সরকার কোনো গায়েবি মামলা করছে না, বরং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গায়েবি কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। রোববার (২১ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ ‘সরকার গায়েবি মামলা করছে’ এর পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, সরকার কোনো গায়েবি মামলা করছে না, বরং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গায়েবি কথাবার্তা বলছেন। আগের মামলায় যারা জামিনে আছে তাদের কিছুই করা হচ্ছে না, যাদের জামিন বাতিল হয়েছে তাদের তো পুলিশ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ধরবে। বিএনপি সমাবেশের নামে বড় পিকনিক করছে এবং সেজন্য চাঁদাবাজি করছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপির সমাবেশগুলো আসলে বড় পিকনিক। সিলেটের সমাবেশে তারা তিনদিন আগে গেছে, হোটেলে খাওয়া দাওয়া, তাস খেলা আবার মাঠের মধ্যে তাবু টানিয়ে রান্নাবান্না করে খেয়েছে- এটা একটা বড় পিকনিক। শীতের সময় আমরা যেমন পিকনিকে যেতাম, বিএনপির নেতাকর্মীরাও শুধু সিলেট অঞ্চল থেকে নয়, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ঢাকা থেকেও গেছে এবং সেখানে গিয়ে সমাবেশের নামে বড় পিকনিক করেছে এবং এগুলোর জন্য সারাদেশে চাঁদাবাজি করছে। অনেক ব্যবসায়ী আমাদেরকে অভিযোগ দিয়েছেন- বিএনপি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বা করার চেষ্টা করছে।
সাংবাদিকতার নামে কারো রাজনীতি করা উচিত নয় উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, গতকাল সিলেটে বিএনপির এবং ঢাকার গাজীপুরে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ হয়েছে এবং উপস্থিতির বিচারে দু’টি সমাবেশেই সমপরিমাণ লোক সমাগম হয়েছে। বরং গাজীপুরের সমাবেশে কারো কারো মতে বিএনপির সিলেটের সমাবেশের চেয়ে বেশি মানুষ হয়েছে, যদিওবা সেটি কোনো বিভাগীয় বা জেলা সমাবেশ নয়, সেটি ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। কিন্তু কোনো কোনো কাগজে, অনলাইনে দেখলাম যে গাজীপুরের সমাবেশের ছবিটা দিয়েছে মঞ্চের এবং দর্শকের একটা অংশ মাত্র। আর বিএনপির সমাবেশের ছবিটা দূর থেকে নিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে মনে হয় অনেক লোক হয়েছে। অবশ্যই বিএনপির সমাবেশ হবে সেটি পত্রপত্রিকায় প্রচার পাবে। কিন্তু এ ধরনের উপস্থাপনা সমীচীন কি না আপনাদের কাছে প্রশ্ন।
এক্ষেত্রে বিএনপির প্রভাব বা অর্থায়ন আছে কি না-এমন প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলের কোনো ইনভেস্টমেন্ট আছে কি না, কিংবা বিরোধীদল যে জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিরোধী দলের হয়ে সেই জঙ্গিদের কোনো অর্থায়ন আছে কি না সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তবে আমি আশা করবো যে, শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম এ ধরনের অপসাংবাদিকতা করা উচিত নয় বা সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা সমীচীন নয়।
১০ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া হলে বিএনপি সারা ঢাকা শহরে সমাবেশ করবে -এ মন্তব্যের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, বিএনপি যে ধরনের গণসমাবেশ করতে চায় সেজন্য উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে পূর্বাচল। এছাড়া মিরপুর ও বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়েও জায়গা আছে, সেগুলোও অনেকে বলছে। বিএনপি যে সভা সমাবেশ করছে, সরকার তাদেরকে সর্বোতভাবে সহায়তা করছে। গতকাল সিলেট শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ ছিলো, যাতে তারা নির্বিঘ্নে সভা সমাবেশ করতে পারে। আর আমরা যখন সভা সমাবেশ করতাম, তখন পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিপেটা করতো, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতো আর বিএনপি আমাদের সমাবেশে বোমা ছুড়তো। এটিই হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না, নিয়ন্ত্রণ করি না, করাও হবে না। কিন্তু সমাবেশের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে তাহলে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আমরা অতীতেও দেখেছি বিএনপি সমাবেশের নামে নানা জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বাস ট্রাক পুড়িয়েছে মানুষ পুড়িয়েছে। আর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। বিজয়ের মাসে ১০ ডিসেম্বর যদি পাকিস্তানপন্থি বিএনপির লোকজন, মির্জা ফখরুলরা ঢাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায় জনগণ তাদেরকে পাকিস্তানিদের মতোই আত্মসমর্পণ করাবে।