সন্তান ভূমিষ্ঠের পর নাম ‘রাইয়ান’ রাখবেন বলে ঠিক করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে গুলিতে শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেল। তখন তার স্ত্রী হ্যাপী আক্তার নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দেবিদ্বার সদরের একটি হাসপাতালে শহীদ রুবেলের ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বাবার অসিয়ত অনুযায়ী সন্তানের নাম রাখা হয় ‘রাইয়ান’ অর্থাৎ জান্নাতের দরজা।
রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ রুবেলের বৃদ্ধ মা হোসনেয়ারা বেগম নাতি রাইয়ানকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন। গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে তিনি কান্না করতে করতে বলছেন, ‘বাবারে আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হইতো’। কপাল পোড়া নাতিটা জন্মের পর তার বাবার মুখ দেখতে পারল না’। বড় হয়ে বাবাকে খুঁজলে আমি কি জবাব দেব। এখন এই সন্তানের দায়িত্ব নেবে কে?
শহীদ রুবেলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বাবা রফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন একমাত্র ছেলে রুবেল। তিনি পেশায় বাসচালক এবং দেবিদ্বার পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার নৌফা নামে ছয় বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে।
শহীদ রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার বলেন, আমার স্বামীর ইচ্ছে ছিল ছেলেসন্তান হলে ‘রাইয়ান’ নাম রাখবেন। নাম রাইয়ানই রাখা হয়েছে। আমার একটি সুখি পরিবার ছিল, একটি গুলিতে নিভে গেল সব। সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারল না তার বাবা। আমার স্বামীর কি অপরাধ ছিল তাকে কেন ঘাতকরা গুলি করে মারল?
রুবেলের শ্যালক মো. সৈকত হোসেন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে রুবেল ভাইয়ের একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। মা ও ছেলে দুজনই সুস্থ আছেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সব খরচ বহন করা হয়েছে।
এ বিষয় কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মু.সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেছেন, দেশের জন্য শহীদ রুবেলের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তার আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চেষ্টা করেছে শহীদ রুবেলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। এরই অংশ হিসেবে তার স্ত্রীর সিজার অপারেশন ও ওষুধপত্রের যাবতীয় খরচ বহন করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও রুবেলের পরিবারের পাশে জামায়াত থাকবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট দুপুরে দেবিদ্বার উপজেলা সদরে ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ওই সময় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে প্রথমে গুলি, পরে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।