প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে উপজেলা শহরের ব্যস্ততম সকল রাস্তার সবখানে এই মরণযান অবৈধ ট্রাক্টর (কাঁকড়া) সগৌরবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
চালকের লাইসেন্স তো দূরের কথা, চালানোর নেই কোনো অভিজ্ঞতা। অল্প বয়সী কিশোরদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে কাঁকড়া নামের এসব যন্ত্রদানবের স্টিয়ারিং। আইন অমান্য করে তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলে এসব কাঁকড়া চলাচলের ফলে একদিকে যেমন জীবন হারাচ্ছে পথচারী সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাঘাট।
বেপরোয়া গতি আর বিকট শব্দে চলাচলকারী অবৈধ ট্রাক্টর ও টলির কারণে ভাঙ্গছে সড়ক, বাড়ছে অনাকাংখিত দুর্ঘটনা। এ যেন রামরাজত্ব, প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। রামগঞ্জে প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মরণযান ট্রাক্টর (কাঁকড়া)। প্রায় দিনই ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বাবা-মা। প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ অসহায় মানুষের। আর পকেট ভারি করছে প্রভাবশালী ও অসাধু ব্যক্তিরা। আর মাটি পরিবহণে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় পাচশ’ ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার দিয়ে তৈরী অবৈধ টলি।
মাটি কাটার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে এসব পরিবেশ বিনষ্টকারী অবৈধ যান। মাটি পরিবহণের সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও সদরের প্রধান সড়ক মারাত্মতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের ওপর ট্রাক্টরের মাটি পড়ে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এতে যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এসব যেনো দেখার কেউ নেই।
আইন অমান্য করে মরণযান এ সব কাঁকড়া রাস্তায় চলাচল করলেও অদ্যাবধি অদৃশ্য কারণে প্রশাসন আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার সচেতন নাগরিকগণ। উচ্চ মাত্রার শব্দে ট্রলি চলাচলের কারনে অতিমাত্রায় শব্দ দূর্ষণ হয়। যে কারনে সরকার ২০১০ সালে সারাদেশে সব ধরনের ট্রলি চলাচল অবৈধ ঘোষনা করে। এছাড়া ট্রলি আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ও নিদের্শদেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। কিন্তু সরকারের এই নিদের্শনাকে মানছেনা কেউই।
যে ট্রাক্টর আমদানি হলো চাষাবাদের জন্য সেই ট্রাক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে শহর ও গ্রামীণ জনপদের ক্ষতি সাধন করছে। গ্রামের কাঁচা সড়কে অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলের কারণেই ধূলিকণা সৃষ্টি করে। আর এই ধূলোর মধ্য দিয়ে জনসাধারণ চলাফেরা করায় শ্বাসকষ্ট, সর্দি -কাশি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলার পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নের প্রায় কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাটের বর্তমান পরিস্থিতি আজ এমন। জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। শুধু কি তাই, অবৈধ এই যন্ত্রদানব বেপরোয়া গতিতে চলাচলের সময় প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে শব্দ দূষণও। শব্দ দূষণের কারণেই রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ, আশপাশে থাকা গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইট ভাটার ইট, মাটি ও বালি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর। এ ছাড়াও অনেকেই নিজের বসতবাড়ি করার জন্য ডোবা কিংবা পুকুরে মাটি ভরাট করছেন এসব ট্রাক্টরে মাধ্যমে। আবার দেশে যে কোনো নির্বাচনী হাওয়া বইলে দেখা যায় নির্বাচনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ভোট কেন্দ্রে আনা নেয়া করেন এই যন্ত্রদানব অবৈধ ট্রাক্টরের (কাঁকড়া) মাধ্যমেই। অথচ নেই কোনো বৈধ রোডপার্মিট ও গাড়ি চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৪-১৮ বছরের কোমলমতি শিশু কিশোরদের দিয়েও ট্রাক্টর চালানো হচ্ছে।
ট্রাক্টর-ট্রলি সড়কে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ যন্ত্রদানবের চালকরা তা মানছে না। দ্রুতগতির ফলে সড়কগুলোতে প্রতিদিন দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার একাধিক আরোহী জানান, প্রতিদিন এসব কাঁকড়া জমি থেকে মাটি নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ায় কিছু মাটি রাস্তায় পরে যায়, ঘন কুয়াশায় রাস্তায় পরে থাকা মাটি খুবই পিচ্ছিল হয়ে থাকে ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মোটরসাইকেল চালক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে এবং ইতোমধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে।
এখনই যদি এ যন্ত্রদানবকে থামানো না যায় তাহলে মৃত্যুর মিছিল এবং পঙ্গু লোকের সারি আরও অনেক বড় হবে। সন্তান হারাবে তাদের পিতা-মাতা। আর পিতা মাতা হারাবে তাদের আদরের সন্তানদের। মেধাবী শিক্ষার্থী হারা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শোকের মিছিলে পরিণত হবে সড়ক। সেই সঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের রাস্তাগুলো হবে চলাচলে অযোগ্য।
পৌরমেয়র আবুল খায়ের জানান, পৌরশহরে সব ধরনের অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বে অসাধুরা অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি মাসিক মিটিং অবৈধ ট্রাক্টরের পরিবেশ বিধংসী অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, সড়কে বেআইনিভাবে চলাচল করা যানবাহন সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যতটুকু সম্ভব অভিযান পরিচালনা করে ট্রাক্টর মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে হাবীবা মীরা বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ‘সড়ক-মহাসড়ক নিরাপত্তার জন্য এসব অবৈধ যানের চলাচল প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি।
বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। যারা ধরা পড়ছেন, তাদের যান আটকে রাখা ও জরিমানা করাসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ পৌর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে অবৈধ ট্রাক্টর ও টলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।