্মগোপনে চলে যান। শেষে শামিনুরের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে ওই নারী শামিনুরের খোঁজে শামিনুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে এবং অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেন। কিন্তু শামিনুরের বাবা মা,ভাই তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
ভুক্তভোগী ওই নারী আরো বলেন , আমার যাবার আর কোনো জায়গা নেই। শামিনুরের কথায় আমি আমার সাবেক স্বামীকে ছেড়েছি। অন্যদিকে বাবার ব্যবসার সাত লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে আসায় তাঁরা আমাকে ত্যাজ্য করেছে। বিবাহবহির্ভূত এই সন্তান পেটে থাকায় আত্মীয় স্বজন কেউ আমাকে জায়গা দিচ্ছেনা। এখন যদি শামিনুর ও তার পরিবার আমাকে মেনে না নেয় তাহলে আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তার দাবি, শামিনুর যদি তাঁকে মেনে নাও নেয়,তবু যেনো তাঁকে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিয়ে করে অনাগত সন্তানটিকে পিতৃ পরিচয় দেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শামিনুরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে শামিনুরের বড় ভাই আলমগীর বলেন, এই মেয়ে পাপের ফল নিয়ে আমাদের ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমরা আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ জানিনা।