নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টিও আবারও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে। দেশটি বলছে, আমরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আমরা বুঝতে পারি, অনেক দেশই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে। আমরাও (যুক্তরাষ্ট্র) চীনের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফর ও পুতিনের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক ড. ইউনূসের বিচার ও শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশি আমেরিকানদের অলাভজনক প্ল্যাটফর্ম ‘কমিটি ফর ডেমোক্র্যাটিক বাংলাদেশ’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে আইনি সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে একটি চিঠি লিখেছে। চিঠিতে এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের কোনো ধরনের পদক্ষেপ না থাকার সমালোচনা করা হয়েছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ড. ইউনূসের অত্যন্ত শক্তিশালী আমেরিকান লবি দ্বারা অভিভূত হয়েছেন। ড. ইউনূস তার নিজের ট্যাক্সও দিচ্ছেন না বলে বাংলাদেশের আদালত প্রমাণ পেয়েছে। কমিটির উত্থাপিত উদ্বেগের বিষয়ে মার্কিন সরকারের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হবে?
একইসঙ্গে ওই সাংবাদিক আরেকটি প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে: আমি জানি, সবাই (রাশিয়ায়) মোদির সফর নিয়ে কথা বলছে এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফর এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একই সময়ে চীন সফর সম্পর্কে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি কী, সে সম্পর্কে জানতে চাই।
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ড. ইউনূসকে হয়রানি এবং হুমকি প্রদর্শনের জন্য শ্রম আইনের অপব্যবহার হতে পারে এমন শঙ্কায় আমরা এর আগেও আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আরও উদ্বিগ্ন, শ্রম এবং দুর্নীতিবিরোধী আইনের এই ধরনের অপব্যবহার আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে বাধা আসতে পারে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে মিলার বলেন, আমি ইতোমধ্যেই মোদির রাশিয়া সফরের বিষয়ে কথা বলেছি। আমি যা বলেছি তাতে এখন নতুন করে আর যোগ করার কিছু নেই। এবং (শেখ হাসিনার) চীন সফরের বিষয়ে বলব, দেখুন- আমরা বুঝতে পারি অনেক দেশই চীনের সঙ্গে জড়িত। আমরাও চীনের সঙ্গে জড়িত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী (অ্যান্থনি ব্লিংকেন) নিজেই দু’বার চীন সফর করেছেন, তাই এ বিষয়ে আমার আর কোনো কিছু বলার নেই।
এদিকে পৃথক এক প্রশ্নে আরেক সাংবাদিক সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নন এবং তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাকে অধ্যাপক ইউনূসের বিষয়ে ফোন করেছিলেন এবং অনেক মার্কিন কর্মকর্তাও ইউনূসের পক্ষে লবিং করেছিলেন এবং তাকে (শেখ হাসিনা) হুমকি দিয়েছিলেন।
তিনি আরও দাবি করেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংকের তহবিল বাতিল করতে তদবির করেছে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন, তিনি ইউনূস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে এখনো বৈঠকে বসার সুযোগ খুঁজছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এসব দাবির সত্যতা সম্পর্কে স্টেট ডিপার্টমেন্ট কী তার অবস্থান স্পষ্ট করবে?
জবাবে মিলার বলেন, আমি মনে করি এটা নিয়ে আমার বলার মতো কিছু নেই। আমি যেটা বলতে চাইছি, ১২ বছর আগের ঘটনা এটি। ১২ বছর আগে হিলারি ক্লিনটন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
এছাড়া নরেন্দ্র মোদির ভারত সফর নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং দেশটির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘের সনদের নীতির ভিত্তিতে ইউক্রেনে স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আমরা ভারতকে অনুরোধ করছি।