বার হামলার অভিযোগে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিল আলবেনিয়া। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এই ঘোষণা দেওয়ার পর ইরানি কূটনীতিকদের দেশ ছাড়তে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেয় দেশটি।
বলকান এই দেশটির আল্টিমেটাম মেনে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে আলবেনিয়া ছেড়েছেন ইরানের কূটনীতিকরা। তবে এর আগেই সকল নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলেন তারা। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাই মাসে সাইবার হামলার অভিযোগ এনে ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আলবেনিয়া। এরপর কূটনীতিকরা বৃহস্পতিবার ভোরে দূতাবাসের সকল নথি পুড়িয়ে ফেলেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, সাইবার হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় পূর্ব ইউরোপের বলকান রাষ্ট্র আলবেনিয়া। বুধবার সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেওয়ার পর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইরানের কূটনীতিকদের আলবেনিয়া ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়।
মূলত গত জুলাইয়ে আলবেনিয়ায় এক সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ তদন্তে সেই হামলার সঙ্গে ইরান জড়িত বলে প্রমাণ পায় আলবেনিয়া কর্তৃপক্ষ। এরপরই বুধবার ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি।
গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইদি রামা বুধবার বলেন, ‘সরকার ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তাৎক্ষণিকভাবে ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
একইসঙ্গে ইরানের কূটনীতিক ও কর্মীদের দূতাবাস বন্ধ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন বলে জানান ইদি রামা। তিনি আরও বলেছেন, এই চরম প্রতিক্রিয়া… সাইবার হামলার মাত্রা এবং ঝুঁকির দিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ সমানুপাতিক। সাইবার হামলার ফলে জনসাধারণকে দেওয়া সব পরিষেবা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার, ডিজিটাল সিস্টেম মুছে ফেলার এবং রাষ্ট্রীয় নথিপত্র হ্যাক করার, সরকারি অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রনিক যোগাযোগের নথি চুরি এবং দেশে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির হুমকি তৈরি করেছে।
রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ইরানের দূতাবাসের ভেতর থেকে এক ব্যক্তিকে মরিচা ধরা ব্যারেলে কাগজপত্র ছুঁড়তে দেখেছেন। ওই আগুনের শিখা দূতাবাসের তিনতলার দেয়ালকে আলোকিত করছে বলেও দেখা যায়।
আলবেনিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ওয়াশিংটনও জুলাইয়ের সেই সাইবার হামলার জন্য ইরানকে দোষারোপ করে এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে- মার্কিন মিত্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ এমন কর্মকাণ্ডের জন্য ইরানকে জবাবদিহি করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে তিরানার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এই পদক্ষেপের জন্য আলবেনিয়ার দাবি ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে তেহরান।
রয়টার্স বলছে, ২০১৪ সাল থেকে আলবেনিয়া এবং ইরানের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সেসময় পিপলস মুজাহিদিন অর্গানাইজেশন অব ইরান নামে নির্বাসিত একটি বিরোধী দলের প্রায় ৩ হাজার সদস্যকে আলবেনিয়া আশ্রয় দিলে এই উত্তেজনা দেখা দেয়। ইরানি এই দলটির ফার্সি নাম মুজাহিদিন-ই-খালক।
আলবেনিয়ায় ইরানি দূতাবাসটি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাত্র ২০০ মিটার (গজ) দূরে অবস্থিত। ইরানি কূটনীতিকরা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে দূতাবাস ও আশপাশের এলাকা ছিল শান্ত।
কূটনৈতিক গাড়ির প্লেটসহ একটি কালো অডি গাড়িকে সকালের দিকে দূতাবাসের ভেতরে প্রবেশ করতে এবং বাইরে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া দূতাবাস বন্ধ হলেও একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রবেশদ্বারে পাহারায় ছিলেন।