ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সাধু খাঁ’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক তুষার মোহন সাধু খাঁ‘র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর এই অভিযোগ দিয়েছেন শামিম হোসেন নামের এক ব্যাক্তি। স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের কাজের মধ্যদিয়ে প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এসব টাকা লুটপাটের কারণে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয় ওই চিঠিতে।

গত বছর ৩১ অক্টোবর আবেদনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন শামিম হোসেন। যার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সেই তুষার মোহন সাধু খাঁ বর্তমানে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এর আগে তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) পদে ছিলেন এবং সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, তুষার মোহন সাধু খাঁ রাজধানীর লালমাটিয়ায় তার ছোট বোনের বাসায় ঘুষের টাকা রাখতেন। পরে ঠিকাদার দিলীপ বাবুর মাধ্যমে হুণ্ডি করে ওই টাকা ইন্ডিয়া এবং আমেরিকায় বসবাস করা তার ছোট ভাই ও কানাডায় বসবাসরত তার মেয়ের কাছে পাঠাতেন। ঘুষের টাকার বোশিরভাগ তার ছোট বোন ও ভাইয়ের কাছেও পাঠান বলেও উল্লেখ করা হয় এই চিঠিতে। ছোট ভগ্নিপতি মারা যাওয়ার আগে তিনিই হুল্ডি ব্যবসায়ির কাছে ঘুষের টাকা পৌঁছে দিতেন।

ইন্ডিয়া, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই ও শ্রীলঙ্কায় তার নামে বেনামে গাড়ি-বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রাকলনিক আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে আগে ঘুষের টাকা লেনদেন করলেও পরে সরাসরি নিজেই বিশ^স্ত ঠিকাদার ও বিভিন্ন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঘুষের টাকা লেনদেন করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী নিজ মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প রিভাইসড হওয়ার কথা থাকলেও বিধি লঙ্ঘণ করে এবং নিয়মের বাইরে ব্যত্যয় ঘটিয়ে আগের আইটেমের সঙ্গে নতুন আইটেম একসঙ্গে যোগ করে প্রকল্প রিভাইসড করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ডিপিপির উপজেলা অনুযায়ী বন্টননামা ১৫০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা আছে। শুধু একটি জেলায় ১৫ হাজার টিউবওয়েল স্থাপনের কথা রয়েছে ডিপিপিতে। বেশিরভাগ উপজেলায় ৪ হাজার, ৫ হাজার, ৬ হাজার, ৭ হাজার পর্যন্ত টিউবওয়েল বরাদ্দ রয়েছে।

ডিপিপিতে যে উপজেলায় পূর্বের প্রকল্পের বেশি কাজ হয়েছে এবং অন্য প্রজেক্ট চলমান আছে সেই উপজেলায় কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে উপজেলায় পূর্বের প্রকল্পে কম কাজ হয়েছে এবং অন্য প্রজেক্টের চলমান কোনো কাজ নাই সেই উপজেলায় বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, জনসংখ্যার আনুপাতিক হার হিসেবে ডিপিপির রিভাইজড ছাড়াই কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দেশের সব ইউনিয়নে সমভাবে বন্টন করা হয়েছে। যেখানে অতীব জরুরি সেখানে বরাদ্দ না দিয়ে যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে টিউবওয়েল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ডিপিপি অনুযায়ী প্রতি ৬০ জনে ১টি টিউবওয়েল স্থাপন হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কোনো কোনো জায়গায় ২০ জনে একটি করে টিউবওয়েল পেয়েছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় একটিও নেই। ফলে অবহেলিত এলাকা অবহেলিতই রয়ে গেছে। এ হিসাবে সারাদেশে প্রায় ৬ লাখ টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও জনগণ সার্বিকভাবে উপকৃত হবে না। ৬ লাখ টেন্ডার আহ্বান শেষ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিজে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে সমভাবে টেন্ডার আহ্বান করেছে।

ডিপিপিতে যেভাবে প্যাকেজ উল্লেখ ছিল তা ভায়লেট করা হয়েছে। এবং মনগড়াভাবে করা হয়েছে। ডিপিপির সাথে সংখ্যা ও প্যাকেজের কোনো মিল নাই। ১০ শতাংশ লেস কাজের সিএসও মাসের পর মাস পড়ে থাকার প্রমাণ পাওযা গেছে। জেলার বিভিন্ন মাঠ পর্র্যায়ের টেন্ডার প্রত্রিয়া যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া যায়। পিডি নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ফিল্ডে সময়মত কাজও বাস্তবায়ন হয়নি। পানির কোয়ালিটি নিয়ে পিডিসহ কর্মকর্তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

টিউবওয়েলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকার পরও ঠিকাদারদের বিল দেয়া হয়েছে। যেখানে ওয়াটার কোয়ালিটি খারাপ সেখানে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ভেসেল টাইপ প্রেসার ফিল্টার ধরা আছে ডিপিপিতে। কিন্তু পিডি তার পূর্ব পরিচিত ও নিজস্ব কোম্পানির নিম্নমানের ১৮ হাজার টাকার ‘আরও ফিল্টার’ ওই সমস্ত খারাপ ওয়াটার কোয়ালিটির জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। ডিপিপিতে পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই ৪৯১টি উপজেলায় ছিল। বেশিরভাগ জেলায় কোনো অগ্রগতি নাই। শুধু টেন্ডার আহ্বান করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনগণ উপকৃত হচ্ছে না।

প্রকল্পটির কাজে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে খোদ সরকারি সংস্থা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ বিভাগ (আইএমইডি)। এরমধ্যে নির্মাণ ত্রুটি ঠিকাদারের জবাবদিহীতা নিশ্চিত না করার মতো অভিযোগও রয়েছে তুষার মোহন সাধু খাঁ’র বিরুদ্ধে। প্রকল্প পরিচালনার অন্যতম নিয়ামক হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সংখ্যক পিআইসি ও পিএসসি সভা না করা, মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ না দেয়ার মতো দুর্বলতা ও ত্রুটি রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় এই অভিযোগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্প থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তুষার মোহন সাধু খাঁ যতো টাকা আয় করেছে তার চেয়ে বেশি আয় করেছে স্টিমেটর আনোয়ার সাহেব। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ টাকা আনোয়ার সাহেবের হাত দিয়ে এসেছে। মাঠ পর্যায়ে এবং ঠিকাদারদের সাথে স্যার (সাধু খাঁ) এসব নিয়ে কথা বলতেন না। দেন-দরবার সব করতেন আনোয়ার সাহেব। কার সাথে কতো চুক্তি এসব থেকে অনেকটাই স্যারকে অন্ধকারে রাখা হতো। যেখান থেকে টাকা আসতো ২০ লাখ, আনোয়ার সাহেব স্যারকে বলতেন ৫ লাখে রফাদফা হয়েছে।’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ মুঠোফোনে বলেন, ‘এই অভিযোগ অনেক পুরনো।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সাধু খাঁ’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৭:১২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক তুষার মোহন সাধু খাঁ‘র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর এই অভিযোগ দিয়েছেন শামিম হোসেন নামের এক ব্যাক্তি। স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের কাজের মধ্যদিয়ে প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এসব টাকা লুটপাটের কারণে তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয় ওই চিঠিতে।

গত বছর ৩১ অক্টোবর আবেদনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন শামিম হোসেন। যার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সেই তুষার মোহন সাধু খাঁ বর্তমানে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এর আগে তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) পদে ছিলেন এবং সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, তুষার মোহন সাধু খাঁ রাজধানীর লালমাটিয়ায় তার ছোট বোনের বাসায় ঘুষের টাকা রাখতেন। পরে ঠিকাদার দিলীপ বাবুর মাধ্যমে হুণ্ডি করে ওই টাকা ইন্ডিয়া এবং আমেরিকায় বসবাস করা তার ছোট ভাই ও কানাডায় বসবাসরত তার মেয়ের কাছে পাঠাতেন। ঘুষের টাকার বোশিরভাগ তার ছোট বোন ও ভাইয়ের কাছেও পাঠান বলেও উল্লেখ করা হয় এই চিঠিতে। ছোট ভগ্নিপতি মারা যাওয়ার আগে তিনিই হুল্ডি ব্যবসায়ির কাছে ঘুষের টাকা পৌঁছে দিতেন।

ইন্ডিয়া, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই ও শ্রীলঙ্কায় তার নামে বেনামে গাড়ি-বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রাকলনিক আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে আগে ঘুষের টাকা লেনদেন করলেও পরে সরাসরি নিজেই বিশ^স্ত ঠিকাদার ও বিভিন্ন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঘুষের টাকা লেনদেন করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী নিজ মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প রিভাইসড হওয়ার কথা থাকলেও বিধি লঙ্ঘণ করে এবং নিয়মের বাইরে ব্যত্যয় ঘটিয়ে আগের আইটেমের সঙ্গে নতুন আইটেম একসঙ্গে যোগ করে প্রকল্প রিভাইসড করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ডিপিপির উপজেলা অনুযায়ী বন্টননামা ১৫০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা আছে। শুধু একটি জেলায় ১৫ হাজার টিউবওয়েল স্থাপনের কথা রয়েছে ডিপিপিতে। বেশিরভাগ উপজেলায় ৪ হাজার, ৫ হাজার, ৬ হাজার, ৭ হাজার পর্যন্ত টিউবওয়েল বরাদ্দ রয়েছে।

ডিপিপিতে যে উপজেলায় পূর্বের প্রকল্পের বেশি কাজ হয়েছে এবং অন্য প্রজেক্ট চলমান আছে সেই উপজেলায় কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে উপজেলায় পূর্বের প্রকল্পে কম কাজ হয়েছে এবং অন্য প্রজেক্টের চলমান কোনো কাজ নাই সেই উপজেলায় বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, জনসংখ্যার আনুপাতিক হার হিসেবে ডিপিপির রিভাইজড ছাড়াই কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দেশের সব ইউনিয়নে সমভাবে বন্টন করা হয়েছে। যেখানে অতীব জরুরি সেখানে বরাদ্দ না দিয়ে যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে টিউবওয়েল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ডিপিপি অনুযায়ী প্রতি ৬০ জনে ১টি টিউবওয়েল স্থাপন হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কোনো কোনো জায়গায় ২০ জনে একটি করে টিউবওয়েল পেয়েছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় একটিও নেই। ফলে অবহেলিত এলাকা অবহেলিতই রয়ে গেছে। এ হিসাবে সারাদেশে প্রায় ৬ লাখ টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও জনগণ সার্বিকভাবে উপকৃত হবে না। ৬ লাখ টেন্ডার আহ্বান শেষ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিজে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে সমভাবে টেন্ডার আহ্বান করেছে।

ডিপিপিতে যেভাবে প্যাকেজ উল্লেখ ছিল তা ভায়লেট করা হয়েছে। এবং মনগড়াভাবে করা হয়েছে। ডিপিপির সাথে সংখ্যা ও প্যাকেজের কোনো মিল নাই। ১০ শতাংশ লেস কাজের সিএসও মাসের পর মাস পড়ে থাকার প্রমাণ পাওযা গেছে। জেলার বিভিন্ন মাঠ পর্র্যায়ের টেন্ডার প্রত্রিয়া যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া যায়। পিডি নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ফিল্ডে সময়মত কাজও বাস্তবায়ন হয়নি। পানির কোয়ালিটি নিয়ে পিডিসহ কর্মকর্তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

টিউবওয়েলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকার পরও ঠিকাদারদের বিল দেয়া হয়েছে। যেখানে ওয়াটার কোয়ালিটি খারাপ সেখানে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ভেসেল টাইপ প্রেসার ফিল্টার ধরা আছে ডিপিপিতে। কিন্তু পিডি তার পূর্ব পরিচিত ও নিজস্ব কোম্পানির নিম্নমানের ১৮ হাজার টাকার ‘আরও ফিল্টার’ ওই সমস্ত খারাপ ওয়াটার কোয়ালিটির জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। ডিপিপিতে পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই ৪৯১টি উপজেলায় ছিল। বেশিরভাগ জেলায় কোনো অগ্রগতি নাই। শুধু টেন্ডার আহ্বান করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনগণ উপকৃত হচ্ছে না।

প্রকল্পটির কাজে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে খোদ সরকারি সংস্থা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ বিভাগ (আইএমইডি)। এরমধ্যে নির্মাণ ত্রুটি ঠিকাদারের জবাবদিহীতা নিশ্চিত না করার মতো অভিযোগও রয়েছে তুষার মোহন সাধু খাঁ’র বিরুদ্ধে। প্রকল্প পরিচালনার অন্যতম নিয়ামক হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সংখ্যক পিআইসি ও পিএসসি সভা না করা, মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ না দেয়ার মতো দুর্বলতা ও ত্রুটি রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় এই অভিযোগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্প থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তুষার মোহন সাধু খাঁ যতো টাকা আয় করেছে তার চেয়ে বেশি আয় করেছে স্টিমেটর আনোয়ার সাহেব। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ টাকা আনোয়ার সাহেবের হাত দিয়ে এসেছে। মাঠ পর্যায়ে এবং ঠিকাদারদের সাথে স্যার (সাধু খাঁ) এসব নিয়ে কথা বলতেন না। দেন-দরবার সব করতেন আনোয়ার সাহেব। কার সাথে কতো চুক্তি এসব থেকে অনেকটাই স্যারকে অন্ধকারে রাখা হতো। যেখান থেকে টাকা আসতো ২০ লাখ, আনোয়ার সাহেব স্যারকে বলতেন ৫ লাখে রফাদফা হয়েছে।’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ মুঠোফোনে বলেন, ‘এই অভিযোগ অনেক পুরনো।’