ঢাকা ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চিন্ময়ের গ্রেফতার ও সাইফুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে যত অপতথ্য ছড়িয়েছে বাংলাদেশকে ২২৬৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জার্মানি দুদকের মামলায় অব্যাহতি পেলেন জামায়াত সেক্রেটারি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কীটনাশক বীজ রাখার দায়ে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমান গুজবে কান দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি না করার আহবান জাবিতে ছাত্রদলের দুগ্রুপে উত্তেজনা, বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার পরকীয়ার জেরে স্বামী খুন, স্ত্রী প্রেমিকসহ ৩ জনের ফাঁসি নিটওয়্যার উদ্ভাবন ও সহযোগিতায় সিজিং ‘বাংলাদেশ নাইট’ ১১১ নারীকে ধর্ষণ–যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ধনকুবের ফায়েদ ইসকন ও আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের

আমাকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানো হয়েছিল: ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি

বেসরকারি ব্যাংকগুলো মধ্যে দেশের সবচেয়ে সফলতম ইসলামী ব্যাংক দখল করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি। সেদিন ভোরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কয়েকজন কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নানকে তার বাসা থেকে কচুক্ষেতে ডিজিএফআই কার্যালয়ে নিয়ে যান।

এছাড়া সেইদিন একইভাবে নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে। এরপর তাদের জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে ব্যাংকটি দখলে নেয় মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপ।

ওই দিন ইসলামী ব্যাংকের একটি অব্যবহৃত প্যাডে লেখা পদত্যাগপত্রে জোর করে সই নেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি আবদুল মান্নান।

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে ব্যাংকিং খাতে দখলদারত্ব উচ্ছেদ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার।

ব্যাংকটির সাবেক এ এমডি বলেন, আমাকে যে কাগজে সই করানো হয়, সেটি ইসলামী ব্যাংকের একটি প্যাড। কিন্তু সেই প্যাড ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক কখনই ব্যবহার করেনি। সে ধরনের একটি প্যাডে আমার পদত্যাগপত্র নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই দিন অনেক রাত পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্যাররা অফিস করেছেন। তারা ওই দিনই ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে কাজ করেছেন। এগুলো কীভাবে হতে পারে একটি দেশের ব্যাংক খাতে। যে ব্যাংক খাত একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ।

তিনি আরও বলেন, পরের কয়েক বছর তাদের টেলিফোনে (এস আলম গ্রুপ) বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এমনটা ঘটানোর কেউ সাহস না পায়।

দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর দেশে ফিরেছেন জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, বিদেশে থাকার সময় দেশ থেকে সাংবাদিকদের কেউ কেউ যোগাযোগ করলেও আমি কথা বলিনি। কারণ, আমি নিরাপদ বোধ করিনি। আতঙ্কের মধ্যে থেকেছি। আবার বাংলাদেশে এসে নিশ্বাস নিতে পারব বলে মনে করিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি এখন মনে করি, কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। তবে সেই ভয় কাটতে বোধ হয় সময় লাগবে। মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে বোধ হয় আমার আরও সময় লাগবে।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে প্রতারণা ও দুর্বৃত্তায়নের মূল কারণ হিসেবে নষ্ট ও পচা রাজনীতি দায়ী বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, জনকল্যাণের পরিবর্তে গোষ্ঠীর কল্যাণে রাজনীতি কাজ করছে। ইসলামী ব্যাংক দখলের পেছনে রাজনৈতিক কারণ ও রাজনীতিকদের নির্দেশ ছিল। সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এস আলম গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক দখল করতে সরাসরি নির্দেশনা দেন। ফলে রাজনীতি জনকল্যাণমূলক না হলে কোনো কিছুই ঠিক হবে না।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিদায়ী সরকার ক্রোনি গোষ্ঠী (স্বজনতোষী পুঁজিপতি) সৃষ্টি করে। তারাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ঠিক না করে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব না আনা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। অন্যথায় সমস্যার সমাধান হলেও তা টেকসই হবে না।

ওয়েবিনারে অংশ নেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যাডজ্যাংক্ট প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চিন্ময়ের গ্রেফতার ও সাইফুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে যত অপতথ্য ছড়িয়েছে

আমাকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানো হয়েছিল: ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি

আপডেট সময় ০১:৫৫:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

বেসরকারি ব্যাংকগুলো মধ্যে দেশের সবচেয়ে সফলতম ইসলামী ব্যাংক দখল করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি। সেদিন ভোরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কয়েকজন কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নানকে তার বাসা থেকে কচুক্ষেতে ডিজিএফআই কার্যালয়ে নিয়ে যান।

এছাড়া সেইদিন একইভাবে নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে। এরপর তাদের জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে ব্যাংকটি দখলে নেয় মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপ।

ওই দিন ইসলামী ব্যাংকের একটি অব্যবহৃত প্যাডে লেখা পদত্যাগপত্রে জোর করে সই নেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির সাবেক এমডি আবদুল মান্নান।

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে ব্যাংকিং খাতে দখলদারত্ব উচ্ছেদ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার।

ব্যাংকটির সাবেক এ এমডি বলেন, আমাকে যে কাগজে সই করানো হয়, সেটি ইসলামী ব্যাংকের একটি প্যাড। কিন্তু সেই প্যাড ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক কখনই ব্যবহার করেনি। সে ধরনের একটি প্যাডে আমার পদত্যাগপত্র নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই দিন অনেক রাত পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্যাররা অফিস করেছেন। তারা ওই দিনই ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে কাজ করেছেন। এগুলো কীভাবে হতে পারে একটি দেশের ব্যাংক খাতে। যে ব্যাংক খাত একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ।

তিনি আরও বলেন, পরের কয়েক বছর তাদের টেলিফোনে (এস আলম গ্রুপ) বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এমনটা ঘটানোর কেউ সাহস না পায়।

দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর দেশে ফিরেছেন জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, বিদেশে থাকার সময় দেশ থেকে সাংবাদিকদের কেউ কেউ যোগাযোগ করলেও আমি কথা বলিনি। কারণ, আমি নিরাপদ বোধ করিনি। আতঙ্কের মধ্যে থেকেছি। আবার বাংলাদেশে এসে নিশ্বাস নিতে পারব বলে মনে করিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি এখন মনে করি, কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। তবে সেই ভয় কাটতে বোধ হয় সময় লাগবে। মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে বোধ হয় আমার আরও সময় লাগবে।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে প্রতারণা ও দুর্বৃত্তায়নের মূল কারণ হিসেবে নষ্ট ও পচা রাজনীতি দায়ী বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, জনকল্যাণের পরিবর্তে গোষ্ঠীর কল্যাণে রাজনীতি কাজ করছে। ইসলামী ব্যাংক দখলের পেছনে রাজনৈতিক কারণ ও রাজনীতিকদের নির্দেশ ছিল। সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এস আলম গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক দখল করতে সরাসরি নির্দেশনা দেন। ফলে রাজনীতি জনকল্যাণমূলক না হলে কোনো কিছুই ঠিক হবে না।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিদায়ী সরকার ক্রোনি গোষ্ঠী (স্বজনতোষী পুঁজিপতি) সৃষ্টি করে। তারাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ঠিক না করে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব না আনা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। অন্যথায় সমস্যার সমাধান হলেও তা টেকসই হবে না।

ওয়েবিনারে অংশ নেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যাডজ্যাংক্ট প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান।