বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ- এ প্রশাসক নিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী এক বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দিদার নগদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বুধবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ এর অভ্যন্তরীণ আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রসাশককে তার কার্যক্রমে সহযোগিতা করার জন্য নগদ- এ আরও ছয় কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন—পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার উল্ল্যাহ, পলাশ মন্ডল, উপ-পরিচালক চয়ন বিশ্বাস, মো. আইয়ুব খান এবং মতিঝিল অফিসের যুগ্ম পরিচালক আবু ছাদাত মোহাম্মদ ইয়াছিন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর যাত্রা ২০১৯ সালের ২৬ মার্চে। শুরু থেকেই ‘রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লাইসেন্স ছাড়া কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মোবাইলে আর্থিক সেবা নগদ। এরপর রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিদায়ী সরকারের সময় লাইসেন্স নেয় নগদ ডিজিটাল ব্যাংক। নথিপত্রে ঘাটতি থাকার পরও এই অনুমোদন দেন সাবেক গভর্নর। এখন তথ্যে গরমিল বা উদ্যোক্তাদের যোগ্যতায় ঘাটতি পাওয়া গেলে সেই লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। কোনো ঘাটতি না মিললে কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেওয়া হবে।
গত জুনে দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স পায় নগদ। আইনে বিশেষ ছাড় দিয়ে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’কে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইনে একক ব্যক্তি, পরিবার বা কোম্পানির কোনো ব্যাংকে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণে যে বিধিনিষেধ রয়েছে, তাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে নগদকে।
এদিকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়ার দুই মাস পর নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীদের তথ্য খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি নগদের বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়েছে, নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির উদ্যোক্তা শেয়ারধারীদের তথ্য যাচাই করা প্রয়োজন। নগদের পাঁচটি বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হলো ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনারস এলএলসি, জেন ফিনটেক এলএলসি, ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড এবং ট্রপে টেকনোলজিস এলএলসি। চিঠিতে এই পাঁচটি বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনপত্র যুক্ত করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সংগ্রহ করে জমা দিতে বলা হয়।
মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশের পরই এখন নগদের অবস্থান। তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চলেনি প্রতিষ্ঠানটি। ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও আদতে এতে সরকারের কোনো অংশীদারত্ব ছিল না। দফায় দফায় পরিবর্তন হয় নগদের মালিকানায়। প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। যথাযথ গ্রাহক তথ্য যাচাই (কেওয়াইসি) ছাড়াই মোবাইল ফোন গ্রাহকদের নিজস্ব গ্রাহক বানিয়ে ফেলার সুযোগ পায় নগদ।
এ ছাড়া সরকারের সব ভাতা বিতরণে একচ্ছত্র সুবিধা পায় নগদ। ফলে সরকারি ভাতা পেতে নগদের গ্রাহক হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে। এই ভাতা বিতরণে নয়-ছয় হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশের পরই এখন নগদের অবস্থান। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নানা প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মেনে চলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও আদতে এতে সরকারের কোনো অংশীদারত্ব নেই। নগদের মালিকানায় বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা নূর, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। ২০১৭ সালের ডিসেম্ববে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় মোবাইলে আর্থিক সেবা পরিচালনার জন্য থার্ড ওয়েভকে কাজ দেয়।
২০১৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগদের উদ্বোধন করেন। পরে বিভিন্ন সময়ে এর মালিকানায় যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যথাযথ গ্রাহক তথ্য যাচাই (কেওয়াইসি) ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল গ্রাহকদের নিজস্ব গ্রাহক বানিয়ে ফেলার সুযোগ পায় নগদ। সরকারের সব ভাতা বিতরণেরও একচ্ছত্র সুবিধা পায় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সরকারি ভাতা পেতে নগদের গ্রাহক হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। নগদে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন তানভীর আহমেদ, নিয়াজ মোর্শেদ ও মারুফুল ইসলাম।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেকটি প্রতিষ্ঠান অনৈতিক ও নিয়মবহির্ভূত সুবিধা নিয়েছেন তার প্রথম সারিতেই রয়েছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। লাইসেন্স ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা, শর্ত পূরণ না করেই ব্যাংকের অনুমোদন, ভাতা বিতরণে একচ্ছত্র আধিপত্য, ভাতা বিতরণের নামে লুটপাট, প্রযুক্তিগত দুর্বলতার সুযোগে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা বেহাত হওয়া, ক্ষমতাসীনদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের স্পন্সর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ডাক বিভাগের নাম দিয়ে লাইসেন্স ছাড়াই মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস শুরু করে। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে করা হয় নগদ। বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি না হয়েও নীতিমালা লঙ্ঘন করে বছরের পর বছর চালিয়ে যায় কার্যক্রম। পতিত স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের আশীর্বাদে হাতে পেয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পর্যন্ত। একই প্রভাবে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বিভিন্ন ধরণের ভাতা বিরতণের কাজও হাতিয়ে নিয়েছে এককভাবে। আবার এসব ভাতা বিতরণে ঘটেছে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম, লুটপাটের ঘটনা। এসব কাজ হালাল করতে প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যুক্ত করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। এছাড়া যথাযথ গ্রাহক তথ্য যাচাই (কেওয়াইসি) ছাড়াই গ্রাহকদের নিজস্ব গ্রাহক বানিয়ে ফেলার সুযোগ পায় নগদ।
লাইসেন্স ছাড়াই চালিয়েছে কার্যক্রম:
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত লাইসেন্স ছাড়া কার্যক্রম চালিয়েছে নগদ। এরপর রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিদায়ী সরকারের সময় লাইসেন্স নেয় নগদ ডিজিটাল ব্যাংক। নথিপত্রে ঘাটতি থাকার পরও এই অনুমোদন দেন সাবেক গভর্নর।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ নগদ (থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড কোম্পানি) নামে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে এর আগে ২০১৬ সালে মোবাইলে আর্থিক সেবা দিতে গড়ে ওঠে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এতে নগদের প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুকের পাশাপাশি মালিকানায় যুক্ত হন কাজী মনিরুল কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, সৈয়দ আরশাদ রেজা ও মিজানুর রহমান। ২০১৭ সালে ডাক অধিদপ্তরের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার কাজ নেয় থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস। নগদের কার্যক্রম শুরুর আগেই কাজী মনিরুল কবির অংশীদার ছেড়ে দিলে মালিকানায় যুক্ত হন আওয়ামী লীগের তৎকালীন দুই এমপি নাহিম রাজ্জাক, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, রেজওয়ানা নূর (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারির আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী)। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার পর কয়েকবার মালিকানায় পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে কেউ কেউ বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। এখন নগদের পরিচালক ৯ জন, এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও সিঙ্গাপুরের ১ জন করে নাগরিক রয়েছেন। অন্য ৬ জন বাংলাদেশি।
নগদকে সুবিধা দিতে রেগুলেশন পরিবর্তন:
প্রাথমিক অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা নগদকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ২০২২ সালে “এমএফএস রেগুলেশন-২০১৮”-তে পরিবর্তন আনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মূল রেগুলেশন অনুযায়ী এমএফএস প্রতিষ্ঠান হতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি। কিন্তু, শুরু থেকেই নগদ বলে এটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেবা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকলেও সে সময় নিজেদের সরকারি প্রতিষ্ঠান দাবি করে নগদ তার গ্রাহকদের সাথে শুরু থেকেই প্রতারণা করে বলে অভিযোগ করেন ডাক বিভাগ ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যে গরমিল-যোগ্যতা না থাকলে ব্যাংকের অনুমোদন:
রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বিদায়ী স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সময় লাইসেন্স নেয় নগদ ডিজিটাল ব্যাংক। নথিপত্রে ঘাটতি থাকার পরও গত জুনে প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে নগদকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেন সাবেক গভর্নর। আইনে বিশেষ ছাড় দিয়ে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’কে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (বিআরপিডি) শাহরিয়ার সিদ্দিকী সে সময় নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ তানভীর এ মিশুকের হাতে ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’র লাইসেন্স তুলে দেন।
যদিও ব্যাংক কোম্পানি আইনে একক ব্যক্তি, পরিবার বা কোম্পানির কোনো ব্যাংকে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণে যে বিধিনিষেধ রয়েছে, তাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে নগদকে। ওই সময়ে এক প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ ক (১) ধারার উল্লেখ করে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারার ক্ষমতাবলে ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, আরসিসি ক্যাপিটাল পার্টনারস এলএলসি এবং ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড কর্তৃক ‘নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’র শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ১৪ ক (১) ধারা প্রযোজ্য হবে না। তাদের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকে।
রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসিএফ) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার এলএলসি নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশের মালিক। এ প্রতিষ্ঠানে মালিকানায় রয়েছেন নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক। উইলমিংটনে অবস্থিত আরেক প্রতিষ্ঠান জেন ফিনটেক এলএলসির ড্যানিয়েল ভিনসেন্ট পারকারের রয়েছে ৫ শতাংশ মালিকানা। ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসির হাতে রয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার। আর এই কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জেরিন আহমেদ আঁখির নাম।
নগদে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের গ্রেট ফলসে নিবন্ধিত ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসির রয়েছে ২৫ শতাংশ মালিকানা। আর এই কোম্পানির মালিকানায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী মুহাম্মদ ফরিদ খান। মুহাম্মদ ফরিদ খানের যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী পুত্র ফারহান করিম খানের হাতে রয়েছে আরও ৫ শতাংশ শেয়ার।
সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারে অবস্থিত ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ১১ শতাংশের মালিক। এ প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করছেন নকিব চৌধুরী। ঢাকার পুরানা পল্টনে অবস্থিত ফিনটেকচুয়াল হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রতিনিধি মারুফুল ইসলাম ঝলকের রয়েছে ১ শতাংশ শেয়ার। মারুফুল ইসলাম নগদের নির্বাহী পরিচালক পদেও রয়েছেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন গভর্নর দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তথ্যে গরমিল বা উদ্যোক্তাদের যোগ্যতায় ঘাটতি পাওয়া গেলে সেই লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। কোনো ঘাটতি না মিললে কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত লাইসেন্স দেওয়ার দুই মাস পর নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীদের তথ্য খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নগদের বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছেও। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এ চিঠি পাঠায়। চিঠিতৈ পাঁচটি বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত করে তাদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠান পাঁচটি হলো ব্লু হেভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনারস এলএলসি, জেন ফিনটেক এলএলসি, ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেড এবং ট্রপে টেকনোলজিস এলএলসি।
ভাতা বিতরণে একচ্ছত্র আধিপত্য:
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বিধান কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরণ করা হয়। এই ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রে দেশের সকল এমএফএস কোম্পানিকে যুক্ত করা হলেও নগদ এটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি তানভীর এ মিশুক শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ট ব্যক্তি পরিচয়ে বিশেষ সুবিধা আদায়, এতেও কাজ না হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি নিয়ে এসে, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের মাধ্যমে পুরো ভাতা বিতরণের প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণে নেয় নগদ।
এসব মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৩২ লাখ, মাধ্যমিকে ৪৪ লাখ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অধীনে স্নাতক পর্যায়ে ৫৫ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করে। আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৮ লাখ ১ হাজার জনকে বয়স্ক ভাতা, ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনকে বয়স্ক ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা সহায়তা ভাতা, ২৯ লাখ প্রতিবন্ধীকে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হয়। যার প্রায় পুরোটাই বিতরণের নিয়ন্ত্রণ ছিল নগদের কাছে। সরকারি ভাতা পেতে নগদের গ্রাহক হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে।
এসব মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবকরা অভিযোগ করেন- আগে প্রাথমিকে এই উপবৃত্তির টাকা শিওরক্যাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং-এ প্রদান করা হলেও গত বছর থেকে শুধু ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই উপবৃত্তির দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) নগদ এর মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ করার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তানভীর এ মিশুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি ইস্যু করিয়ে সেটি মন্ত্রীর কাছে দিতেন এবং মন্ত্রীর সামনে বসে থেকে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে বাস্তবায়নের নির্দেশ আদায় করে নিতেন। একইসঙ্গে অন্য কোন এমএফএস কোম্পানি যাতে এই কাজ না পায় সে ব্যাপারেও প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিতেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর প্রাথমিক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোবাইল ব্যাংকিং ‘নগদ’র মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের নির্দেশনা দেয়। অথচ গতবছর এ সংক্রান্ত দুটি নির্দেশিকায় যে কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছানোর কথা বলা ছিল। তা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিতে নীতিমালাই বদলে ফেলা হয়। গত ৩০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এর আওতায় মাধ্যমিক হতে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও ভর্তি সহায়তার অর্থ নগদের মাধ্যমে বিতরণের নির্দেশ প্রদান করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণকারী নগদ ব্যতীত অন্য সব আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৪ লাখ উপকারভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নাম্বার ‘নগদ’ এ পরিবর্তন করতে নির্দেশ দেয়া হয় চিঠিতে। বিদ্যমান অনলাইন সফটওয়্যারে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসাবে শুধু ‘নগদ’ নির্বাচনের সুযোগ রেখে অন্যান্যগুলো বন্ধ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে ৫ ডিসেম্বর ডিপিইর পাঠানো প্রস্তাবে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি শুধু মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা (এমএফএস) নগদ-এর মাধ্যমে বিতরণের বিষয়ে এ সংক্রান্ত দুটি নির্দেশিকা সংশোধনের কথা বলা আছে।
বগুড়া সাজাপুর ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী প্রামানিক বলেন, আমাদের স্কুল থেকে ৮৪ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। গত বছর এই টাকা উঠাতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। অনেক সময় অভিভাবকদের অজান্তে এই টাকা অন্য কেউ উঠিয়ে নিয়ে গেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া আশপাশে নগদের এজেন্ট না থাকায় শহরে গিয়ে এই উপবৃত্তির টাকা উঠাতে হয়।