নিচ তলায় চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাজও প্রায় শেষ। এখন চলছে বৈদ্যুতিক সংযোগের কাজ। ইতোমধ্যে তৃতীয় তলায় কিছু আসবাবপত্রও আনা হয়েছে। বিভিন্ন সেবা কেন্দ্রের ডেক্স তৈরি হচ্ছে। তবে, কিছু জায়গায় এখনো প্লাস্টার ও সিঁড়ির টাইলস বসানোর কাজ বাকি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেসব কাজও শেষ হবে।
দুয়েকদিনের মধ্যেই রাজধানীর আফতাবনগরে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ‘আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পূর্ব’। আফতাবনগর মেইন রোডের (জহুরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ) ৮ নম্বর অ্যাভিনিউ, এফ ব্লক, সেকশন ২-এর ২ নম্বর বাড়ির চারতলা ভবনে কার্যক্রম শুরু হবে। এ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উদ্বোধন হলে ঢাকার ৯টি থানার বাসিন্দারা সরাসরি সেবা নিতে পারবেন। অফিস উদ্বোধন হওয়ার পর প্রতিদিন ৫০০-৬০০ জন পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, ১৫-২০ জন শ্রমিক পাসপোর্ট অফিসে শেষ মুহূর্তের কাজ করছেন। কয়েকজন শ্রমিক সিঁড়িতে টাইলস বসানোর কাজ করছেন। আরেক দল শ্রমিক নিচ তলার অভ্যর্থনা কেন্দ্র তৈরির কাজ করছেন। অন্যান্যরা ভবনের বিভিন্ন তলায় ফ্যান-লাইটসহ বৈদ্যুতিক সংযোগের কাজ করছেন।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কারোরই দম ফেলার ফুরসত নেই। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাজ শেষ করার তাড়া রয়েছে। কাজ ঠিকমতো এগোচ্ছে কি-না তা নিয়মিত তদারকি করছেন পাসপোর্ট অফিসের লোকজন।
বৈদ্যুতিক সংযোগের কাজে ব্যস্ত ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. সুমন বলেন, আগামী ৩ দিনের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ সংক্রান্ত সব কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এসি লাগানোর কাজ শেষ। এখন চলছে সুইচ, লাইট ও ফ্যান লাগানোর কাজ। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই আমাদের কাজ শেষ হবে।
তবে, ভবনের কয়েকটি ফ্লোরের দেওয়ালে প্লাস্টার করা এখনো বাকি রয়েছে। খুব দ্রুত এই কাজ সম্পূর্ণ করা হবে বলে জানা গেছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আফতাবনগরের ভবনটি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিজস্ব নয়। তিন বছর মেয়াদি চুক্তিতে ভবনটি লিজ নেওয়া হয়েছে। লিজ শেষ হয়ে গেলে আবারও চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ মে অফিসটি উদ্বোধন করা হতে পারে। উদ্বোধনের পর মতিঝিল, পল্টন, বাড্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, রামপুরা ও হাতিরঝিলসহ মোট ৯ থানার বাসিন্দারা এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে সেবা নিতে পারবেন।
যা থাকছে নতুন পাসপোর্ট অফিসে
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারতলা বিশিষ্ট এই ভবনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। সেবা গ্রহীতাদের জন্য প্রতিটি ফ্লোরে বিভিন্ন কাউন্টার থাকবে। যাতে তারা সহজে সেবা নিতে পারেন। সেবা গ্রহীতাদের জন্য থাকবে মানসম্পন্ন বসার জায়গা ও সুপেয় পানি ব্যবস্থা। এছাড়াও নারী সেবা গ্রহীতাদের জন্য থাকবে মাতৃদুগ্ধ কর্নার।
অন্যদিকে দালালদের হাতে সেবা গ্রহীতারা যেন হয়রানির শিকার না হোন সে জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উদ্বোধনের পর থেকে অফিসের বাইরে ও ভেতরে পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার ও পুলিশ মোতায়েন করা হবে। যাতে করে দালালরা অফিসের আশপাশে ভিড়তে না পারেন।
উদ্বোধনের বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ইয়াসিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি রাজধানীর মধ্যে অত্যাধুনিক একটি পাসপোর্ট অফিস হতে যাচ্ছে। উদ্বোধনের পর সেবা গ্রহীতারা নিজেরাই এটি বুঝতে পারবেন। আশা করছি প্রতিদিন ৯ থানার ৫০০-৬০০ লোককে সেবা দিতে পারব। অফিস উদ্বোধনের প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে। উদ্বোধনের পর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সেবা গ্রহীতারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আগামী সাত মে অফিস উদ্বোধন হওয়ার কথা। তবে উদ্বোধনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
উচ্ছ্বাসের সঙ্গে রয়েছে শঙ্কাও
আঞ্চলিক এই অফিস উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি নেই। তারা বলছেন, আগারগাঁও কিংবা কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন করতে অনেক ভোগান্তি হতো। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ পর্যন্ত আবেদনপত্র অনেকে জমা না দিতে পেরে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতেন। আফতাবনগরে এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চালু হলে বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী ও আফতাবনগরের বাসিন্দারা খুব সহজে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আফতাবনগরের বাসিন্দা ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক কষ্টে আগারগাঁও গিয়ে ২০১৭ সালে ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করেছিলাম। তখন যে কি কষ্ট হয়েছিল তা শুধু আমিই জানি। সেই কষ্ট ও লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর কথা ভেবে আর নবায়ন করাতে যাইনি। এবার বাড়ির কাছে অফিস উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। চিন্তা করেছি উদ্বোধনের দিন নিজের পাসপোর্টের নবায়ন ও স্ত্রীর নতুন পাসপোর্ট করার আবেদন নিয়ে যাব। দেখি এখানে কেমন সেবা দেয়।
তবে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে রয়েছে শঙ্কাও। অনেকে বলছেন, শুধু নতুন অফিস উদ্বোধন করলেই হবে না; সেবার মানও নিশ্চিত করতে হবে। সেবার মান নিশ্চিত ও দালালমুক্ত পাসপোর্ট অফিস করা না গেলে এই অফিসও জনগণের কাজে আসবে না।
বনশ্রীর বাসিন্দা মো. কাজল বলেন, বাসার কাছে পাসপোর্ট অফিস উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এখন কষ্ট করে আগারগাঁও যেতে হবে না। এখন খুব সহজে বাসার কাছে পাসপোর্টের আবেদন করতে পারব। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসগুলোতে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবার বিপরীতে শুধু ভোগান্তি নিয়ে ঘরে ফেরেন গ্রাহকরা। বেশি টাকা না দিলে আবেদন ফরমই জমা দেওয়া মুশকিল। এই অফিসও যদি তাদের দখলে যায় তবে দিন শেষ আমাদের কোনো লাভ হবে না। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, এসব চক্র যেন নতুন অফিসে সক্রিয় হতে না পারে, আমরা স্বাভাবিক নিয়মে সুন্দরভাবে যেন সেবা নিতে পারি।